Editorial News

দেশে অস্থিরতা তৈরি হলে কিন্তু শত্রুকে জবাব দেওয়া আরও কঠিন হবে

পরিস্থিতিটা এ বার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। অথবা তেমনই উপক্রম হচ্ছে। পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরে যে তীব্র আক্রোশ দেশ জুড়ে অনুভূত হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

পরিস্থিতিটা এ বার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। অথবা তেমনই উপক্রম হচ্ছে। পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরে যে তীব্র আক্রোশ দেশ জুড়ে অনুভূত হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আবেগের বহিঃপ্রকাশ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লে মাৎসন্যায়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়। দেশ জুড়ে সেই নৈরাজ্যেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অবিলম্বে সেই নৈরাজ্যে লাগাম পরানো জরুরি।

Advertisement

যে মাত্রায় আঘাত হেনেছে সন্ত্রাস, তাতে গোটা দেশে আক্রোশ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দেশপ্রমের নামে বা জাতীয়তাবাদের নামে সহনাগরিকদের হেনস্থা করাকে বা কারও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না কিছুতেই। একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। এই উন্মাদনা ইতিবাচক নয়। যে আঘাত আমাদের উপরে এসেছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। কিন্তু সে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয় নয়।

দেশের অধিকাংশ নাগরিক এই মূহুর্তে যে ভাবে ভাবছেন, প্রত্যেক নাগরিক সেই ভাবেই ভাবতে বাধ্য, এমনটা ভাবা উচিত নয়। ভিন্ন মত থাকতেই পারে, ভিন্ন মত পোষনের অধিকারকে অস্বীকার করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু শুধু অস্বীকার করা নয়, ভিন্ন মত দেখলেই সশব্দে তার বিরোধিতা করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশ জুড়ে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে একাধিক বড় বড় কাণ্ড ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পুলওয়ামা হামলার পর থেকে গোটা ভারতে আবেগের স্রোত যে দিকে বইছে, তার বিপরীত ধর্মী বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অন্য কোনও জনপ্রিয় মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন যাঁরা, দেশ জুড়ে তাঁরা আক্রমণের মুখে পড়েছেন। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে। যাঁদের নাগাল সরাসরি পাওয়া যায়নি, ফেসবুকে বা টুইটারে তাঁদের তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে। টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাও এই আক্রমণের শিকার হয়েছেন। পুলওয়ামা হামলার নিন্দা করে যে টুইট তিনি করেছেন, তাতে পাকিস্তানের নাম কেন নেই? এ প্রশ্ন তুলে সানিয়াকে তুমুল ট্রোলের মুখে ফেলা হয়েছে। কোথাও বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে ক্ষিপ্ত জনতা, কোথাও কাউকে দেশদ্রোহী বলে দেগে দিয়ে সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হচ্ছে, কোথাও আরও হিংসাত্মক হয়ে উঠছে জনতা। এই পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন: কেন টুইটে পাকিস্তানের নাম নেই! ট্রোলড সানিয়া মির্জা

অশান্তির আশঙ্কা ক্রমশই বাড়ছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ কোথাও সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি করছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্কবার্তা দিয়েছেন, কোনও প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য নাগরিকদের অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের অন্যতম শীর্ষ পুলিশ কর্তাও।

আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারকে কে ছেড়েছিল? প্রশ্ন তুলে বিতর্কে সিধু

এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। য়ে অস্থিরতা, যে চাঞ্চল্যের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, তাকে প্রশমিত করতে হবে। পুলওয়ামায় হামলা যারা চালালো, তারা কিন্তু ভারতে অস্থিরতাই তৈরি করতে চায়। ভারতকে অস্থির করে তোলা, ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন তৈরি করা— জঙ্গিদের উদ্দেশ্য এটাই। আক্রোশে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন কোনও কাজ আমাদের করা উচিত নয়, যাতে বহিঃশত্রুর উদ্দেশ্যই সাধিত হয়।

শোকের সময় এটা, উপযুক্ত প্রত্যাঘাতের সময়। গোটা দেশ শোকসন্তপ্ত, গোটা দেশ অশ্রু সজল চোখে স্মরণ করছে শহিদদের। গোটা দেশ প্রত্যাঘাতও চাইছে। সেই প্রত্যাঘাতের জন্য শক্তি সংহত করা জরুরি, দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া জরুরি। কিন্তু আমাদের আক্রোশের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশের জেরে দেশের মধ্যেই যদি অস্থিরতা এবং বিভাজন তৈরি হয়, তাহলে বহিঃশত্রুর মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে কথা প্রত্যেককে মাথায় রাখতে হবে, আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন