রবীন্দ্রনাথ, নতুন করে
রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে পিয়ানো? রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রভাব? শুনলেই বাঁধাধরা কয়েকটা গান মনে করে ফেলি আমরা: পুরানো সেই দিনের কথা, কত বার ভেবেছিনু, ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, এই সব। কিন্তু ‘প্রভাব’ কথাটার মানে শুধু একই সুরে ভিন্ ভাষার কথা বসিয়ে দেওয়া নয়, অন্য রকমও হতে পারে, সুরের চলনের বা সংগীত গঠনের ছায়া, সে সবও এক এক রকমের প্রভাব। অথচ আমরা আজ পর্যন্ত জানতাম না, আমাদের অত্যন্ত চেনাশোনা কত রবীন্দ্রসংগীতের সুরে বা গঠনে পাশ্চাত্য সংগীত-রচয়িতাদের সিম্ফনি বা অপেরার ছায়া পড়েছে, কত গানে সিম্ফনির চলন লুকিয়ে আছে! আমরা কি জানতাম, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’-র মধ্যে আছে পশ্চিমি তিন মাত্রার তালের ওয়ালৎজ? কিংবা ‘গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে’র মধ্যে আছে বিঠোফেনের মুনলাইট সোনাটা-র সুরের চলনের সাদৃশ্য? কিংবা ‘বঁধু মিছে রাগ কোরো না’র মধ্যে লুকিয়ে আছে বিঠোফেনের সিক্সথ সিম্ফনি? ‘বুঝি এল বুঝি এল ওরে প্রাণ’ গানটি যে নিজেই সিম্ফনির স্ট্রাকচারে বাঁধা?
জানা-শোনার এই বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হল সম্প্রতি কলকাতার একটি প্রেক্ষাগৃহে। এক অনুষ্ঠানে ‘মিউজিক মাইন্ড’ নামের পরিবেশনায় সৌমিত্র সেনগুপ্ত বাজালেন পিয়ানো, আর প্রবুদ্ধ রাহা গাইলেন গান। আক্ষরিক অর্থেই অ-সাধারণ তাঁদের দ্বৈত পরিবেশনার সিডি-টিও বার হল সে দিন, আর অনুষ্ঠানটিতে বসে শ্রোতারা নিমেষে ঢুকে গেলেন এক অজানা জগতে। মঞ্চে তাঁদের কথোপকথন চলছিল পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকেই, তার মধ্য দিয়ে আরও পরিষ্কার হয়ে উঠল দুই ভুবনের গানের যোগাযোগ। শ্রোতা-আসনে ছিলেন রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ শঙ্খ ঘোষ। তিনিও পরে বললেন, এই সংগীত সংযোগগুলি ঠিক এ ভাবে জানা ছিল না তাঁর!
দুই সংগীতজ্ঞ আর একটা কথাও সে দিন ধরিয়ে দিলেন। আধুনিকতার উত্তরাধিকার যে কত ভাবেই ধরা আছে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে! প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বেড়া ভেঙে ফেলে রবীন্দ্রসংগীতই ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক সংগীত ঘরানা! বিশ্বকবি অভিধাটা তবে সত্যিই যথার্থ।
বর্ণা দাশগুপ্ত,
কলকাতা-১০৬
শিক্ষক শিক্ষণ
শিক্ষক শিক্ষণ বা বিএড/ডিএলএড কলেজগুলি হল শিক্ষক গড়ার কারখানা। শিক্ষকদের যুগোপযোগী ও পেশাদার প্রশিক্ষণে এদের ভূমিকা অপরিহার্য। সারা দেশে শিক্ষক শিক্ষণ কলেজসমূহের নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই (ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন)। বিএড/ডিএলএড কলেজের পরিকাঠামো,অধ্যাপক নিয়োগের মাপকাঠি, ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত নিয়মাবলি, প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম— সব ক্ষেত্রেই এনসিটিই-র সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে।
উপযুক্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তুলতে এনসিটিই-র এই গাইডলাইনের মধ্যে দুটি বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
১) মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদনের প্রাথমিক শর্ত, কলেজের নিজস্ব ন্যূনতম পাঁচশো বেডের হাসপাতাল থাকা, যা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষায় ব্যবহৃত হবে। অথচ, বিএড বা ডিএলএড কলেজের নিজস্ব বিদ্যালয় থাকার কোনও শর্ত এতে নেই। ইন্টার্নশিপ সময়কালের জন্য কলেজগুলি এলাকার স্কুলগুলির শরণাপন্ন হয়। কোনও কোনও বেসরকারি কলেজের ইন্টার্নশিপ চলে নাম কা ওয়াস্তে।
২) বিএড বা ডিএলএড কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বা লেকচারার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার আবশ্যকতা এতে নেই। যিনি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে অধ্যাপনা করবেন, তিনি কখনও স্কুল শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি— এ কেমন নিয়ম!
তাই, এনসিটিই-র নিকট সবিনয় প্রস্তাব জানাই:
১) বিএড কলেজের ক্ষেত্রে নিজস্ব মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও ডিএলএড কলেজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক স্কুল থাকার বিষয়টি অনুমোদনের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে রাখা হোক।
২) বিএড কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বা লেকচারার নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে অন্তত পাঁচ বৎসরের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ডিএলএড কলেজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিকে ওই একই সময়কাল শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে আবশ্যক করা দরকার। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মরত শিক্ষকদের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে পঞ্চাশ পর্যন্ত করলে অভিজ্ঞ লেকচারার পেতে সুবিধা হবে। শিক্ষার উৎকর্ষও নিঃসন্দেহে বাড়বে।
সাবির চাঁদ, শিক্ষক,
রামপাড়া মাঙ্গনপাড়া হাইস্কুল(উ.মা), মুর্শিদাবাদ
কান্নার শিক্ষা
সম্পাদকীয়তে ঠিকই লেখা হয়েছে (‘তাড়নার শিক্ষা’, ২২-৮), ‘... শিশুকে বিদ্যা বা সদাচার শিখাইবার প্রয়োজনে তাড়নার প্রথা নূতন নহে’। কেন এই মার? সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, ‘... শিশুটি এই বোধহয় ভাল বিদ্যালয়ে সুযোগ পাইল না, এই বোধহয় সাফল্য ও সাচ্ছল্য তাঁহাদের মুষ্টি গলিয়া বাহির হইয়া গেল’, এই আশঙ্কা থেকেই অভিভাবকরা এমন মারমুখী হয়ে ওঠেন।
বাবা-মায়ের এই উদ্বেগ মোটেই অমূলক নয়, বরং ঘোর বাস্তব। শিক্ষার সার কথাই তো চাকরি। শিক্ষার হেরফের (১৮৯২) প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আমরা যে-শিক্ষায় আজন্মকাল যাপন করি, সে-শিক্ষা কেবল যে আমাদিগকে কেরানিগিরি অথবা কোনো একটা ব্যবসায়ের উপযোগী করে মাত্র...’ ইংরেজ আমল থেকেই তো শিক্ষা ও উপার্জন সমার্থক। (এর থেকে প্রাক্-ইংরেজ যুগ অথবা প্রাচীন ভারতের শিক্ষা যথার্থ ছিল, এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা হঠকারিতার শামিল হবে)। স্বাধীন ভারত মূলগত ভাবে সেই ঔপনিবেশিক শিক্ষাই আত্মস্থ করেছে। সরকারি চাকর তৈরিই আজও শিক্ষার মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্র ও অভিভাবকরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যেই শিক্ষার জন্য ব্যয় করে থাকেন। শিক্ষা একটা দীর্ঘমেয়াদি আমানত। সেই আমানতের বাজারমূল্য কমে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখলেই তাঁরা ক্ষিপ্ত হন। মারধর তো এরই অঙ্গ।
শিক্ষার হেরফেরই-এই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সাথে আনন্দ নাই’। বেশ। তো কী সেই সানন্দ-শিক্ষা? রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বপ্নের শান্তিনিকেতনে কি সেই আনন্দের বীজই পুঁতে গেছেন? তা-ই যদি, তবে আজও শিশু নিরানন্দে কেন? কী সেই ‘যথার্থ শিক্ষা’?
এ প্রসঙ্গে বহু বিদগ্ধ পণ্ডিত তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। কারও মতে, বিজ্ঞান গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া আধুনিক শিক্ষার প্রসার সম্ভব নয়। কারও মতে, দর্শন ও সাহিত্যই প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপ। আবার কারও মতে, অধ্যাত্মবাদ ছাড়া বাকি সব শিক্ষাই অন্তঃসারশূন্য। লক্ষণীয়, এই সমস্ত মতবাদের সব ক’টাই, বড়দের মতো করে শিশুকে বড় করার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে কোনও শিশুকে পড়া ও খেলার (বা কার্টুন দেখার) মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হলে, অথবা পরীক্ষা দেওয়া ও না-দেওয়ার মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নিতে বলা হলে, তারা কোনটা পছন্দ করবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ২০০৯ সালে তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার পরীক্ষায় পাশ-ফেল প্রথা তুলে দিয়ে সিসিই বা ধারাবাহিক মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিলেন। এই প্রথা রদ করা নিয়ে সবচেয়ে সরব হন বড়রাই।
এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষা হল রাষ্ট্র-সেবার সূতিকাগার। যার অর্থ, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বহাল থাকা এবং লক্ষ লক্ষ শিশুর কান্নার মধ্যে এক জনের কান্নার ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়া।
সহস্রলোচন শর্মা,
ই-মেল মারফত
বিদ্যুৎ-বিভ্রাট
রায়গঞ্জ পুরসভা-সহ কর্ণজোড়া ডি এম অফিস এলাকায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দৈনন্দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার ছাত্রছাত্রী, অসুস্থ ব্যক্তি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও কর্মজীবীরা। উৎসবের দিনগুলিতেও ছাড় মেলে না। রায়গঞ্জের মতো জেলা সদরেও যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে গ্রামাঞ্চলের কী অবস্থা?
হরিমোহন মণ্ডল,
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়