মাসের প্রথম দিনেই বন্ধ বহু এটিএম। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।
আশ্বাস ছিল, বরাভয় ছিল, বিশ্বাস জাগানোর চেষ্টা ছিল। মাস-পয়লার আয়োজনে কোনও খামতি কোথাও নেই, হলফ করে বলেছিল সরকার। দেশবাসীও আশ্বাসবাণীতে বিশ্বাস রাখতেই চেয়েছিল। কিন্তু কথা আর কাজের মাঝে অনেকটা ফাঁক রয়ে গেল। দিনের শেষে সেই এক রাশ হতাশা। বেতন মিলল, কিন্তু নগদ মিলল না।
মুদ্রারহিতকরণ উত্তর পরিস্থিতিতে এই মাস-পয়লাই ছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ৫০ দিন সময় চেয়ে নিয়েছেন তিনি গোটা ভারতের কাছ থেকে। দেশবাসীও সহযোগিতার পথেই হেঁটেছেন মূলত এ যাবৎ। কিন্তু তার বিপরীতে অভিভাবক সুলভ সংবেদনশীলতা এবং দায়িত্ববোধটা তো রাষ্ট্রের কাছ থেকে নাগরিকরা প্রত্যাশা করবেনই। ঘরে ঘরে প্রাত্যহিকীটুকু সচল রাখার ন্যূনতম আয়োজনটা তো সরকারকে রাখতেই হবে। রাষ্ট্রও জানে সে দায়িত্বের কথা। তাই সদ্য ফেলে আসা মাসের শেষ তারিখেই রাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়েছিল, সব আয়োজন সারা, নগদের জোগান পর্যাপ্ত, মাসের প্রথম সপ্তাহের জন্য অতিরিক্ত বন্দোবস্ত প্রস্তুত। কিন্তু আয়োজন, বন্দোবস্ত বা প্রস্তুতি যে মোটেই পর্যাপ্ত নয়, দিনভর ব্যাঙ্ক আর এটিএম-এর দরজায় দরজায় দৌড়ঝাঁপের পর তা নাগরিকের কাছে, বিশেষত বেতনভুক শ্রেণির কাছে বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল। এই বেতনভুক শ্রেণিকে দৈনন্দিন উপকরণ এবং পরিষেবা জুগিয়ে আবার জীবন চলে অন্য একটি শ্রেণির। তাঁদের সংসারেও আঁচটা লাগবে আগামী কয়েক দিনে, হাহাকারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে তাঁদের কাছেও।
মুদ্রারহিতকরণের উদ্দেশ্য নিয়ে বা তার অন্তিম ফলাফল নিয়ে মন্তব্য আপাতত দূরে সরিয়েই রাখা যাক। আপাতত ধরে নেওয়া যাক, দেশের ভালর জন্যই এত কিছু। কিন্তু দেশের ভাল সম্ভবত দশের ভালকে বিসর্জন দিয়ে বা নাগরিককে অথৈ জলে ফেলে দিয়ে হয় না। এই সাধারণ সত্যটুকু অভিজ্ঞ রাষ্ট্র বুঝছে না? বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে।
কোনও এক বিরোধী কণ্ঠস্বর সতর্ক করেছিল— মাস-পয়লায় বিপর্যয় আসবে। ধরে নিচ্ছি সে মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। কিন্তু সে রকমটা ধরে নিলেও তো হাহাকারটা ঢাকা পড়ছে না! নগদের আকালে সব থেকেও সর্বহারা হয়ে পড়া এক বিরাট জনগোষ্ঠী এবং তার কিয়ৎ অসহায়, কিয়ৎ দিশাহারা দশাকে তো অস্বীকার করা যাচ্ছে না!
যা কিছু হচ্ছে, ভালর জন্যই হচ্ছে, ভারতবাসীর ভালই হচ্ছে— এমনটা জোর দিয়ে বলার মতো জোর আর পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি অবিলম্বে বদলানো সত্যিই জরুরি। না হলে খুব জোর দিয়ে অন্য কিছু বলতে ইচ্ছা করবে হয়তো ভারতের। সে বক্তব্য কিন্তু নরেন্দ্র মোদীদের প্রত্যাশার ঠিক বিপ্রতীপও হতে পারে।