Abhishek Banerjee

রূপান্তর এবং অভি-ঘাত, ওহ্ সাত দিন!

ক্ষমতাসীন থেকে বিরোধীতে রূপান্তর। যুবনেতা থেকে নেতায় রূপান্তর। খানিক একান্তে, নিজ পরিবৃত্তে স্বচ্ছন্দ, খানিক দূরবর্তী এবং খানিক নির্লিপ্ত যুবকের ‘আমি তোমাদেরই লোক’-এ রূপান্তর।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০১
Share:

ওই সাতটা দিন নিশ্চয়ই তাঁর মনে থাকবে। দিল্লিতে দু’দিন, তার পর কলকাতায় পাঁচ দিন। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

সোমবার বেশি রাতে টেক্সট মেসেজ পাঠালেন রাজ্যের এক শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিক— এই ধর্না-অবস্থান থেকে তৃণমূল কী পেল? পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কী মনে হয়?

Advertisement

দু’টি শব্দে জবাব দেওয়া গেল— এক্সট্রিমলি ইমপ্যাক্টফুল! জোরালো অভিঘাত!

গত ৫ অক্টোবর থেকে রাজভবনের নর্থ গেটের অদূরে রেডক্রস প্লেসের উপর রাস্তায় মঞ্চ বেঁধে ধর্নায় বসেছিল তৃণমূল। সোমবার, ৯ অক্টোবর সন্ধ্যার কিছু পরে সেই ধর্না প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যপালের সঙ্গে ‘ইতিবাচক’ আলোচনার সাপেক্ষে। এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে।

Advertisement

এর মধ্যে ৮ তারিখ, রবিবার ছাড়া প্রত্যেক দিনই সন্ধ্যার পরে ধর্নামঞ্চের সামনে গিয়েছি। বেশ কয়েক ঘণ্টা থেকেছি। বিভিন্ন পরিচিত রাজনীতিকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বহু দিন পর। পেশাগত সহকর্মীদের অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বহু দিন পর। কিছু খবরাখবর আদানপ্রদান। কিছু শুভেচ্ছা বিনিময়। কিছু কুশল বিনিময়। কিছু মতবিনিময়। কিছু রাজা-উজির নিধন। যেমন হয়ে থাকে।

কিন্তু সে সব নিছকই ‘সাইড শো’। সবচেয়ে বড় কাণ্ডটা ঘটছিল মঞ্চের উপরে। যাকে একটি এবং একটিই শব্দে বর্ণনা করা যায়: রূপান্তর।

রাজভবনের আগে দিল্লির যন্তর মন্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না। পিছনে (বাঁ দিক থেকে) অপরূপা পোদ্দার, ফিরহাদ হাকিম, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

ক্ষমতাসীন থেকে বিরোধীতে রূপান্তর। যুবনেতা থেকে নেতায় রূপান্তর। খানিক একান্তে, নিজ পরিবৃত্তে স্বচ্ছন্দ, খানিক দূরবর্তী এবং খানিক নির্লিপ্ত যুবকের ‘আমি তোমাদের লোক’-এ রূপান্তর। দলের বাইরে তো বটেই, ভিতরেও। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রাপথের দিকে তাঁর হিতৈষী এবং তাঁর বিরোধী— সকলেই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন। অভিষেক নিজে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখলে দিল্লির রাজঘাট থেকে কলকাতার রাজপথে তাঁর সাম্প্রতিকতম আন্দোলনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের মর্যাদা দেবেন বলেই মনে হয়। কারণ, গরিব মানুষের বকেয়া পাওনা আদায়ে এই আন্দোলনে নেমে তিনি রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতিতে ঈপ্সিত অভিঘাতটি তৈরি করতে পেরেছেন। ওই সাতটা দিন নিশ্চয়ই তাঁর মনে থাকবে।

