ইন্দ্রলুপ্ত ও অন্যান্য

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এই সমীক্ষা বলিতেছে, বায়ুদূষণ হইতে মানুষের মধ্যে আগ্রাসী ব্যবহার জন্মায়। আমেরিকা জুড়িয়া হিংসার প্রাবল্যের ইহাও নাকি একটি কারণ। দেখা গিয়াছে, বায়ুতে দূষিত পদার্থের সামান্য বৃদ্ধি হইলে, সেই দিন সংঘটিত হিংস্র আক্রমণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কম বয়সে ঘন কেশরাশি উবিয়া ইন্দ্রলুপ্ত দেখা দিলে কাহার না মনোবেদনা ঘটে? এই বিষয় লইয়া কন্নড় ভাষায় ছবি হইয়াছিল, খ্যাতিও পাইয়াছিল। তাহাই হিন্দি ভাষায় পুনর্নির্মিত হইয়াছে। মুশকিল হইল, একই সময়ে একই বিষয়ে অন্য একটি হিন্দি ছবিও আত্মপ্রকাশ করিতেছে। দুইটি ছবির পোস্টারেও প্রবল মিল। এমনকি ট্রেলর দুইটিতেও নাকি লক্ষণীয় সাদৃশ্য। ইহা লইয়া দুই প্রযোজক সংস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই গোল বাধিয়াছে। এক দল বলিতেছে, যথাযথ অনুমতি লইয়া মূল ছবিটির আদলে ছবি বানাইয়াছে। অন্য দল বলিতেছে, এই সকল মিল নিতান্ত কাকতালীয়। টাক পড়িয়া যাওয়া লইয়া পুরুষের হৃদয়বেদনা কি কাহারও নিজস্ব সম্পত্তি? কলহের পরিণতি কী হইবে বলা কঠিন, কিন্তু ইহার মধ্যে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফল জানিলে হয়তো দুই ছবিরই চিত্রনাট্যে কিছু বদল ঘটিত। দক্ষিণ কোরীয় প্রসাধন সংস্থার অর্থে পরিচালিত সমীক্ষাটিতে বলা হইতেছে, বায়ুদূষণের ফলেও পুরুষের টাক পড়িয়া যায়। মানুষের মস্তকের উপরিভাগে ধূলি জমিয়া ও গাড়ি হইতে নির্গত পদার্থ জমিয়া নাকি এমন চারিটি প্রোটিন কমাইয়া দেয়, যাহা কেশ বর্ধন ও সংরক্ষণের পক্ষে উপকারী। ফলে নগরে বসবাসকারী ও কারখানার সন্নিকটে বসবাসকারী পুরুষের টাক পড়িবার সম্ভাবনা অধিক। সমীক্ষার ফল সত্য প্রমাণিত হইলে নিশ্চয় পুরুষেরা শহর ছাড়িয়া গ্রামের দিকে ছুটিবেন না, বা কারখানা সমীপস্থ ভদ্রাসন ছাড়িয়া শ্যামল প্রান্তরের নিকটে বাড়ি কিনিবার জোগাড় করিবেন না, কিন্তু কেহ যদি চলচ্ছবির নায়ক হইবার আশা পোষণ করেন বা সম্ভাব্য প্রণয়ীর টাক-বিষয়ক বিরাগের কথা নিত্য মাথায় রাখেন, তাহা হইলে ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’ আর্তনাদ করিতে পারেন। অবশ্যই কেহ নিজ কেশমণ্ডিত মাথাটি দেখাইয়া মৃদুমন্দ হাসিয়া বলিবেন, কেমন করিয়া তিনি আজীবন কারখানায় কাজ করিয়াও টাকবিহীন রহিয়াছেন, আবার কেহ গ্রামলালিত কৃষকের পূর্ণ টেকো মাথাটি দেখাইয়া অট্টহাস্য করিবেন। দূষণহীন অঞ্চলের ইন্দ্রলুপ্তবিশিষ্ট মানুষেরা চিৎকার করিয়া বলিবেন, চোরা দূষণ নিশ্চিত ভাবেই রহিয়াছে, তদন্ত হউক। সব মিলাইয়া, প্রায় ওই ছবি লইয়া যে চুলাচুলি শুরু হইয়াছে, চুলহীনতা লইয়াও তেমনটাই হইতে পারে।

Advertisement

অন্য আর একটি সমীক্ষার ফল দেখিলে, সেই মারামারিটি বেশ হিংস্র হইবে, তাহাও আন্দাজ করা যায়। কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এই সমীক্ষা বলিতেছে, বায়ুদূষণ হইতে মানুষের মধ্যে আগ্রাসী ব্যবহার জন্মায়। আমেরিকা জুড়িয়া হিংসার প্রাবল্যের ইহাও নাকি একটি কারণ। দেখা গিয়াছে, বায়ুতে দূষিত পদার্থের সামান্য বৃদ্ধি হইলে, সেই দিন সংঘটিত হিংস্র আক্রমণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। সমীক্ষকেরা বুঝাইয়াছেন, বায়ুদূষণ আগ্রাসী ব্যবহারকে সামান্য বাড়াইয়া দেয়, ফলে কোনও মতান্তর হয়তো সামান্য বচসার স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকিত, কিন্তু তাহা অধিক হিংস্র নিগ্রহে পর্যবসিত হয়। নিগ্রহ সর্বদা শারীরিকই হইবে তাহার অর্থ নাই, বাচিকও হইতে পারে। আরও আশ্চর্য, ইহার ফলে বাড়িতেছে গার্হস্থ্য হিংসা। বাহিরে লোকগুলি অধিক বায়ু সেবন করিয়া অধিক হিংস্র হইয়া উঠিতেছে না কেন, তাহার উত্তর পাওয়া যায় নাই। শব্দদূষণ যে মানুষের স্বভাবে প্রবল বিরক্তি ও অসহিষ্ণুতা যোগ করে, সহজেই অনুমেয়। শহরের মানুষের পথ চলাকালীন তিতিবিরক্ত মুখশ্রীর একটি কারণ যে সারা ক্ষণ গাড়ির হর্নের আবহসঙ্গীত, যাহা সচেতন ভাবে খেয়াল না করিলেও মানুষকে উত্ত্যক্ত করিতে বাধ্য, তাহা বুঝা সহজ। একটি মানুষের কান ও মন হর্নে ঝালাপালা হইলে, অফিসে ঢুকিয়া সে সামান্য কারণে চিৎকার শুরু করিতেই পারে। ইহাতেও সন্দেহ নাই, বায়ুদূষণের ফলে তাহার ফুসফুসে ক্রমাগত বিষাক্ত পদার্থ প্রবিষ্ট হইলে এবং শ্বাসকষ্ট হইলে, সেই শারীরিক অস্বস্তি হইতেও তাহার ব্যবহারে অসহিষ্ণুতা দেখা যাইতে পারে। হয়তো দিন ক্ষণ মানিয়া সত্যই বায়ুদূষণ হিংস্র ব্যবহারের জন্ম দেয় না, কিন্তু দূষণ ক্রমাগত মানুষের শরীরকে নষ্ট করিতেছে এবং মানুষের মনও তাহার ফলে সুকুমার বৃত্তি হারাইতেছে, এমন একটি তত্ত্ব কষ্টকল্পিত মনে হয় না। হয়তো অচিরেই দূষণকেও সাম্প্রতিক পৃথিবীর উগ্র দক্ষিণপন্থার নির্ণায়ক একটি উপাদান বলিয়া ধরা হইবে এবং সমাজবিজ্ঞান ও পরিবেশবিজ্ঞান একাকার হইয়া সেমিনার জটিলতর হইবে। সেইখানেও হিংস্র বক্তৃতার প্লাবন ডাকিবে। তবে তাহার ফলে ইন্দ্রলুপ্ত বাড়িবে কি না, ইহা স্বতন্ত্র সমীক্ষার বিষয়!

যৎকিঞ্চিৎ

Advertisement

নোবেল কমিটির কাছে আর্জি: বাঙালিকে পুরস্কার দিলে সাংস্কৃতিক জগতের কাউকে দিন। সংস্কৃতিটা আমবাঙালি হদ্দমুদ্দ বোঝে, তক্ষুনি হুড়িয়ে পটাং যুক্তিতক্কো। অর্থনীতি-টিতি পেল্লায় কঠিন বিষয়, মাথামুন্ডু বোঝা যায় না, শেষে বিয়ে-ডিভোর্স নিয়ে আসর জমাতে হয়। সংস্কৃতির কেউ প্রাইজ় পেলে তক্ষুনি অন্য এক জনকে হাজির করা যায়, যাঁর আসলে পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ফন্দিবাজ নয় বলে পেলেন না। সেই ‘বনাম’বাজি ও ‘শহিদ’বাজি পেলে কালীপুজোয় আর বাজি লাগত না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন