Coronavirus

জরুরি

ইন্টারনেটকে বিদ্যুৎ পরিষেবার ন্যায় অত্যাবশ্যক হিসাবে গণ্য করা এই মুহূর্তে কর্তব্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:৪৪
Share:

কখনও আরোগ্য সেতু, কখনও স্নেহের পরশ। করোনা-আবহে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নানা অ্যাপ চালু করিয়াছে। কোনওটিতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলিবে, কোনওটির দ্বারা দূর রাজ্যে আটকাইয়া পড়া বাঙালি শ্রমিক অর্থসাহায্য পাইবেন। কিন্তু, অ্যাপ চালাইতে গেলে ইন্টারনেট সংযোগ দরকার হয়, একটি মোবাইল ফোনও লাগে। সাধারণের কাছে, বিশেষত দরিদ্র ও এই ক্রান্তিকালে নিতান্ত সঙ্গতিহীন নাগরিকের এই দুইটি আছে কি না, তাহার খবর লইবে কে? করোনা বুঝাইয়া দিয়াছে, চাল-ডাল-দুধ-ঔষধের ন্যায় ইন্টারনেটও প্রকৃত অর্থে জরুরি পরিষেবা। ইন্টারনেট আছে বলিয়া জনস্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ও নির্দেশিকা দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যাইতেছে, ঘরে বসিয়াই ব্যাঙ্কিং ও অন্যান্য পরিষেবা মিলিতেছে, বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনাও করিতেছে। ভুয়া খবর ও গুজবও ছড়াইতেছে সত্য, কিন্তু ইন্টারনেট ভিন্ন গত্যন্তর নাই। অথচ নিম্নবিত্ত, গ্রামবাসী, কৃষক-শ্রমিকের নিকট এখনও উহা প্রায় অধরা। যাঁহাদের জন্য সরকার অ্যাপ চালু করিতেছে, ইন্টারনেটের অভাবে তাঁহারাই এই পরিষেবা না পাইলে লাভ কী?

Advertisement

ইন্টারনেটকে বিদ্যুৎ পরিষেবার ন্যায় অত্যাবশ্যক হিসাবে গণ্য করা এই মুহূর্তে কর্তব্য। সমগ্র ভারতে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাইয়া দিবার কাজকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উন্নয়নের অচ্ছেদ্য অঙ্গ বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকে। নির্বাচনের পূর্বে ইস্তাহারে বড় রাজনৈতিক দলগুলি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাইবার প্রতিশ্রুতি দেয়, বা ক্ষমতাসীন সরকার প্রভূত ভর্তুকি দিয়া কিংবা বিনা মূল্যেই বিদ্যুৎ দিয়া থাকে। ইন্টারনেটকেও একই চোখে দেখিবার সময় আসিয়াছে। এই পরিষেবার সহিত মোবাইল ফোন নির্মাতা, ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী সংস্থা হইতে শুরু করিয়া একটি বিরাট বাজার জড়িত, এবং ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা এই মুহূর্তে প্রধানত বাজার-পরিচালিত। অতিমারির জরুরি অবস্থায় ইন্টারনেটের অপরিহার্যতা বুঝাইয়া দিয়াছে, ইহাকে আর কেবল বাজারের লাভ-লোকসান দিয়া ভাবিলে চলিবে না। সরকারকে অবিলম্বে নিম্নবিত্ত ও সঙ্গতিহীনের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছাইবার ব্যবস্থা ভাবিতে হইবে। প্রতিটি পরিবারে মোবাইল ও তদুপরি ইন্টারনেট সংযোগ বিপুল খরচের ব্যাপার, আপৎকালীন অবস্থায় আপাতত ভাবা যাইতে পারে প্রতিটি পঞ্চায়েত, ব্লক, ওয়ার্ড স্তরে ‘ইন্টারনেট হাব’-এর কথা। সেখানে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকিবে, অবশ্যই থাকিবেন পরিষেবা সহায়ক কর্মী।

ভবিষ্যতের হাতে ছাড়িয়া না দিয়া এই বন্দোবস্ত এখনই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০১৬ সালে ইন্টারনেটকে মানবাধিকার হিসাবে ঘোষণা করিয়াছে। কেরলের ন্যায় রাজ্য গত বৎসরই রাজ্যের প্রতিটি ঘরে ইন্টারনেট এবং প্রতিটি দরিদ্র পরিবারে বিনামূল্যে ইন্টারনেট দিবার প্রকল্প হাতে লইয়াছে। করোনা চলিয়া যাউক তাহার পর করা যাইবে, অবশিষ্ট ভারত ইহা বলিলে চলিবে না। করোনা এক দিন বিদায় লইবে, কিন্তু বিশ্ব তথা ভারতের সমাজ ও অর্থনীতির বিন্যাসে তাহা যে অভূতপূর্ব বদল আনিবে, তাহার সহিত তাল মিলাইয়া চলিতেও ইন্টারনেটের বিকল্প নাই। আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ এই পরিষেবা পাইলে দেশেরই মঙ্গল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন