Book

‘আমার কাছে ইরান’

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৪
Share:

ইরানে

Advertisement

নীলাঞ্জন হাজরা

৪৫০.০০, গুরুচণ্ডা

Advertisement

“মেয়েটি পড়েই চলেছে। একের পর এক। বাকিরা শুনেই চলেছে।... দমকা বাতাসে মোমবাতি যতবার নিভে নিভে যায়, ততবারই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।... আটচল্লিশ বছর আগে প্রয়াত এক কবি। জীবনকালে কোনো পুরস্কারের নাম রটেনি তাঁর। মারা গিয়েছেন মাত্র ১২৭টি কবিতা রেখে। সেদিন যতটা ধিকৃত (ধিক্কৃত) ছিলেন সমাজের হর্তাকর্তাদের মহলে, আজ তার থেকে বেশি বই কম নন। অথচ কী আশ্চর্য! এক অত্যাধুনিক মহাব্যস্ত কোটিখানেক মানুষের শহরের এক জীর্ণ কবরখানায় একদল তরুণী জড়ো হয়েছে তার (তাঁর) গোরে, মোমবাতি আর কবিতার বই হাতে।”— যাঁর কবর, যাঁর কবিতা, তিনিও ছিলেন ওঁদেরই মতো এক তরুণী। তাঁর নাম ফুরুঘ ফারুখজ়াদ (১৯৩৪-৬৭)। নীলাঞ্জন হাজরা তাঁর সওয়াশো পৃষ্ঠার ছিমছাম বইটির শেষ অনুচ্ছেদে অকালপ্রয়াত সেই স্বাধীনচেতা কবি এবং চলচ্চিত্র পরিচালকের সমাধিস্থলের বিবরণ দিয়ে লেখেন, ‘‘এই আমার কাছে ইরান।’’

তিন সপ্তাহ ইরানে ঘুরবেন বলে ২০১৫ সালের নভেম্বরে তেহরানে পৌঁছলেন লেখক। তাঁকে নিতে এসেছেন সৈয়দ, তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। অতিথিকে পেয়েই তিনি তাঁর স্ত্রী তহমিনেহ্কে মোবাইলে জানিয়ে দেন, “হিন্দ-এর মুসাফির এসে গিয়েছে। আমরা শিগগির বাড়ি পৌঁছচ্ছি।”

নিজের মতো পরিকল্পনা আর যোগাযোগ করে ইরানে গিয়েছিলেন লেখক। তেহরান, অসফাহান, শিরাজ়, পার্সেপোলিস-এর সঙ্গে সঙ্গে ত্যাবরিজ়, খোই, ক্যান্দোভ্যান, মশহদ, নিশাবুর... আরও নানা শহরে দু’চোখ ভরে দেখেছেন একটি অনন্য ঐতিহ্যের অগণিত স্বাক্ষর, বুঝতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনচিত্র। আর সেই দেখা ও শোনার ধারাবিবরণীর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নানা কাহিনি, ইতিহাসের কয়েক ছত্র, কবিতার পঙ্ক্তি।

অজস্র বিবরণ আর প্রাসঙ্গিক তথ্যে সমৃদ্ধ, বহু আলোকচিত্রে সজ্জিত বইটি এক নিঃশ্বাসে শেষ করার পরে মনে একটা স্বাদ থেকে যায়। সে স্বাদ সভ্যতার। তার সরলতম এবং মহত্তম প্রকাশ দেশের মানুষগুলোর দৈনন্দিন আচরণে, যার অপূর্ব সব দৃষ্টান্ত রয়েছে এই কাহিনিতে। ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া পশ্চিমি সংস্কৃতি কিংবা সেই আধিপত্যবাদের প্রতিক্রিয়ায় (এবং বিশ্বপুঁজির সাঙাত পশ্চিমি রাষ্ট্রনীতির সুযোগে) কায়েম হওয়া মৌলবাদী শাসন সেই সভ্যতাকে আজও ধ্বংস করতে পারেনি।

ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে দুর্বার গতিতে, বাইরে-ঘরে। তাই মুসাফিরের ইরান-নামায় কান পাতলে শোনা যায় বিপন্ন বিষাদের অনিবার্য দীর্ঘশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন