উত্তমের গান যাঁদের
উত্তমকুমারের লিপে ‘মর্যাদা’ ছবিতে তাঁর প্লেব্যাক কার্যত ইতিহাস। কারণ, উত্তমকুমারের প্রথম প্লেব্যাক গায়ক তিনিই। সংগীত শিল্পী তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় (‘পরচুলা পরে গান রেকর্ড’, রবিবাসরীয়, ৩০-৭)- এর সম্বন্ধে এই তথ্যের সূত্র ধরে, উত্তমকুমারের লিপে যাঁরা প্লেব্যাক করেছিলেন, সে বিষয়ে কিছু তথ্য জানাতে ইচ্ছা হল।
উত্তমকুমারের লিপে সর্বপ্রথম গান শোনা যায় ১৯৫০ সালে ‘মর্যাদা’ ছবিতে। গেয়েছিলেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুঃখের বিষয়, সেই প্রথম গানটি বা গানের প্রথম কথাগুলি খুঁজে পাইনি। ছবিতে সুরারোপ করেছিলেন রামচন্দ্র পাল ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। গীতিকার হিসেবে ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যামল গুপ্ত।
উত্তমকুমারের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সর্বপ্রথম গেয়েছিলেন ১৯৫১ সালে ‘সহযাত্রী’ ছবিতে। রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘ভালবাসার পরশমণি কোথায় তারে’, ‘সঘন গগনে ঘটা উড়ায় কি’, ‘ফুল হাসে আর চেয়ে দেখি’ প্রভৃতি গানেই ‘উত্তম-হেমন্ত’ জুটির প্রথম আবির্ভাব। গানগুলি লিখেছিলেন শৈলেন রায়। শ্যামল মিত্র, রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ১৯৫৬ সালে ‘সাগরিকা’ ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে সর্বপ্রথম গেয়েছিলেন ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। ১৯৫৬ সালে নচিকেতা ঘোষের সুরে ‘নবজন্ম’ ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য গেয়েছিলেন ‘আমি আঙ্গুল কাটিয়া কলম বানাই’ গানটি। এই গানটি এঁদের একমাত্র গান। ভূপেন হাজারিকা ‘সাগরসঙ্গমে সাঁতার কেটেছি কত’— এই একটি মাত্র গান গেয়েছিলেন উত্তমকুমারের লিপে ‘জীবনতৃষ্ণা’ ছবিতে। মান্না দে উত্তমকুমারের লিপে সর্বপ্রথম গেয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে। সুধীন দাশগুপ্তের সুরে গানটি হল ‘লাগ লাগ ভেল্কির খেলা’। প্যারডি গানের বিশিষ্ট শিল্পী মিন্টু দাশগুপ্তের গাওয়া ‘এ বার কালী তোমায় খাবো’ গানে গলা মিলিয়েছিলেন উত্তমকুমার ১৯৬১ সালে ‘সপ্তপদী’ ছবিতে। শিল্পী স্বয়ং এই গানের দৃশ্যে অভিনয়ও করেছিলেন।
‘উত্তম-কিশোর’ জুটির সূত্রপাত ১৯৬৯ সালে ‘সবরমতী’ ছবিতে। গোপেন মল্লিকের সুরে এই ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে কিশোরকুমার গেয়েছিলেন ‘তাক ধিন ধিন তা নেই কোনও চিন্তা’ গানটি। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ১৯৭৩ সালে ‘সোনার খাঁচা’ ছবির ‘ওরে আমার মন কিসের তরে’— এই একটিমাত্র গান গেয়েছিলেন উত্তমকুমারের লিপে। ছবিটিতে সুরারোপ করেন বীরেশ্বর সরকার। মহম্মদ রফি ১৯৬৭ সালে ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবিতে সর্বপ্রথম উত্তমকুমারের লিপে গান গেয়েছিলেন। শংকর-জয়কিষেণের সুরে গানগুলি হল ‘তুঝে দেখা তুঝে চাহা’, ‘অ্যায় চান্দ কি জেবাই তু’, ‘ছোটি সি মুলাকাত প্যায়ার বন গয়ি’, ‘না মুখরা মোর কে যাও’ প্রভৃতি।
কোন ছবিতে উত্তমকুমার প্রথম গান গেয়েছিলেন, জানা নেই। ছবিতে উত্তমকুমারকে গাইতে দেখা গেছে, এমন কিছু গান— ১) নচিকেতা ঘোষের সুরে ১৯৫৬ সালে ‘নবজন্ম’ ছবির ‘কানু কহে রাই কহিতে ডরাই’। ২) ১৯৫৭ সালে ‘পৃথিবী আমারে চায়’ ছবিতে ‘পৃথিবী আমারে চায়...’ গানটির দু’লাইন। এই গানটির প্রকৃত শিল্পী হলেন সত্য চৌধুরি। ৩) হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ১৯৬০ সালে ‘কুহক’ ছবিতে নাতিদীর্ঘ চার লাইনে ‘ঠগ বাছতে হয় গাঁ উজোড়...’। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস কলকাতা- ১০৫
ক্ষতি চিনেরই
চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (সিপিইসি) আকসাই চিনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ভারতের অশান্তির কথা লিখেছেন সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী (‘স্বার্থ আছে, তাই...’, ২৭-৭)। করিডরটি কিন্তু আকসাই চিনের পশ্চিমে কাকশার থেকে জিনজিয়াং (চিনের) প্রদেশে পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে খুনজেরাব-গিলগিট-বালটিস্তান-রাইকোট হয়ে পাকিস্তানের বালুচিস্তান হয়ে সিন্ধের গ্বদর বন্দর পর্যন্ত যাচ্ছে। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে গিলগিটের উত্তরে ও বালটিস্তানের কিছু অংশ পাকিস্তান চিনকে দিয়ে দেওয়ায় এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে ওই করিডরের রাস্তা তৈরি হওয়ায় ভারত আপত্তি জানিয়েছে। কারণ, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারত নিজের অঙ্গ হিসেবেই মানে। এই করিডরের জন্য চিন প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার আগামী দশ বছরে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই করিডর চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তা ছাড়া ডোকলাম (ভুটান) সীমান্ত নিয়ে চিনের ধমকানো রণনীতি, চৈনিক সমর বিশেষজ্ঞ, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে, সুন থু’র দি আর্ট অব ওয়ার-এর নীতি অনুযায়ী প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার মূলনীতি, মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে উদ্দেশ্য সাধন। চিন তার প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ভারত ও ভুটান ছাড়া সবার সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত সমস্যা ছলে-বলে-কৌশলে মিটিয়েছে। ছোট দেশগুলিকে ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে এবং বড় দেশগুলির ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করে অকৃতকার্য হয়ে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়েছে।
ভারত এখন সে রকম সামরিক চাপ অগ্রাহ্য করতে পারে। ১৯৬২’র পরে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় চিনের দেওয়া ৭২ ঘণ্টার নোটিস (সিকিম ছেড়ে দেওয়ার জন্য) ভারত অগ্রাহ্য করেছিল প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নেতৃত্বে। ১৯৬৭ সালে চিন আচমকা নাথু লা পাস (সিকিম) দখল করে নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ভারতের ইনফ্যান্ট্রি ও আর্টিলারি বাহিনীর পালটা আক্রমণে ভারত পুনর্দখল করে। চিন ভালই জানে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা সামরিক সংঘর্ষের মাধ্যমে সমাধান করতে গেলে, সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিটা তারই হবে।
কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস কলকাতা-১৫৬
কিছু ত্রুটি
অসিতাভ দাশের চিঠিতে (‘রাসবিহারী বসু’, ২৫-৭) কিছু তথ্যগত ত্রুটি আছে। ১) ১৯০৬ সালে কলকাতায় নিখিল বঙ্গীয় সম্মেলনে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের যোগদানের সময় তিনি এক সাধারণ কর্মী ছিলেন। যত দিন অরবিন্দ বাংলার বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তত দিন যতীন্দ্রনাথের পক্ষে ‘কলকাতার প্রধান বিপ্লবী কেন্দ্রগুলি’র নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯১০-এর পরে তিনি ধীরে ধীরে নেতৃত্বের আসনে বসেন। ২) ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর বসন্তর ছোড়া বোমায় লাটসাহেব হার্ডিঞ্জ প্রাণে বাঁচলেও সাংঘাতিক আহত হন এবং তাঁর এক দেহরক্ষী মারা যান। ৩) সিলেটের মৌলভীবাজারের মহকুমা শাসক গর্ডন অত্যাচারী হিসাবে কুখ্যাত ছিলেন। তাঁকে হত্যার জন্য অনুশীলন সমিতির উদ্যোগে যোগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নামে এক বিপ্লবীকে পাঠানো হয়। কিন্তু গর্ডনকে মারতে গিয়ে তিনি নিজেই অতর্কিত বোমা বিস্ফোরণে মারা যান। ব্রিটিশ সরকার গর্ডনের নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে লাহৌরে বদলি করে। তাঁকে মারতেই রাসবিহারীর উদ্যোগে বসন্তকে নামানো হয়েছিল, ‘কোনও ইউরোপিয়ানকে হত্যার উদ্দেশ্যে’ নয়। ৪) ১১ মে ১৯১৫ বসন্ত বিশ্বাসের অম্বালা জেলে ফাঁসি হয়। কিন্তু আমিরচাঁদ, বালমুকুন্দ ও অবোধবিহারীর ফাঁসি হয় ৮ মে ১৯১৫ দিল্লি সেন্ট্রাল জেলে। ৫) ১৩৩১ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার প্রবর্ত্তক পত্রিকায় ‘রাসবিহারীর আত্মকথা’ যখন প্রকাশিত হয়, তখন তার সম্পাদক ছিলেন মণীন্দ্রনাথ নায়েক, মতিলাল রায় নন।
প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গোস্বামীঘাট, চন্দননগর
ভ্রম সংশোধন
‘তালতলায় বাড়ি ভেঙে মৃত দুই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (২৬-৭) হানসা সাউ-কে শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের ছাত্রী বলা হয়েছে। তথ্যটি ভুল। তিনি ওই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন না। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়