নিরাপত্তা?

তবে কি প্রত্যাঘাত অযৌক্তিক? বিপদ বাড়ানো ভিন্ন তাহার কোনও ফল নাই? তেমন কথা বলা চলে না। অংশত ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতোই, ২০১৯ সালের সীমান্ত-অতিক্রমী বিমান হানাও ভারতীয় রণ-নীতিতে এক নূতন মাত্রা যোগ করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
Share:

—ছবি পিটিআই।

পুলওয়ামায় সন্ত্রাসের ‘জবাব’-এ বালাকোটে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হানার পরে নরেন্দ্র মোদী জানাইয়াছেন, ভারত নিরাপদ হাতে রহিয়াছে। নিরাপত্তা কাহাকে বলে? অভিভাবকের হেফাজতে সন্তান নিরাপদে থাকে, কারণ তিনি সন্তানের বিপদ ঘটিতে দেন না। ভারতবাসী কি ভরসা করিতে পারেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর আশ্রয়ে তাঁহাদের বিপদের আশঙ্কা নাই? ভারতের মাটিতে আর সন্ত্রাস ঘটিবে না? ‘উহারা মারিলেই আমরাও ফিরিয়া মারিব’, এই নীতিতে নিরাপত্তার ভরসা মেলে কি? এমন নীতি বরং ঘাত এবং প্রত্যাঘাতের চক্রাকার পরম্পরার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। সীমান্ত-অতিক্রমী বোমাবর্ষণের জবাব ভারত যথাসময়ে পাইবে— ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডির প্রত্যাশিত হুঙ্কার ইতিমধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করিয়া আসিয়াছে। মোদীজি হয়তো বলিবেন, ‘‘জবাব দিয়া দেখুক না, কী প্রতিফল পায়।’’ শুনিয়া উলুখাগড়ার ছাতি ফুলিবে না। দুই পক্ষের বিমান ভূপতিত করিবার তুল্যমূল্য পরিসংখ্যানে নিরাপত্তার বোধ জাগ্রত হয় না।

Advertisement

তবে কি প্রত্যাঘাত অযৌক্তিক? বিপদ বাড়ানো ভিন্ন তাহার কোনও ফল নাই? তেমন কথা বলা চলে না। অংশত ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতোই, ২০১৯ সালের সীমান্ত-অতিক্রমী বিমান হানাও ভারতীয় রণ-নীতিতে এক নূতন মাত্রা যোগ করিয়াছে। যে পদক্ষেপের সম্ভাবনা অনেক দিন জাগ্রত ছিল, শেষ অবধি তাহা করিয়া ফেলিবার মধ্যে নিঃসন্দেহে এক ধরনের ঐতিহাসিকতা নিহিত থাকে। মঙ্গলবার প্রত্যুষের অভিযান কেবল এই অর্থে ঐতিহাসিক নহে যে প্রায় অর্ধ শতক পরে ভারতীয় বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করিল। তাহার গভীরতর তাৎপর্য ইহাই যে, এমন সীমা-লঙ্ঘন অতঃপর আর ‘অ-সম্ভব’ বলিয়া গণ্য হইবে না। মনে রাখিতে হইবে, যুদ্ধকে কূটনীতির অন্য পথও বলা হইয়া থাকে। লক্ষণীয়, অভিযানের সংবাদ ঘোষিত হইবার পরে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চ হইতে, এমনকি বেজিং হইতেও, ভারতের বিশেষ কোনও সমালোচনা শোনা যায় নাই, কেবল বিবদমান দুই রাষ্ট্রের প্রতি সংযম অবলম্বনের বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ প্রচারিত হইয়াছে। এহ বাহ্য, পাকিস্তানের প্রতি স্বভূমিতে সন্ত্রাসী-লালন বন্ধ করিবার সদুপদেশও বর্ষিত হইয়াছে। ইমরান খান বা তাঁহার নিয়ামক ফৌজি কর্তারা উপদেশ শুনিবেন কি না, তাহা অন্য প্রশ্ন। উপমহাদেশে, এশিয়ায় এবং বৃহত্তর দুনিয়ায়— বিভিন্ন স্তরে ভারতীয় কূটনীতি বালাকোট-উত্তর পরিস্থিতিকে কতটা কাজে লাগাইতে পারে তাহাও খুব বড় প্রশ্ন। তবে আপাতত প্রধানমন্ত্রী হয়তো দাবি করিতে পারেন: অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া।

এবং তাঁহার মন প্রতিধ্বনি করিতে পারে: অ্যাডভান্টেজ মোদী। নির্বাচন অদূরে। এই সে দিন অবধি নানা কারণে শাসক দলের নির্বাচনী সম্ভাবনা ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর দেখাইতেছিল। সরকারের বিরুদ্ধে দেশ জুড়িয়া ক্ষোভ উত্তরোত্তর বাড়িতেছিল। একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তাহার প্রতিফলনও ঘটিয়াছিল। রাজনৈতিক ‘আজেন্ডা’ বেশ কিছু কাল ধরিয়াই ক্রমশ বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলিয়া যাইতেছিল। কিন্তু পুলওয়ামা এবং তাহার পরে বালাকোটের ঘটনার অভিঘাতে অন্য সমস্ত বিষয় সহসা দিগন্তে বিলীন। দেশ জুড়িয়া, বিশেষত প্রচারমাধ্যমের বড় অংশ জুড়িয়া কেবল ‘রণং দেহি’। সংশয় সেখানেই। সন্ত্রাস দমনে অবশ্যই সর্বশক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। সন্ত্রাসের সূতিকাগারগুলি যাহাতে ধ্বংস হয়, তাহার জন্য তৎপর হওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস চলিতে পারে না। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসের পরে বিরোধী দলগুলি সেই নীতি মানিয়াই রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াইয়াছে। আশা, সরকার তথা শাসক দলের আচরণেও শুভবুদ্ধির পরিচয় মিলিবে। আশা, নির্বাচনী তাড়নায় তাহারা জাতীয় নিরাপত্তার গুরুতর প্রশ্নটির অপব্যবহার করিবে না। আপাতত, আশামাত্র।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement