পুলিশের ব্যাধি

বিস্ময়ের কিছু নাই। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ মিছিলের দৃশ্য দেখিলে সন্দেহ হয়, পুলিশ শৃঙ্খলা বজায় রাখিতে রাস্তায় নামে নাই। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার ‘ঔদ্ধত্য’-এর শাস্তি দিতেই যেন লাঠি ধরিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

দিল্লি এবং মেঙ্গালুরুতে পুলিশের ভূমিকা লইয়া চিকিৎসকদের একাধিক সর্বভারতীয় সংগঠন আপত্তি তুলিয়াছে। অভিযোগ, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ মিছিলে আহতদের পুলিশ চিকিৎসা করিতে দেয় নাই। মেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে আহতদের খোঁজে আসিয়া পুলিশ ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ জোর করিয়া প্রবেশ করিয়াছে। হাসপাতালে আতঙ্ক ও অস্থিরতা ছড়াইয়াছে, আহত হইয়াছেন রোগীর শুশ্রূষাকারীরা। ভারতে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ ইহাকে পুলিশের ‘অধোগতির নূতন নজির’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছে। তাহাদের দাবি, ইমার্জেন্সির অন্ধকার দিনগুলিতেও পুলিশের এমন বেয়াদবি দেখা যায় নাই। দিল্লিতেও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হইয়া যে নাগরিকেরা আহত হইয়াছেন, তাঁহাদের হেফাজতে লইয়া অচিকিৎসিত রাখিয়া দিয়াছিল পুলিশ। চিকিৎসকদের একটি দল দরিয়াগঞ্জ থানায় আহতদের দেখিতে গেলে পুলিশ তাহাদের বাধা দেয়। ফলে চিকিৎসার বিলম্ব হয়। ইহাই কি শৃঙ্খলারক্ষার নমুনা? অতি ভয়ানক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরও তৎক্ষণাৎ যথাযথ চিকিৎসা পাইবার পূর্ণ অধিকার আছে। বন্দি কে, কী তাহার অপরাধ, কোনও কিছুই বিচার্য হইতে পারে না। পুলিশ আইনরক্ষক হইয়াও আইনের এই গোড়ার কথাগুলি ভুলিয়াছে। ভারতে জেল হেফাজত ও পুলিশ হেফাজতে বৎসরে দেড় হাজারেরও বেশি বন্দি মারা যান। তাহার অন্যতম কারণ, বন্দির চিকিৎসার প্রয়োজনের প্রতি ঔদাসীন্য। দরিয়াগঞ্জে পুলিশ চিকিৎসকদের প্রশ্ন করিয়াছে, আইনভঙ্গকারীর চিকিৎসা করিবার প্রয়োজন কী? আইনরক্ষকের ইহাই জিজ্ঞাস্য বটে।

Advertisement

বিস্ময়ের কিছু নাই। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ মিছিলের দৃশ্য দেখিলে সন্দেহ হয়, পুলিশ শৃঙ্খলা বজায় রাখিতে রাস্তায় নামে নাই। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার ‘ঔদ্ধত্য’-এর শাস্তি দিতেই যেন লাঠি ধরিয়াছে। অতএব আহতের চিকিৎসার জন্য পুলিশ ব্যস্ত হইবে কেন? উত্তরপ্রদেশে প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালাইবার অভিযোগ ফুৎকারে উড়াইয়াছেন পুলিশকর্তারা, কিন্তু গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় সহায়তা না করিবার অভিযোগ ঝাড়িয়া ফেলিতে পারিবেন কি? দুই গুলিবিদ্ধ যুবককে হাসপাতালে লইবার চেষ্টাই করে নাই পুলিশ। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, ‘পরিবার অভিযোগ করিবে না’ কবুল করাইয়া দেহ হস্তান্তর— গুরুতর অভিযোগ করিয়াছে দুই মৃতের পরিবার।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, যুদ্ধে আহত বিপক্ষের সেনাকেও চিকিৎসা দিতে বাধ্য যে কোনও দেশ। আক্ষেপ, নিজের নাগরিকের প্রতি সেই মানবিকতা দেখাইতে পারিল না ভারতের পুলিশ। বাঁচিবার অধিকার প্রথম মৌলিক অধিকার, এবং তাহার সহিত সংযুক্ত চিকিৎসা। তাই প্রশাসন এমন কিছু করিতে পারে না, যাহা চিকিৎসাকে ব্যাহত কিংবা বিলম্বিত করিতে পারে। হাসপাতাল তাহার নিজস্ব শৃঙ্খলায় চলে, তাহাকে অতিক্রম করিতে পারে না পুলিশ। অনুমোদন ব্যতীত পুলিশ শয্যাশায়ী রোগীর নিকটেও যাইতে পারে না, বিনা অনুমতিতে আইসিইউ-তে প্রবেশ তো অকল্পনীয়। পুলিশ মানবিক হইতে বহু পূর্বেই ভুলিয়াছে, আইনও ভুলিয়াছে কি?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন