ভারত থেকে লগ্নি টানতে দিল্লি, মুম্বই ও চেন্নাইয়ে ‘রোডশো’ করছে মার্কিন সরকার। তালিকায় নেই কলকাতা। কোনও রাখঢাক না-রেখেই মার্কিন প্রতিনিধির দাবি, ব্যবসায়িক সম্ভাবনার হিসেব কষে রোডশোয়ের গন্তব্য ঠিক করা হয়েছে। ওই তিন শহর থেকে লগ্নিকারীদের সাড়ায় উৎসাহী মার্কিন প্রতিনিধিরা নিজেরা হাজির থেকে বিনিয়োগের দিকে আর এক ধাপ এগিয়ে যেতে চান।
সোমবার কলকাতায় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি পল ফ্রস্ট আমেরিকার লগ্নি টানার কর্মসূচি ‘সিলেক্ট ইউএসএ’ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। দিল্লি দূতাবাসের কমার্শিয়াল অফিসার ফ্রস্ট জানান, মার্কিন সরকার এই প্রথম এ ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। শুধু লগ্নি টানা নয়। এর আওতায় সে দেশে নতুন ব্যবসা করার নিয়ম জানানো এবং পুঁজি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যের জোগানও দেওয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে ভারতে ৩ শহরে রোডশো। যা হবে অক্টোবরে।
তালিকায় কলকাতা নেই কেন? ফ্লস্টের জবাব, ‘‘ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি হয়েছে। ওই তিন শহর থেকে বিপুল সাড়া মিলেছে।’’ এ প্রসঙ্গে গত মার্চে ওয়াশিংটন ডি সি শহরে হওয়া লগ্নি সম্মেলনের কথা বলেন তিনি। বিশ্বের সব দেশ থেকে বিনিয়োগ টানতে এর আয়োজন করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফ্রস্ট জানান, এখানে ভারতের শিল্প প্রতিনিধিদল ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম, ৮০ জনের বেশি। আর তাতে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সংস্থা অংশ নিয়েছিল। কলকাতা থেকে ছিল মাত্র দুই। ফলে লগ্নি টানায় কোন শহরের দর কতটা, তা ঠিক করেই এ বার এই বিপণনে নেমেছে আমেরিকা।
ফ্রস্টের দাবি, আমেরিকায় লগ্নিকারী হিসেবে ভারত দ্রুত উঠে আসছে। লগ্নির অঙ্ক ১১০০ কোটি ডলার। বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থা ৪৪ হাজার মার্কিন কর্মী নিয়েছে। ফলে এই ব্যবসার ভাগ নিতে ভারত থেকে লগ্নি পাওয়ার জন্য আমেরিকার সব প্রদেশই আগ্রহী। এ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতাও আছে। অধিকাংশ প্রদেশের শীর্ষ নেতৃত্বই রোডশোয়ে থাকবেন। নিজের প্রদেশের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরতে ভারতীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। নজরে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, বস্ত্র, ওষুধ ও বিমান তৈরির যন্ত্রাংশ শিল্প।
তবে এ রাজ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ফিকে হওয়ায় আগেও মার্কিন কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছিল কলকাতা। ২০০৮ সালে সিঙ্গুর কাণ্ডের জেরে উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফরসূচি থেকে বাদ যায় শহর। সে বার ইউএস ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের উদ্যোগে ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় পা রাখার কথা ছিল বোয়িং, ওয়ালমার্ট ও কারগিলের প্রতিনিধিদের। কিন্তু কাউন্সিলের সদস্যদের বলা হয়, জমি নিয়ে তৈরি হওয়া গোলমালের সময়ে এই সফর কোনও কাজে আসবে না।
এ বারের মার্কিন কর্মসূচিতেও অবশ্য অবাক হচ্ছে না এ রাজ্যের শিল্পমহল। তাঁদের দাবি, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা না-থাকলে খামোখা সময় নষ্ট করতে আসবেন কেন প্রতিনিধিরা।