ছিপছিপে চেহারা, চোখে চশমা, পরনে সাধারণ শার্ট-ট্রাউজ়ার্সের বয়স ৩৫ হতে পারে। সে অর্থে তো যুবকই। কিন্তু তাঁকে দেখে এখনও কলেজছাত্র বলে ভ্রম হয়। ধর্নামঞ্চের ভিড়ের একেবারে পিছনে মঞ্চের মেঝেয় কখনও বাবু হয়ে, কখনও এক-পা ভাঁজ করে বসা। কখনও আবার উঠে পিছনে রাখা বেঞ্চে বসছেন। কখনও কোনও বই পড়ছেন। কখনও মোবাইল নিয়ে খুটখুট করছেন। তৃণমূলের বড়-মেজো-সেজো নেতাদের ভিড়ে তিনি প্রায় ঢাকাই পড়ে থাকছিলেন অর্ধেক সময়। কিন্তু পাঁচ দিন পরে সেই দোহারা চেহারার যুবকই মঞ্চাসীন সকলের মাথা ছাড়িয়ে উঠলেন। সোমবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে ফিরে এসে যখন তিনি বলছেন, ‘‘রাজ্যপাল আমাদের ওখানে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আমরা এক ঢোক জলও খাইনি। উনি গরিব মানুষের পাওনা টাকাটা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমরা নিশ্চয়ই পরে গিয়ে চা-মিষ্টি খেয়ে আসব’’, তখন ভিড়ের মধ্য থেকে গর্জন উঠছে। আর যখন তাঁর থেকে বয়সে প্রবীণ নেতারা মঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠে তরুণ তথা যুবক নেতার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছেন, তখন সেই ভিড়ের চোখমুখ আরও চকচক করছে।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’-এর কর্মসূচিতে অভিষেক। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’-এর যে কর্মসূচি অভিষেক নিয়েছিলেন, এত দিনে তিনি তার লভ্যাংশ পেতে শুরু করেছেন। গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার বকেয়া টাকা যে আটকে রাখা হয়েছে, সে কথা অভিষেক প্রথম বলতে শুরু করেছিলেন তাঁর ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিরও আগে উত্তরবঙ্গের একটি সভা থেকে। সম্ভবত গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তার বহিরঙ্গের কারণ, দু’টি। প্রথমত, তৃণমূল যে এখনও ‘গরিব মানুষের দল’ই রয়েছে এবং তারা মানুষের ন্যায্য পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথ থেকে সরে যায়নি, সেই সত্যটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কারণ, গ্রামেগঞ্জে বেলাগাম এবং বেপরোয়া দুর্নীতির ফলে তৃণমূলের কুচো কুচো নেতাদেরও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, অর্জিত এবং চর্চিত রাজনৈতিক ধীশক্তি দিয়ে অভিষেক বুঝতে পেরেছিলেন, পঞ্চায়েত তথা লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি কেন্দ্রবিরোধী আখ্যান তৈরি করাটা জরুরি। এই যদি হয় বহিরঙ্গের কারণ, তা হলে অন্তরঙ্গেরও দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দলের অন্দরে নিজের ‘উত্তরাধিকার’ প্রতিষ্ঠা করা। বয়সোচিত শ্লাঘার কারণে অভিষেককে যাঁরা ‘চ্যাংড়া’, ‘ছোকরা’ ইত্যাদি বলে আড়ালে-আবডালে সম্বোধন করতেন, তাঁদের একটা অংশকে পাশে বসিয়ে তাঁদের থেকে নিজের নেতৃত্ব সম্পর্কে শংসাপত্র আদায় করে নেওয়া (এঁদের মধ্যে কেউ কেউ তো এমনও বলে ফেললেন যে, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার এক এবং একমাত্র নেতা।’’ যা শুনে স্বয়ং অভিষেককেও মুখ নিচু করে হাসি লুকোতে হল)। দ্বিতীয়ত, নিজেকে ‘বিরোধী’ ভূমিকায় রেখে আন্দোলনের ফসল হিসেবে উপস্থাপিত করা।

শাসনক্ষমতায় যাঁরা আসতে পারেন, তাঁদের বিরোধী আন্দোলন থেকে উঠে আসাটা জরুরি বলেই রাজনীতিতে মনে করা হয়। মনে করা হয়, বিরোধী পক্ষে থেকে আন্দোলন না-করলে তিনি ৩৬০ ডিগ্রি রাজনীতিক হতে পারেন না। বিরোধী পক্ষে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁদের শাসক হওয়ার পর প্রয়োজনীয় সাহায্য করে। সেটা তাঁদের আরও খানিকটা এগিয়ে দেয়। তাঁদের দূরদৃষ্টি আরও খানিক প্রসারিত করে। বাংলার রাজনীতিতে যেমন জ্যোতি বসু। যেমন মমতা। যাঁরা নির্ভুল বুঝতে পারেন, জনতা কী চাইছে। অথবা কখন এগোনো উচিত। তার চেয়েও বড় কথা— কখন থামতে হবে।

সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের সময় অভিষেক। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

ঘটনাচক্রে, অভিষেকের এই দিকটায় খানিক খামতি ছিল। কারণ ঘটনাচক্রেই, তিনি যখন সংসদীয় রাজনীতিতে এসেছেন, তখন তাঁর দল পশ্চিমবঙ্গে তিন বছর রাজত্ব করে ফেলেছে। ২০১৪ সালে লোকসভার প্রার্থিতালিকায় ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের পাশে অভিষেকের নাম দেখে যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন এক শীর্ষনেতা। বলেও ফেলেছিলেন, অভিষেক সাংসদ হওয়ার পক্ষে বয়সে তরুণ। রাজনীতিক হিসেবে পরিপক্ব হওয়ার জন্য তাঁর অন্তত আরও পাঁচটা বছর অপেক্ষা করা উচিত। সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। ২০১৪ সালের পরবর্তী ন’বছরে অভিষেক প্রমাণ করেছেন, তিনি কেবলমাত্র উত্তরাধিকারের জোরে দলের ‘সেনাপতি’ হননি। হুড়োতাড়া করেননি। সময় নিয়ে নিজেকে গড়েছেন। পিটেছেন। তার পরে শীর্ষনেত্রীর নির্দেশে সংগঠনের হাল ধরতে নেমেছেন। তৃণমূলের সেই শীর্ষনেতা কালের নিয়মে কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন! ঘনিষ্ঠদের কাছে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘‘ব্লাড ইজ় অলওয়েজ় থিকার দ্যান ওয়াটার।’’ কিন্তু তত ক্ষণে বাস স্টপেজ ছেড়ে গিয়েছে। পিছনে পিছনে খানিক ছুটেওছিলেন। জুত করতে পারেননি।

২০১৪ এবং ২০১৯ সালে ডায়মন্ড হারবার থেকে পর পর দু’বার জিতে সাংসদ হয়েছেন অভিষেক। কিন্তু এই প্রথম তিনি ‘বিরোধী’র ভূমিকায় নামলেন। বিরোধী দলের মতো রাজঘাটে মৌনী অবস্থানে বসলেন। বিরোধী দলের মতো মন্ত্রীর ঘরের সামনে ধর্না-অবস্থানে বসলেন। বিরোধী দলের আন্দোলনকারীদের মতোই তাঁকে এবং তাঁর সতীর্থদের ধর্না থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ (সরকার)। গভীর রাতে থানা থেকে বেরিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, কলকাতার রাজপথে মিছিল করে রাজভবনে যাবেন। (কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে) রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বঞ্চিত মানুষের দাবিদাওয়ার কথা জানাবেন। বলবেন, নতুন করে কাজ না দিক, যাঁরা এতদিন কাজ করেছেন, তাঁদের পাওনা টাকাটা মিটিয়ে দিক কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধী দলের মতো। বিরোধী নেতার সুরে।

সোমবার বঞ্চিতদের চিঠি ঘাড়ে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করতে ঢুকছেন অভিষেক। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

বঞ্চিতের দাবিদাওয়ার কথা জানাবেন বললেন বটে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ জানাতে পারলেনও না। কারণ, রাজ্যপাল রাজভবনে রইলেন না। সম্ভবত অভিষেকের তাতে খানিকটা সুবিধাই হয়ে গেল। কারণ, তিনি রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসে পড়তে পারলেন। রাজ্যপাল কেরল-দিল্লি-শিলিগুড়ি-দিল্লি-দার্জিলিং করতে লাগলেন আর অভিষেক খুব ধীরেসুস্থে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে যেতে লাগলেন (নথিপত্র সমেত)। তার মাঝখানে শহরে এলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী। যিনি দিল্লিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেননি। যাঁর ঘরের সামনে ধর্না থেকে অভিষেকদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল দিল্লি পুলিশের বাহিনী। সেই মন্ত্রী কলকাতায় এলেন এবং বললেন, তৃণমূলের সঙ্গে তিনি বসতে রাজি।

