সম্পাদকীয় ২

সেইখানে যোগ

তবুও নিন্দুকের মন পাওয়া ভার। তাঁহারা বলিবেন, প্রধানমন্ত্রীর কি কাজ নাই যে এমন বিচিত্র অকাজে সময় নষ্ট করিতেছেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০০:১১
Share:

ভক্তদের তরফে গোড়াতেই একটি যুক্তি পেশ করিয়া রাখা যাউক। নীরব মোদী যত হাজার কোটি টাকাই তছরুপ করিয়া থাকুন না কেন, ভারতীয় অর্থনীতির মোট আয়তনের তুলনায় তাহা কী? অকিঞ্চিৎকর। হাজার ভাগের এক ভাগও নহে। দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি কে? উত্তরে অম্বানি-আদানিদের নাম বলিলে কাকেশ্বর কুচকুচে দুলিয়া দুলিয়া মাথা নাড়িয়া বলিবে, ‘হয়নি, হয়নি, ফেল।’ মূল শক্তি সাধারণ মানুষ। এবং, স্বাস্থ্যই সম্পদ। অর্থাৎ, দেশের অর্থনীতির পক্ষে নীরব মোদীর তছরুপ অপেক্ষা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনেক বেশি মারাত্মক। নরেন্দ্র মোদী, অতএব, অর্থনীতির বৃহত্তর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখিয়াছেন। তিনি অ্যাপ খুলিয়া যোগ শিখাইতেছেন। প্রত্যহ সকালে মোবাইল ফোন খুলিয়া দেশবাসী যোগচর্চা আরম্ভ করিলেই ‘ইন্ডিয়া’ ‘ফিট’ হইয়া উঠিবে। স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত। শিক্ষাও প্রধানমন্ত্রীর নজর এড়ায় নাই। তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই লিখিয়া পরীক্ষার যুদ্ধে জয়ী হইবার কৌশল শিখাইয়াছেন। পরীক্ষাকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখিতে শেখা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর কি না, নরেন্দ্র মোদীকে সেই প্রশ্ন করিয়া লাভ নাই, তিনি সামরিক বুলিতে বিশ্বাসী। যে কথাগুলি ছেলেমেয়েরা জন্ম ইস্তক শুনিয়া আসিতেছে, সেগুলিই ফের তাহাদের শুনাইবার অর্থ কী, এই প্রশ্নটিও অবান্তর। মূল কথা হইল, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা, উভয়েই জোর দিয়াছেন। অর্থনীতির গোড়া শক্ত করিতে যে এই দুইটি খাতে মন দেওয়ার বিকল্প নাই, এই কথায় বিশ্ব ব্যাঙ্ক হইতে ঝোলাওয়ালা অর্থনীতিবিদ, দুনিয়ার কেহ দ্বিমত হইবেন না।

Advertisement

তবুও নিন্দুকের মন পাওয়া ভার। তাঁহারা বলিবেন, প্রধানমন্ত্রীর কি কাজ নাই যে এমন বিচিত্র অকাজে সময় নষ্ট করিতেছেন? কেন যে প্রধানমন্ত্রীকে পরীক্ষার্থীদের জন্য বই লিখিতে হয় আর যোগের অ্যাপ খুলিতে হয়, নিন্দুকে আর কী বুঝিবেন! তাঁহাদের তো ২০১৯-এর বৈতরণি পার হইবার তাড়না নাই। ২০১৪ সালের প্রচারপর্বে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অনেকগুলি অস্ত্র ছিল। গুজরাত মডেল ছিল, কংগ্রেসের দুর্নীতির তালিকা ছিল, সর্বোপরি, ‘অচ্ছে দিন’-এর খোয়াব ছিল। মধ্যবর্তী পাঁচ বৎসর অস্ত্রগুলি কাড়িয়া লইয়াছে। গুজরাত মডেল স্বরাজ্যেই ভোট টানিতে ব্যর্থ। ‘অচ্ছে দিন’-ও যে আসিবে না, তাহাও স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। অর্থাৎ, ২০১৪ সালে মোদীর যে পরিত্রাতার ভাবমূর্তি ছিল, ২০১৯-এ তাহার লেশমাত্র নাই— দুর্জনে বলিবে, তাঁহার হাত হইতে পরিত্রাণ পাইতেই দেশবাসী ক্রমে ব্যাকুল হইতেছেন। ভোটপূজায় চাই নূতন জুতা, থুড়ি ভাবমূর্তি। অনুমান করা চলে, তাহাই সযত্নে নির্মিত হইতেছে। সেই ভাবমূর্তি দূরবর্তী মসিহার নহে, বরং নিকটজনের। এমন এক জনের, যিনি পরীক্ষার পূর্বে মাথায় হাত রাখিতে পারেন, যোগাসন শিখাইয়া দিতে পারেন, প্রয়োজনে খানিক বকুনি দিয়া ফের কাছে টানিয়া লইতে পারেন। সেই প্রধানমন্ত্রী, যিনি কৃষকের নিকট জানিতে চাহেন ফসলের দাম মিলিল কি না, কিশোরীর পিতাকে আশ্বাস দেন যে তাঁহার কন্যা নিরাপদে বাড়ি ফিরিবে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্ব আরম্ভ হইলে এই ভাবমূর্তিকেই খেলাইয়া দেওয়া হইবে। যোগের অ্যাপ আসিতেছে, তাহা আর বিচিত্র কী?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement