যোগী আদিত্যনাথ ও নরেন্দ্র মোদী।
যথার্থই বললেন নরেন্দ্র মোদী। কারও পোশাক দেখে তাঁর ব্যক্তিত্ব বিচার করা উচিত নয়। যোগী আদিত্যনাথ গৈরিক পোশাকে অভ্যস্ত বলে তিনি আধুনিক মানসিকতার বিপ্রতীপে অবস্থান করেন, এমন ধারণা ঠিক নয়, মত প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি আধুনিক মানসিকতার নন, এমন ধারণাকে যোগী নিজেও কিছুটা অপ্রমাণই করলেন। নিছক কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে উত্তরপ্রদেশের একাধিক মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে নিজেদের কার্যকালে ‘অপয়মন্ত’ নয়ডাকে এড়িয়ে চলেছেন, যোগী আদিত্যনাথ সে পরম্পরায় ছেদ টানলেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ সদর্থক। তার প্রেক্ষিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে শংসাবাক্য বর্ষণ করলেন, তাও ইতিবাচক। কিন্তু কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যোগী আদিত্যনাথের এই সক্রিয়তা এবং সে সক্রিয়তায় নরেন্দ্র মোদীর সন্তোষ প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। আরও অনেক কুসংস্কার বা অনর্থক সংস্কারের নিগড়ে এ দেশ এবং এ সমাজ আজও হাঁসফাঁস করে। সে সব শৃঙ্খল ছিন্ন করার জন্যও এ বার মোদী বা যোগীর সক্রিয়তা দেখা যাবে বলে আশা জাগে। কুসংস্কার বা অনর্থক সংস্কারকে রাজনৈতিক স্বার্থে আর ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না বলেও আশা জাগে।
কোনও শহর বা জনপদ কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারীর জন্য বা যে কোনও ব্যক্তির জন্য অপয়া হতে পারে, এমন সংস্কার বা ধারণা আদ্যন্ত ভিত্তিহীন। সেই ভিত্তিহীন ভীতির বশবর্তী হয়েই নাকি নয়ডাকে এড়িয়ে চলেছেন উত্তরপ্রদেশের একাধিক মুখ্যমন্ত্রী। যোগী আদিত্যনাথ সেই কুসংস্কারে ধাক্কা দিতে চেয়েছেন। তিনি নিঃসঙ্কোচে নয়ডা সফর করেছেন। সাধু পদক্ষেপ, সদর্থক বার্তা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কিন্তু এই সদর্থক মানসিকতা তো আরও অনেকগুলি ক্ষেত্রেই যোগী আদিত্যনাথ বা নরেন্দ্র মোদীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত। মুসলিম পুরুষের সঙ্গে হিন্দু নারীর বিবাহ কোনও স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এমন বিবাহ মাত্রেই ‘লাভ জিহাদ’— এও তো বড়ই ভিত্তিহীন সংস্কার। গরুকে মাতৃরূপে পুজো করতে যে সম্প্রদায় অভ্যস্ত নয়, সেই সম্প্রদায়ের কেউ রাস্তা দিয়ে গরুকে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলেও স্পষ্ট বোঝা যায় যে গো-হত্যা হতে চলেছে— এও তো বড়ই ভিত্তিহীন ধারণা। এ সবের বিরুদ্ধেও তো সক্রিয় হওয়াটা জরুরি।
আরও পড়ুন: অন্ধবিশ্বাস উড়িয়ে ‘অপয়া’ নয়ডায় যোগী, দরাজ প্রশংসায় মোদী
আবার বলছি, নয়ডা সংক্রান্ত কুখ্যাত কুসংস্কারকে অগ্রাহ্য করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রশংসা করে কুসংস্কার বিরোধী মানসিকতাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। কিন্তু এই ইতিবাচকতায় কোনও দ্বিচারিতা থাকা উচিত নয়।
সমাজ ক্রমশ নিজেকে কুসংস্কার মুক্ত করবে, চেতনার যাবতীয় অন্ধকার ক্রমশ ফিকে হয়ে আসবে, এমনটাই কাম্য। মুক্তির সেই আহ্বানটা সামাজিক পরিসর থেকেই সর্বাগ্রে আসা উচিত। কিন্তু রাজনীতিও আমাদের সমাজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে সম্পৃক্ত। তাই রাজনৈতিক পরিসর থেকেও উদ্যোগটা উঠে আসতেই পারে। ঠিক যেমনটা ঘটল নয়ডা সংক্রান্ত কুসংস্কারের ক্ষেত্রে।
বিভিন্ন কুসংস্কার বা অনর্থক সংস্কারের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরাই বার বার সক্রিয় হবেন, এমনটা আশা করা হয়ত কঠিন। কিন্তু নিছক ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে নানা কুসংস্কার বা অনর্থক সংস্কারকে রাজনীতিকরা ব্যবহার করবেন না, তেমনটা তো আশা করা যেতেই পারে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথ ধরে সেটুকু অন্তত নিশ্চিত করা হোক। তা হলেই অনেকটা এগিয়ে যেতে পারব আমরা। সংশয় নেই।