সুরক্ষার অধিকার

সংক্ষেপে বলিতে হইলে, সিসিপিএ এমনই এক আইনি অস্ত্র, যাহার দ্বারা ক্যালিফর্নিয়ার গ্রাহকেরা স্থির করিতে পারিবেন যে তাঁহারা আদৌ সেই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববাণিজ্যের পণ্য হইয়া উঠিতে চাহেন কি না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ২১:৩১
Share:

ইন্টারনেট, আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে সমাজমাধ্যম আসিবার পূর্বে মানুষ কি তাহার ভাবনার, পছন্দের মূল্য সম্বন্ধে এতখানি অবহিত ছিল? সে কি ভাবিয়াছিল যে সে কোন রেস্তরাঁয় যায়, কোন জুতার ব্র্যান্ড পছন্দ করে— এই আপাত অকিঞ্চিৎকর তথ্যগুলির উপর নির্ভর করিয়া গড়িয়া উঠিবে এক সুবিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য? ভাবে নাই। সে তো আপন খেয়ালে নিজ রুচি, ধারণা, সংস্কৃতিকে গড়িয়া তুলিতে, তাহাকে লালন করিতে মগ্ন ছিল। কিন্তু মানুষ যখন প্রকৃত অর্থে ‘সামাজিক’ হইল, তাহার মত, দৃষ্টিভঙ্গিকে হৃদ্‌মাঝারে না রাখিয়া ‘শেয়ার’ করিতে শিখিল, তখন হইতেই তার ব্যক্তিপরিচয় অপেক্ষা গ্রাহক পরিচয়টি বড় হইয়া উঠিল। এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববাণিজ্যে প্রত্যেক গ্রাহক ও তাঁহার প্রদত্ত তথ্যের মূল্য অপরিসীম। সেই মূল্য এতই অধিক যে বিভিন্ন দেশকে এখন ভাবিতে হইতেছে তাহার নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য, অর্থাৎ ‘ডেটা’কে কী ভাবে আরও সুরক্ষিত করা যায়। এই জানুয়ারি হইতে ক্যালিফর্নিয়ায় বলবৎ হওয়া ‘কনজ়িউমার প্রাইভেসি অ্যাক্ট’ (সিসিপিএ)-এর মূল কথাও ইহাই— ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা।

Advertisement

সংক্ষেপে বলিতে হইলে, সিসিপিএ এমনই এক আইনি অস্ত্র, যাহার দ্বারা ক্যালিফর্নিয়ার গ্রাহকেরা স্থির করিতে পারিবেন যে তাঁহারা আদৌ সেই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববাণিজ্যের পণ্য হইয়া উঠিতে চাহেন কি না। কোম্পানিগুলি গ্রাহকের যে সমস্ত তথ্য নিজ ভাণ্ডারে সংগ্রহ করিতেছে, এই আইনের সাহায্যে সেইগুলি দেখিবার এবং প্রয়োজনে সেই তথ্য মুছিয়া দিবার দাবি জানাইতে পারিবেন গ্রাহকেরা। ব্যক্তিগত তথ্য যদি কোনও তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রি করা হইয়া থাকে, যাহা হামেশাই ‘সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট’রা করিয়া থাকে, তাহা হইলে সেই সংক্রান্ত তথ্য জানিবারও অধিকার থাকিবে গ্রাহকের। অর্থাৎ, এই আইন ব্যক্তিগত তথ্যের উপর বাজারের নহে, গ্রাহকের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবার পথটি প্রশস্ত করিল। গ্রাহক তাঁহার তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখিতে চাহিলে, ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কাহাকেও বিক্রি করিতে না চাহিলে কোম্পানিগুলি তাহা মানিতে বাধ্য হইবে। অন্যথায়, তথ্যসুরক্ষা লঙ্ঘিত হইবার অভিযোগে তাহাদের শাস্তির মুখে পড়িতে হইবে।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এমন আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রাহকের ডেটা-কে মূলধন করিয়া যে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্রমশ জাল বিস্তার করিতেছে বিশ্বব্যাপী, সেইখানে গ্রাহকের স্বার্থটি সর্বাগ্রে সুরক্ষিত করিবার প্রয়োজন। সেই সুরক্ষা সরকার প্রদান করিবে না। বরং সরকারের প্রধান কাজ হইবে গ্রাহককে আইনি সুরক্ষা প্রদান, যাহার সাহায্যে গ্রাহক তথ্য-নিয়ন্ত্রণের অধিকারটি সম্পূর্ণ ভোগ করিতে পারে। ইতিপূর্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর)-এও প্রায় একই কথা বলা হইয়াছে। ভারতও প্রস্তুত করিয়াছে তাহার ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল’। আইনগুলি গ্রাহককে অনিচ্ছাকৃত পণ্য হইবার হাত হইতে কতটুকু বাঁচাইতে পারিবে, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখিতে পারিবে কি না, তাহা তর্কসাপেক্ষ। সময়সাপেক্ষও বটে। কিন্তু আধুনিক সময়ে এই ব্যবসাই যখন ভবিষ্যতের পথ হইয়া উঠিতেছে, তখন গ্রাহক এবং ব্যবসা উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখিবার পদক্ষেপ করা আশু প্রয়োজন। এই আইনগুলি সেই পথপ্রদর্শনের কাজটি করিতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন