লন্ডন ডায়েরি

নানান শাকসব্জির আদলে পুতুল তৈরির শুরুটাও সে সময়েই, যা তিনি করেছেন জীবনভর। শাড়ি ও অন্যান্য ভারতীয় বস্ত্র দিয়ে পুতুলের পোশাক বানাতেন তিনি।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:৪৪
Share:

উইলিয়াম ম’ নামের এক অফিসারকে বিয়ে করতে ১৮৯৮-এ ভারতে আসেন ব্রিটিশ মহিলা, উনা। নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে ভারতের সংস্কৃতির, বিশেষত এ দেশের কাপড়ের প্রেমে পড়েন তিনি। নানান শাকসব্জির আদলে পুতুল তৈরির শুরুটাও সে সময়েই, যা তিনি করেছেন জীবনভর। শাড়ি ও অন্যান্য ভারতীয় বস্ত্র দিয়ে পুতুলের পোশাক বানাতেন তিনি। ‘দ্য ভেজিটেবল কিংডম’ নামে বই লিখেছিলেন, তাতে ছিল লর্ড কিউকাম্বার, লর্ড ক্যাবেজ, লর্ড লিক-এর মতো পুতুল-চরিত্র। ‘কিং পটস’-এর কূটনীতিক লর্ড কিউকাম্বারের পোশাক ছিল পাজামা-ট্রাউজ়ার্স, কুর্তা। রাজার বিশ্বস্ত সঙ্গী লর্ড ক্যাবেজের পরনে কমলা-সবুজ মাশরু সিল্ক ট্রাউজ়ার্স, মেরুন-সাদা সুতির টিউনিক। লর্ড লিক পরত সুতির আংরাখা, ভারতে যে পোশাক এনেছিল পার্সিরা, পরতেন ভারতীয় রাজপুত্র ও অভিজাতরা। উনা পরে লন্ডনে ফিরে আসেন। ১৯২২-এ তিনি পুতুলগুলো দেন লন্ডন মিউজ়িয়ামকে। ১৯৩০-এ কর্তৃপক্ষকে লেখা উনা-র চিঠি পাওয়া যায়, তিনি জানতে চেয়েছেন পুতুলগুলো ফের কবে প্রদর্শনীতে দেখানো হবে, ওঁর বন্ধুরা দেখতে উন্মুখ! ৯৭ বছর পর লন্ডন মিউজ়িয়াম জানিয়েছে, ফিরছে ন’টি পুতুল, সঙ্গে উনা-র বইয়ের প্রথম সংস্করণটিও। ইন্ডিয়ান সেন্টার অব ক্র্যাফ্ট অ্যান্ড ডিজ়াইন-এর তুলিকা গুপ্ত মিউজ়িয়ামকে পুতুলের পোশাক ও তার কাপড় চিনিয়ে দেওয়ায় সাহায্য করেছেন।

Advertisement

পুতুল

রান্না আর বই

Advertisement

ব্রিটেনে ভারতীয় খাবারের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ভেগান ও নিরামিষ খাদ্যের ভক্ত বরং বেশি। এ সপ্তাহে ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকার নন-ফিকশন বেস্টসেলার-লিস্টে তিনটে বইয়ের লেখকেরা দক্ষিণ এশীয় নারী। ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নাদিয়া হুসেন-এর বই ‘টাইম টু ইট’ তালিকায় ৪ নম্বরে। ৭ নম্বরে মীরা সোধার বই ‘ইস্ট: হানড্রেড টোয়েন্টি ভেজিটেরিয়ান অ্যান্ড ভেগান রেসিপিজ় ফ্রম ব্যাঙ্গালোর টু বেজিং’; রুক্মিণী আইয়ার-এর ‘দ্য কুইক রোস্টিং টিন’ ৯ নম্বরে। গত বছরের ‘বেক-অফ’ জয়ী রাহুল মণ্ডল আবার জানিয়েছেন, তাঁর কাছে বহু প্রকাশকের অফার থাকলেও তিনি এখনও তাঁর প্রথম রান্নার-বই লেখা নিয়ে নিশ্চিত নন। এ বছর এই প্রতিযোগিতায় একমাত্র ভারতীয়, বছর বত্রিশের প্রিয়া ও’শি-র দিকে এখন নজর সব দর্শকের।

অ্যালবার্ট স্মরণে

মহারানি ভিক্টোরিয়ার জন্মের দু’শো বছর উদ্‌যাপিত হচ্ছে ব্রিটেনে। গত ২৬ অগস্ট আর একটা বিশেষ উদ্‌যাপন ছিল, প্রিন্স অ্যালবার্টের জন্মেরও দু’শো বছর। ১৮৪০’এ যখন অ্যালবার্ট ও ভিক্টোরিয়ার বিয়ে হয়, দু’জনেরই বয়স ছিল কুড়ি। আগের রাজা তৃতীয় জর্জকে বলা হত ‘পাগল’, আর চতুর্থ জর্জ ছিলেন ব্যভিচারী। ভিক্টোরিয়া-অ্যালবার্ট হয়ে ওঠেন পবিত্রতা ও বিশ্বাসে ভরা পারিবারিকতার প্রতীক। ন’টি সন্তান হয় তাঁদের। বিজ্ঞানপ্রিয় অ্যালবার্টের সবচেয়ে বড় কীর্তি লন্ডনের হাইড পার্কে ১৮৫১-র ১ মে থেকে ১৫ অক্টোবর ব্যাপী আন্তর্জাতিক ‘গ্রেট এগ্‌জ়িবিশন’। প্রদর্শনীর বিরাট আয়ের টাকায় সাউথ কেনসিংটনে সংগ্রহশালা তৈরির জমি কেনা হয়েছিল। আজ লন্ডনে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজ়িয়াম, ন্যাচারাল হিস্ট্রি ও সায়েন্স মিউজ়িয়ামে লক্ষ লক্ষ দর্শক ভিড় করেন, এই সবই অ্যালবার্টের উপহার। কোহিনুরকে ইউরোপীয় কায়দায় কাটার ভাবনাও ছিল তাঁরই। ১৮৬১-তে অ্যালবার্টের অকালমৃত্যুর পর ভিক্টোরিয়া বাকি জীবন কালো ছাড়া অন্য রঙের পোশাক পরেননি।

দম্পতি: ভিক্টোরিয়া-অ্যালবার্ট

সিঁদুরে মেঘ

ব্রেক্সিট-কাণ্ডে রানি এলিজ়াবেথও জড়ালেন বলে! বরিস জনসন বলেছেন, গরমের ছুটি থেকে সাংসদরা ফিরে আসার পরে, ১০ সেপ্টেম্বর রানিকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে বলবেন তিনি। ১৪ অক্টোবর ফের রানির হাতে খুলবে পার্লামেন্ট, আগামী বছর সরকারের কী কী পরিকল্পনা, জানাবেন তিনি। ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ বিরোধী সাংসদদের আটকাতেই জনসনের এই কৌশল। রানি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে সাংসদদের সিদ্ধান্তহীনতায় তিনি হতাশ। ও দিকে লেবার পার্টির নেতাও রানিকে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন, তিনি যেন ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’-এর দিকে পার্লামেন্টকে এগিয়ে না দেন। ৩ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্ট অগ্নিগর্ভ হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন