প্রতীকী ছবি।
এক মোবাইল সংস্থা থেকে আর একটিতে কল যাওয়ার খরচ কমানোর কথা টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই বলেছে ঠিকই। কিন্তু তাতে গ্রাহকের গাঁটের কড়ি বাঁচার সম্ভাবনা অন্তত এখনই তেমন নেই বলে মনে করছে অধিকাংশ টেলিকম সংস্থা।
তাদের যুক্তি, ইতিমধ্যেই ট্রাইয়ের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করার ইঙ্গিত দিয়েছে কয়েকটি সংস্থা। আর সত্যিই তা হলে অন্তত এখনই ফোনের মাসুল কমার সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। তার উপর সংস্থাগুলি বলছে, এমনিতেই স্পেকট্রামের চড়া দাম মেটাতে গিয়ে বিপুল ধারের বোঝা চেপে রয়েছে তাদের কাঁধে। রয়েছে পরিকাঠামোর খরচও। ফলে মামলা না-হলেও অদূর ভবিষ্যতে নতুন করে বাড়তি বোঝা ঘাড়ে নিয়ে মাসুল কমানো তাদের পক্ষে শক্ত। যদিও কেন্দ্রের মতে, এই চার্জ ছাঁটাই আগামী দিনে প্রশস্ত করবে গ্রাহকের মাসুলের বোঝা হাল্কা করার পথ।
ধরা যাক, ‘ক’ সংস্থা থেকে ফোন যাচ্ছে ‘খ’ সংস্থায়। তখন ‘খ’-এর নেটওয়ার্কে কলটি যাওয়ার জন্য তাকে একটি চার্জ দেয় ‘ক’। একেই বলে ‘ইন্টারকানেকশন ইউসেজ চার্জ’ (আইইউসি)। মঙ্গলবার ট্রাই বলেছে, অক্টোবর থেকে দেশের মধ্যে এই চার্জ মিনিটে ১৪ পয়সার জায়গায় হবে ৬ পয়সা। ২০২০ থেকে তা উঠেই যাবে। এরপরই জোর জল্পনা, তবে কি এর দৌলতে মোবাইলে কথা বলার খরচ কমবে? হাল্কা হবে মাসুলের বোঝা?
বুধবার মোদী সরকারের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, আগামী দিনে মোবাইলে কথা বলায় খরচ আর লাগবেই না। তা গুনতে হবে শুধু নেট বা ডেটা ব্যবহারের জন্য। চার্জ ছাঁটাই এবং পরে তা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপ। কারণ, এতে মাসুল কমবে। উপকৃত হবেন গরিব মানুষ। বিশেষত, যাঁরা শুধু কথা বলতে মোবাইল ব্যবহার করেন।
কিন্তু টেলিকম শিল্পের বড় অংশেরই দাবি, তা হওয়ার নয়। কারণ, ‘ক’ সংস্থায় যেমন ‘খ’-এর গ্রাহকের ফোন আসে, তেমনই ‘ক’-এর গ্রাহকও ফোন করেন ‘খ’-এর নেটওয়ার্কে। তাই আইইউসি থেকে টেলি সংস্থাগুলির ব্যয় যেমন হয়, তেমনই আয়ও আছে। ফলে মাসুল কমানোর সিদ্ধান্তের জন্য নিট হিসেবে আয় বাড়ছে না কমছে, আগে সেটি হিসেব করবে তারা।
ভোডাফোন, এয়ারটেলের মতো পুরনো সংস্থাগুলির দাবি, ওই চার্জ থেকে তাদের ব্যয়ের তুলনায় আয় অনেক বেশি। যা পরিকাঠামোর খরচ সামাল দিতে কাজে লাগে। কিন্তু তা উল্টো জিও-র মতো নতুন কিংবা অন্য ছোট সংস্থার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, ওই চার্জে তাদের ব্যয় ছাপিয়ে যায় আয়কে। পুরনো সংস্থার অভিযোগ, এই কারণেই আইইউসি তুলে দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকে সরব জিও। এখন পুরনো সংস্থাগুলির যুক্তি, আইইউসি ছাঁটাইয়ের কারণে তাদের আয় কমছে। ফলে মাসুল কমানোর প্রশ্ন নেই। আর জিও তো কথা বলায় মাসুলই নেয় না? তাহলে সার্বিক ভাবে তা কমার সম্ভাবনা কোথায়? এই যুক্তির প্রতিধ্বনি টেলি শিল্পের সংগঠন সিওএআই-এর ডিজি রাজন ম্যাথুজের গলাতেও।
চার্জ ছাঁটাইয়ে জিও-র সুবিধা হওয়ার দাবি উড়িয়ে ট্রাইয়ের চেয়ারম্যান আর শর্মার দাবি, সব পক্ষ এবং নতুন প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখেই ওই সিদ্ধান্ত। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও এ দিন বলেন, ‘‘ট্রাই তার মত দিয়েছে। এ বার সংস্থাগুলি তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজবে।’’ আর জিও-র দাবি, এ থেকে তাদের কোনও সুবিধা পাওয়ার নেই। বরং এতে ছোট ও নতুন সংস্থার উপরই বেশি চাপ পড়েবে বলে তাদের দাবি।