অভিষেক আলোচনায় বসলেন না। স্বাভাবিক। কেউই বসতেন না। কারণ, ততক্ষণে মুহূর্ত রচিত হতে শুরু করেছেন। যাকে বলে ‘ইট মোমেন্ট’! উইকেট পাটা হয়ে এসেছে। বল টার্ন করছে না আর। এখন সামনের পায়ে খেলা যায়।

রাজ্যপাল যখন শেষমেশ তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে দার্জিলিঙে সময় দিলেন, তখনও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না-করে দলের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে পাঠিয়ে দিলেন অভিষেক। যাতে এই ধারণা কোনও মতেই তৈরি না হয় যে, রাজ্যের সাংবিধানিক পদের প্রতি কোনও অসৌজন্য বা অসম্মান দেখানো হচ্ছে। পর দিনই রাতে রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরলেন এবং রাতেই অভিষেকের মঞ্চে খবর গেল— তিনি দেখা করতে তৈরি।

অভিষেক গেলেন না। কারণ, পর দিন তিনি বললেন, রাজ্যপাল যাওয়ার জন্য সময় দিয়েছিলেন মাত্রই ১০ মিনিট। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ফোন করে বলেছিলেন, ১০টার সময় রাজভবনে যেতে। তত ক্ষণে দলের শীর্ষনেতারা ধর্নাস্থল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন (অভিষেক একাই রাতভর রাস্তায় ছিলেন)। অত্যন্ত ধীরেসুস্থে তিনি পর দিন সময় চাইলেন। পরদিন বিকেল ৪টেয় রাজ্যপাল সময় দিলেন। ৩০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে অভিষেক রাজভবনে গেলেন (তার মধ্যে বঞ্চিত পরিবারের সদস্যেরাও ছিলেন। যাঁদের নিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন অভিষেক এবং যাঁরা তাঁর ধর্নামঞ্চেও ছিলেন)। মেরেকেটে ২০ মিনিট কথা বললেন। যে কথোপকথনের মধ্যেই রাজ্যপাল জানালেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এবং সেই রাতেই উড়ে গেলেন দিল্লি।

দিল্লির কৃষিভবনে অবস্থান। পুলিশ তুলে বার করে নিয়ে যাওয়ার আগে (বাঁ দিকে থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, বীরবাহা হাঁসদা, মহুয়া মৈত্র, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।

সোমবার রাতে ধর্নামঞ্চের সামনে এগিয়ে এসে কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অভিষেক যখন বলছেন, ‘‘আমার ইচ্ছে ছিল আরও ২৪ ঘণ্টা ধর্নাটা চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দলের প্রবীণ নেতারা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ধর্না তুলে নিতে। তা-ই আমি ধর্না প্রত্যাহার করছি’’, তখন দলের বাইরের সঙ্গে দলের ভিতরেও তাঁর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। যা বলছে, প্রয়োজনে স্বর উচ্চগ্রামে না-তুলেও অনড় হব। রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাব। আবার তারই পাশাপাশি শ্রদ্ধাসূচক নমনীয়তা (দলনেত্রীর পরামর্শ মেনে নেওয়া) দেখিয়ে ভবিষ্যতে দু’পা এগোনোর জন্য ‘রিট্রিট পয়েন্ট’ বেছে নেওয়ার পরিণতিবোধের পরিচয় দেব।

দিল্লি থেকে কলকাতার রাজপথ— আশা করা যায় এই সাতটা দিন অভিষেককে আরও খানিকটা স্থিতধী, আরও অভিজ্ঞ, আরও ধীমান করবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দফতর থেকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়া, কলকাতার রাজপথে প্রায় বিনিদ্র রজনী যাপন এবং দলের অন্দরে একদা যে নেতারা তাঁর সমালোচনায় মুখর থাকতেন, তাঁদের কার্যত ‘বশ্যতা’ স্বীকার করে নেওয়া— সাত দিন ধরে যা ঘটল, তাকে একটি শব্দেই ধরা যায়— অভিঘাত!

অভিঘাত। অভি-ঘাত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন