Editorial News

দীপাবলীর রাতে দানবের সংহার হোক এ বার

উত্সবের প্রাক-মুহূর্তে এ বার অন্তত সঙ্কল্পবদ্ধ হই, আমার উত্সব আপনার ক্লেশের কারণ হবে না, দানব দলনীর আবাহনের রাতে শব্দ দানবকে জাগিয়ে তোলা হবে না, অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের রাতে অশুভ উল্লাসে মাতব না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, উত্সব যেন কারও বিপন্নতার কারণ না হয়ে ওঠে।

আলোর উত্সব দ্বারপ্রান্তে। অন্ধকার ঘুচিয়ে জগতকে আলোকজ্জ্বল করে তোলাই এ উত্সবের প্রতীকী তাত্পর্য। লঙ্কা বিজয় সেরে শ্রী রামচন্দ্রের অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দ্বীপোত্সব আয়োজনের পৌরাণিক আখ্যান রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই পৌরাণিক গাথা জানা থাক বা না থাক, দীপাবলীকে আঁধারের উপরে আলোর বিজয় বা অশুভের উপরে শুভ শক্তির বিজয়ের উত্সব হিসেবে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। তাই আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, উত্সব যেন কারও বিপন্নতার কারণ না হয়ে ওঠে, কারও উল্লাস যেন অন্য কারও ক্লেশের কারণ না হয়ে ওঠে।

Advertisement

প্রতি বছরই আমরা দেখি, আলোর উত্সব আলোয় সীমাবদ্ধ থাকে না। দীপাবলীর রাত শব্দদানবের দাপটে কুঁকড়ে থাকার রাতে পর্যবসিত হয় ফি বছর। পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে বার বার সতর্কবার্তা জারি করা হয় শব্দবাজির বিরুদ্ধে। শব্দবাজির সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। পুলিশি নজরদারিও কিছু কিছু অংশে চলে। কিন্তু দিনের শেষে শব্দদানবকে বশে আনা যায় না কিছুতেই। আতসবাজির চেয়ে শব্দবাজির পরাক্রম অনেক বেশি থাকে দীপাবলীকে ঘিরে।

যে কালীপুজোকে ঘিরে এই দ্বীপোত্সব, সেই কালীপুজোর কথা মাথায় রাখলেও শব্দ দানবের এমন উজ্জীবনে আমরা মেতে উঠতে পারতাম না। মা কালীর পুজো তো দানব বিনাশের লক্ষ্যেই। তার বদলে রাতভর এক দানবকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়াই যেন চলতে থাকে। এ পরম্পরায় এ বার ছেদ পড়া দরকার।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: বাজির বিপদ ঠেকাতে কড়া বিধাননগর পুলিশ

আরও পড়ুন: আজ টেস্ট, কাল ফাইনাল, বাজির দাপট রোখার পরীক্ষায় পুলিশ

কেউ প্রবীণ, কেউ শিশু, কারও হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কারও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়— আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় এমন মানুষ অসংখ্য। দীপাবলীর রাতে শব্দবাজির প্রচন্ড তাণ্ডবে এঁরা প্রত্যেকে তীব্র সমস্যায় পড়েন। অর্থাত্ এক দলের কাছে যা উত্সব, তা অন্য অনেকের জন্য দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যত বেশি বাজি পোড়ে, বাতাসও ততই দূষিত, ভারাক্রান্ত হতে থাকে। অতএব উত্সবের নামে নিজেদেরই বহু রকম ক্ষতি আবাহন করি আমরা। আসুন, উত্সবের প্রাক-মুহূর্তে এ বার অন্তত সঙ্কল্পবদ্ধ হই, আমার উত্সব আপনার ক্লেশের কারণ হবে না, দানব দলনীর আবাহনের রাতে শব্দ দানবকে জাগিয়ে তোলা হবে না, অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের রাতে অশুভ উল্লাসে মাতব না। এইটুকু সঙ্কল্পে যদি অটল থাকতে পারি, দীপাবলীর চেহারাটাই বদলে যাবে, আলোর উত্সব সত্যিই আলোকিত হয়ে উঠবে। এইটুকু সঙ্কল্পে যদি দৃঢ় থাকতে পারি, অশুভের বিরুদ্ধে সত্যিই শুভ শক্তির এক বিরাট জয় হবে দীপাবলীর রাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন