Editorial News

পরিণামটা দৃষ্টান্তমূলক হওয়া খুব জরুরি

বিচার বিভাগ কিন্তু আইনসভা নয়। জনতা যা চায়, আইনসভা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে পথে চলতে বাধ্য হয়। কিন্তু আদালতের সে বাধ্যবাধকতা নেই। আদালতের দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র সংবিধানের প্রতি। তাই জনতা কী চায়, তা ভেবে রায় দেয়ার বাধ্যবাধকতা আদালতের নেই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

পৃথিবী জুড়েই বিতর্ক রয়েছে ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র সংজ্ঞা নিয়ে। প্রতীকী ছবি।

রায়ের দার্ঢ্য বহাল রাখল দেশের বিচার বিভাগ। সমগ্র জাতি প্রতীক্ষায় ছিল। নির্ভয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতির মুহূর্ত থেকেই এই প্রতীক্ষার শুরু। এখনও যে অবসান হয়েছে, তা নয়। কিন্তু জাতির প্রতীক্ষা যদি হয় জঘন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য, তা হলে ঘটনাপ্রবাহের গতি এখনও কাঙ্খিত পথেই।

Advertisement

এক বার নয়, তিন বার এ দেশের বিচার বিভাগ জানাল, নির্ভয়ার ধর্ষক তথা বীভৎস খুনিদের জন্য বরাদ্দ সর্বোচ্চ দণ্ড। প্রথমে নিম্ন আদালত এই রায় জানিয়েছিল। পরে সর্বোচ্চ আদালত সে রায় বহাল রাখে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে দাখিল হওয়া পুনর্বিবেচনার আবেদনেও একই রায় হল। জনপরিসরের মতামতটাও এই রায়ের পক্ষেই ছিল।

বিচার বিভাগ কিন্তু আইনসভা নয়। জনতা যা চায়, আইনসভা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে পথে চলতে বাধ্য হয়। কিন্তু আদালতের সে বাধ্যবাধকতা নেই। আদালতের দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র সংবিধানের প্রতি। তাই জনতা কী চায়, তা ভেবে রায় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আদালতের নেই। কিন্তু নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুন যে অতি-বিরল অপরাধ এবং নৃশংসতার জঘন্যতম দৃষ্টান্ত, তা নিয়ে সাধারণ নাগরিক এবং আইনজ্ঞের মধ্যে দ্বিমত থাকার কথা নয়। এই অপরাধীদের যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পাওয়া উচিত, তা নিয়েও মতানৈক্যের অবকাশ নেই।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নির্ভয়া কাণ্ড নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। দিল্লির মসনদে আসীন সরকারের ভিত নড়ে গিয়েছিল। বিক্ষোভের আঁচ রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিল। প্রতিবাদের এ হেন নজিরও কিন্তু খুব সহজলভ্য নয় ইতিহাসের পাতায়। জনমতের চাপে আইনে বদল আনতে হয়েছিল সরকারকে। সব কিছুই জঘন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার লক্ষ্যে।

আরও পড়ুন
লড়াই শেষ হয়নি, দ্রুত ফাঁসি দিলেই শান্তি পাবে নির্ভয়া, বললেন মা

লক্ষ্যনীয় হল, এত কাণ্ডের পরেও অপরাধে রাশ টানা যায়নি। প্রায় রোজ দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ধর্ষণের খবর আসে। সর্বশেষটি ঘটল উন্নাওতে। প্রকাশ্য দিবালোকে এক মহিলাকে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে গেল তিন যুবক, চতুর্থ জন সারাক্ষণ সে শ্লীলতাহানির ভিডিয়ো করতে থাকল। সে বেপরোয়া ভিডিয়ো ছড়িয়েও পড়ল। নির্ভয়ার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অতএব অনুভূত হয় আজ। এমন দৃষ্টান্ত তৈরি হোক, যাতে প্রত্যেক অপরাধী মানসিকতা ত্রস্ত থাকতে বাধ্য হয়— সময়ের দাবিটা এমনই আজ।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কী? কেউ মনে করেন, সর্বোচ্চ দণ্ড অর্থাৎ প্রাণদণ্ডই হল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আবার অন্য একটি অংশ মনে করেন, প্রাণদণ্ডের অবলুপ্তি ঘটা উচিত, শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হয়ে উঠতে পারে অন্য নানা ভাবে। পৃথিবী জুড়েই বিতর্ক রয়েছে ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র সংজ্ঞা নিয়ে। সে বিতর্ক অবশ্য চলতেই থাকবে। কিন্তু তার মাঝেই আপাতত ভারতীয় বিচার বিভাগকে নিশ্চিত করতে হবে যে দৃষ্টান্তমূলক সাজাই পাচ্ছে নির্ভয়ার অপরাধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন