গত সেপ্টেম্বরেই জার্মান ইস্পাত প্রস্তুতকারক থাইসেনক্রুপের সঙ্গে তাদের ইউরোপীয় ব্যবসা মেশানোর প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল ভারতের টাটা স্টিল। কিন্তু এক মাসের মাথায় সেই সংযুক্তি প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ ঢাকল অনিশ্চয়তার মেঘে। শুক্রবার টাটা স্টিলের নেদারল্যান্ডস শাখার কর্মী পরিষদ জানিয়েছে, একটি যৌথ উদ্যোগ গড়ে তাদের ইউরোপীয় ইস্পাত তৈরির ব্যবসা মেলানোর যে প্রস্তাবে সংস্থা দু’টি সায় দিয়েছে, তার বিরোধিতা করছে তারা। এমনকী প্রয়োজন পড়লে, যে কোনও উপায় তা আটকানোর পথেও হাঁটা হবে।
আচমকা বিরোধিতার জেরে হতবাক সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ ইতিমধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু
করেছেন। তবে ডাচ শাখাটির কর্মীরা বলছেন, সংযুক্তি রোখার এই মরিয়া চেষ্টা আসলে তাঁদের পায়ের তলার জমি সরে যাওয়া আটকানোর মরণপণ লড়াই। কর্মী পরিষদের চেয়ারম্যান ফ্রিটস ভ্যান উইরিঙ্গেন জানিয়েছেন, সংযুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের যে সমঝোতা পত্র সই হয়েছে, তা তিনি পড়েছেন। এর পরেই তাঁর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, ডাচ শাখাটি আসলে গুটিয়েই দিতে চাইছে টাটারা। যার হাত ধরে প্রথমে সংস্থার আইনি রক্ষাকবচ একটু একটু করে সরানো হবে এবং তার পরে ছাঁটা হবে কর্মীদের।
ফ্রিটসের দাবি, ‘‘ওরা প্রায় ১০% চাকরি ছাঁটার কথা বলছেন। তবে আমাদের ধারণা সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হবে।’’ চাহিদায় ভাটা ও উপচে পড়া জোগানের ধাক্কায় ইউরোপ জুড়ে ইস্পাত শিল্প ভুগছে বহু দিন। বেশ কিছু দিন আলোচনার পরে গত সেপ্টেম্বরে পরস্পরের হাত ধরার কথা ঘোষণা করেছিল টাটা ও থাইসেনক্রুপ। তাদের দাবি ছিল, সমস্যা থেকে বেরোতেই সংযুক্তির সিদ্ধান্ত। জানিয়েছিল, যৌথ উদ্যোগ ‘থাইসেনক্রুপ টাটা স্টিল’ তৈরির জন্য মউ সই হয়েছে আমস্টারডামে। নেদারল্যান্ডসের যে শহর হবে তাদের সদর দফতর। যৌথ উদ্যোগে দু’পক্ষের হাতেই থাকবে অর্ধেক করে অংশীদারি। কর্মী দাঁড়াবে প্রায় ৪২ হাজার। যার মধ্যে নেদারল্যান্ডসের ১০ হাজার জন। তবে মোট কর্মীর ৪,০০০ জন পর্যন্ত ছাঁটতে হবে।
ফ্রিটসের অবশ্য দাবি, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির কর্মী পরিষদের হাতে বিশেষ কিছু ক্ষমতা রয়েছে। সংস্থার কর্পোরেট কাঠামো বদলানোর জন্য তাদের সায় লাগে। যে কারণে জার্মান কর্মীরাও এই সংযুক্তির বিরোধিতা করছে বলে জানান তিনি। কর্মী পরিষদ বলেছে, তাদের আশা আগামী বছরে এই সংযুক্তি প্রস্তাব বিশদে জানা যাবে। তবে এই যৌথ উদ্যোগের যে তারা ঘোরতর বিরোধী, তা টাটা স্টিল নেদারল্যান্ডসের পর্ষদকে জানানো হয়েছে।