Letters To The Editor

সম্পাদক সমীপেষু: স্বপ্নভঙ্গ কেন

রাজনীতি চিরদিনই নানা সম্ভাবনার শিল্প।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০০:০৩
Share:

প্রেমাংশু চৌধুরী অরবিন্দ কেজরীবালকে ‘স্বপ্নভঙ্গের সওদাগর’ (১৬-৪) বলে ভেবেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, ‘‘রাজনীতিতে এসে কেজরীবাল দেশের রাজনীতি বদলে দেবেন আশা ছিল। আসলে রাজনীতি কেজরীবালকেই বদলে দিয়েছে।’’

Advertisement

হতেই পারে। রাজনীতি চিরদিনই নানা সম্ভাবনার শিল্প। আবার, এও হতে পারে, ভারতীয় রাজনীতিতে এখন যে ‘শনির দশা’ চলেছে, যেখানে দেশ চালাচ্ছে এমন একটি দল, যারা বিশ্বাস করে গোমূত্রপানে সব রোগশোক কেটে যায় এবং সেটা সভা ডেকে জানাতেও দ্বিধা করে না— কেজরীবালের এই জয় সেই অসীম অন্ধকারে একটি আলোকরেখা।

প্রেমাংশুবাবুর মোহভঙ্গের একটি কারণ, কেজরীবাল হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন, যাকে বলা যায় হিন্দুত্ববাদের কাছে আত্মসমর্পণ। আমরা কিন্তু জানি, অণ্ণা হজারে যাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত, সেই মহাত্মা গাঁধী কোনও দিনই তাঁর ধর্মীয় সত্তাকে গোপন রাখেননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে কেউ হিন্দুত্ববাদী বলেননি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাও কখনও কমেনি। অণ্ণা হজারের শিষ্য কেজরীবালও এ বিষয়ে কখনওই দ্বিচারিতা করেননি। তা হলে অসুবিধা কোথায়? সেটা সম্ভবত এ রকম একটা অলিখিত নিয়ম থেকে, বিজেপির বিরোধিতা মানেই কোনও মন্দিরে না-যাওয়া, ধর্মীয় আচার-আচরণ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখা। অথচ, এক জন মানুষ যে স্বধর্মকে ত্যাগ না করেও সেকুলার থাকতে পারেন, প্রতিটি দাঙ্গার সময়ে, এমনকি ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্টের দিনেও দিল্লি থেকে বহু দূরে কলকাতার একটি অতি-অবজ্ঞাত প্রান্তে দাঙ্গা বন্ধের আবেদন রাখতে পারেন দুই বিবদমান ধর্মের উগ্রপন্থীদের কাছে— এ তো আমরা দেখেছি। তা হলে, সেই আদর্শে বিশ্বাসী কোনও রাজনৈতিক নেতা আজ স্বপ্নভঙ্গের সওদাগর কেন?

Advertisement

সম্ভবত এই কারণে, বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ক্রম-উত্থানের পর থেকে সমস্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটাই আমূল পাল্টে গিয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের জীবন্ত আইকন যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, অচিরেই দেখা গেল, যে মুখ্যমন্ত্রী গুজরাতকে নাকি সোনায় মুড়ে দিয়েছিলেন, ভারতকে তিনি সেই সমৃদ্ধিতে নিয়ে যেতে পারলেন না। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশনেতাকে বুকে টেনে নিয়েও তেমন কোনও বিনিয়োগ আনতে পারলেন না। কিন্তু ক্ষমতায় তো থাকতেই হবে। কাজেই বিজেপির নীতি-নির্ধারকেরা বুঝলেন, হিন্দুত্ববাদের প্রশ্নটিকে বড় আকারে সামনে আনা ছাড়া আর গতি নেই। সে কাজ করে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয় এল। বিজেপি সরকার ৩৭০ ধারা বিলোপ করার এবং নাগরিকত্ব বিলকে আইনে পরিণত করার মত অতি-বিতর্কিত কাজগুলিকে সেরে ফেলে নিজেদের হিন্দুত্ববাদী অবস্থানটিকে পাকা করে ফেলল।

কিন্তু সুখের ঘর নিষ্কণ্টক হল না। মহারাষ্ট্র আর ঝাড়খন্ডের নির্বাচনী ফলাফল, হিসেব কিছুটা হলেও গুলিয়ে দিল। কাজেই দিল্লির নির্বাচনে জিততে, হিন্দু ভোটারদের খুশি করার জন্য, সিএএ-বিরোধী জমায়েতের ওপর পুলিশের উপস্থিতিতে গুলি চালানো হল, জেএন ইউ এবং জামিয়া মিলিয়াতে এবিভিপি সমর্থকরা হামলা চালাল। তবু যেন নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না, নির্বাচনের দু’দিন আগে ‘শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র’ ট্রাস্ট গঠন করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে একটা শেষ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করল বিজেপি সরকার।

কেজরীবাল এই প্রেক্ষিতটা সম্ভবত গভীর ভাবে অনুধাবন করেছিলেন; এবং তাঁর কাছে দুটি অবস্থান খোলা ছিল। একটি হল, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীত বিন্দুতে দাঁঁড়িয়ে একটি আদর্শ অবস্থান নেওয়া। শাহিনবাগ আন্দোলনের পাশে গিয়ে বসে পড়া, নির্বাচনী বক্তৃতায় সিএএ প্রসঙ্গ বারে বারে আনা এবং বিজেপিকে তুলোধোনা করা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দিল্লির প্রায় ৮৭% হিন্দু ভোটারদের অনেককেই সঙ্গে না পাওয়ার সম্ভাবনাকেও স্বীকার করে নিতে হত। যার অর্থ হতে পারত, বামপন্থীদের বা কংগ্রেসের মতো ক্রমবিলুপ্তির পথে দু’পা এগিয়ে যাওয়া। অন্যটা ছিল, বিজেপির সেই সুনিশ্চিত ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশকে নিজের দিকে রাখার চেষ্টা করা এবং বিগত পাঁচ বছরে আপ সরকারের সাফল্যের ক্ষেত্রগুলোকে তুলে ধরা। তিনি পরেরটাই করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর সদর্থক ধর্মীয় অবস্থানকেও অস্বীকার করেননি। ফল হাতে-হাতে মিলেছে।

প্রশ্ন হল, বিজেপির এই আগ্রাসী, বিধ্বংসী হিন্দুত্ববাদকে প্রতিহত করতে (যা ভোটের ফল বেরোবার পর দিল্লিতে সংখ্যালঘুদের শাস্তি দেয় তাঁদের সম্পত্তি নষ্ট করে, নিরাশ্রয় করে দিয়ে), তার বিপরীতে একটি সদর্থক ধার্মিকতাকে রাখা যায় কি না। রাজনীতির জগতে আদর্শগত অবস্থানকে অক্ষুণ্ণ রেখে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার চেয়ে, তথাকথিত নরম হিন্দুত্ব, যা হনুমান চালিশাকে অবান্তর বলে না, আবার শাহিনবাগকে ‘মারো গোলি সালোঁ কো’ বলে না— তাকে স্বপ্নভঙ্গ না বলে নতুন এক পথের সন্ধান বলে মেনে নিতে ক্ষতি কোথায়? বিশেষত যদি সেই পথে ফ্যাসিস্ট, ধর্মান্ধ অপশক্তিকে কিছুটা হলেও আটকানো যায়?

শুভেন রায়, কলকাতা-৫০

রাজ্যপাল

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘রাজনৈতিক ভারপ্রাপ্ত?’ (৩০-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। প্রবন্ধটিতে আগাগোড়া রাজ্যপাল পদের এক্তিয়ার, সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে।

আমরা সবাই জানি, রাজ্যপাল একটি সাংবিধানিক পদ। গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল— প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্র আলাদা। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত পদ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল সরকারের মনোনীত পদ। তাই জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবুও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকেই যায়।

প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী পদের কার্যকলাপ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলতেই পারেন। বিশেষ করে যখন জনহিতকর কাজে নির্বাচিত সরকারের ফাঁক-ফোকর থেকে যায়, তখন সাংবিধানিক পদের একটা নৈতিক দায়িত্ব থেকেই যায়।

এ রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক করোনা-আতঙ্কের আবহে রাজ্য সরকারের তথ্য লুকোচুরি, এমনকি সংবাদমাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরতে বাধ্য করা, এ সব একের পর এক ঘটেই চলেছে। রাজ্যপাল এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে পরামর্শও দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই পরামর্শ আদৌ শুনেছে কি? যখনই রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের কোনও ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিচ্ছেন, তখনই মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা পালা করে রাজ্যপালের পদটির প্রতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ শানাচ্ছেন। তাতে সরকারেরও ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে না কি?

মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য, বেরুগ্ৰাম, পূর্ব বর্ধমান

একটি প্রশ্ন

‘রাজনৈতিক ভারপ্রাপ্ত?’ নিবন্ধ পড়ে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করি, তা হলে কি বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সময়ে) তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর পদটিকে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সুচতুর ভাবে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন?

শোভনলাল বকসি, কলকাতা-৪৫

সাইকেল চড়ুন

করোনা থেকে বেরিয়ে আসার পথে বড় অন্তরায় আমাদের গণপরিবহণ ব্যবস্থা। সরকার যত দূর সম্ভব সবাইকে সাইকেলে যেতে উৎসাহ দিক। এতে সবাই দূরত্ব রক্ষা করতে পারবেন এবং এখনই অন্তত ৭০% লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে পারা যাবে। আর বাতাসও নির্মল থাকবে।

অনুপ কুমার তোকদার, ইমেল মারফত

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন