Humanism

আসল জগত্ ভুলে ক্রমে কি এক পরাবাস্তবে বুঁদ হচ্ছি আমরা?

বাহ্যজ্ঞান হারাচ্ছি কি ক্রমশ? কোনও এক পরাবাস্তবে কি খুব বেশি বুঁদ হচ্ছি এবং তার জেরে কি আসল পৃথিবীটা, বাস্তবের মাটিটা, আশপাশের মানুষগুলো গৌণ হতে শুরু করেছে? উপসর্গ তাই বলছে যেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
Share:

বাহ্যজ্ঞান হারাচ্ছি কি ক্রমশ? কোনও এক পরাবাস্তবে কি খুব বেশি বুঁদ হচ্ছি এবং তার জেরে কি আসল পৃথিবীটা, বাস্তবের মাটিটা, আশপাশের মানুষগুলো গৌণ হতে শুরু করেছে? উপসর্গ তাই বলছে যেন।

Advertisement

ইন্টারনেটের হাত ধরেই বদলটার শুরু হয়েছিল। সে বদল আদ্যন্ত ইতিবাচকই ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব সে বদলকে বিপ্লবে পরিণত করল, এক নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন হল যেন। সর্বশেষ সংযোজন ঘরে ঘরে কম্পিউটার-ল্যাপটপ, হাতে হাতে স্মার্টফোন, অত্যন্ত সুলভে ইন্টারনেট। সাম্রাজ্য আর নয়, আস্ত একটা নতুন পৃথিবী, একটা আনকোরা জগৎ। আঙুলের আলতো স্পর্শেই পৌঁছে যাওয়া যায় সে জগতে।

এই নতুন জগতটা আজ ঘোর বাস্তব ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন জাগছে, মাটির বাস্তবতা থেকে এই জগতটা আমাদের কোনও পরাবাস্তবে নিয়ে ফেলছে না তো? তেমনই লক্ষণ ফুটে উঠতে দেখছি যেন। পরাবাস্তবই ধীরে ধীরে যেন মুখ্য আজ। আর মাটির বাস্তবতা ক্রমে ক্রমে যেন ফিকে।

Advertisement

আনকোরা এই দুনিয়াটা যদি সবচেয়ে বড় বাস্তব হয়ে না উঠত আমাদের অনেকের কাছে, তা হলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত এক তরুণ কর্নাটকের কোনও এক সড়কে রক্তের স্রোতে ভাসতে ভাসতে যখন আর্তস্বরে সাহায্য চাইছিলেন, তখন আমরা অনেকেই নিশ্চয়ই মাটির পৃথিবীতে নেমে আসতাম, সবাই মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম। পকেট থেকে স্মার্টফোন বার করে ছবি তোলায় আর ভিডিও রেকর্ডিং-এ ডুবে যেতাম না। তরতাজা প্রাণটাকে রক্তের স্রোতে ডুবতেও দিতাম না।

ঘটনাটা কর্নাটকের। কিন্তু ছবিটা গোটা পৃথিবীর। বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রশ্ন এখন গৌণ আমাদের কাছে। অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতির মধ্যে যে পড়েছি, একটা অন্তত নিজস্বীতে সে প্রমাণ ধরে রাখা খুব জরুরি বরং। পরে ‘লাইক’ গুণতে হবে যে! তা না হলে জ্বলন্ত হোটেলের পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে এক মুখ হাসি নিয়ে নিজস্বী তোলার ভাবনা কারও মাথায় আসতে পারে না। বার বার দুর্ঘটনায় পড়ছি, প্রাণও হারাচ্ছি। তবু ফের তীব্র বেগে ছুটে আসা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছি নিজস্বীর তাড়নায়। লাইকের তাড়নায় নিজের প্রাণই গৌণ, অন্যেরটা আর মুখ্য হয়ে ওঠে কী ভাবে? আজ কর্নাটকে, গতকাল পঞ্জাবে, তার আগে এক দিন দিল্লিতে, অন্য এক দিন অন্য এক দেশে— সর্বত্র একই প্রবণতা, এই স্রোত।

সামাজিক মাধ্যম থেকে তো আরও বেশি সামাজিক হওয়ার শিক্ষা নেওয়া উচিত। সে মাধ্যমের হাত ধরে এমন অসামাজিক হয়ে উঠছি কী ভাবে?

আসলে বাহ্যজ্ঞানই হারাচ্ছি। বাস্তবের মাটিতে শুধু শরীরটা। মানসিক অস্তিত্বের সিংহ ভাগটারই বিচরণ এক কল্প-জগতে।

ঘোর কাটা জরুরি, সম্বিৎ ফেরা জরুরি। না হলে কোনও অভাবনীয় বিপর্যয় আমাদের অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন