প্রধানমন্ত্রী হয়তো বুঝছেন, পিঠ ঠেকছে দেওয়ালে। তাই জঙ্গিদের সমর্থন জোগানো বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সেনাকে। সংগৃহীত ছবি।
লক্ষ্য ছিল প্রতিবেশীর ভূখণ্ডে সন্ত্রাস রফতানি করা। কিন্তু, নিজেই এখন সন্ত্রাসে জর্জরিত। গোটা বন্দোবস্তটাই নিয়ন্ত্রণের এত বাইরে যে শাপমুক্তির কোনও উপায়ই মিলছে না। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। অভিশপ্ত দশা যাঁদের জন্য, সন্ত্রাসের সেই নায়করাই সদর্পে রাষ্ট্রনীতির পরামর্শ দিচ্ছেন পাক সরকারকে। পঙ্কিল আবর্তে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।
দ্বিধান্বিত একটি রাষ্ট্র। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসল নিয়ন্ত্রক, নাকি সামরিক বাহিনীই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, ঠিক মতো জানে না রাষ্ট্রটি।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা জুটেছে। বৈদেশিক অনুদান ছাড়া অনেক অপরিহার্য বিষয়ই অচল। সন্ত্রাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী যোগের প্রমাণ বার বার স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠায়, অনুদানের উৎসও শুকিয়ে আসছে ক্রমশ।
সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিতি তৈরি হয়েছে গোটা বিশ্বে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না আন্তর্জাতিক মহলের অবিরাম চাপ সত্ত্বেও। প্রত্যাশিত ভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হচ্ছে গোটা বিশ্ব থেকে।
প্রধানমন্ত্রী হয়তো বুঝছেন, পিঠ ঠেকছে দেওয়ালে। তাই জঙ্গিদের সমর্থন জোগানো বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সেনাকে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামোয় অসীম প্রভাবশালী সেনার উপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি গ্রাহ্যই করছেন না সেনাপ্রধান।
সেনা-সরকার মতানৈক্যের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ সরকারকে চাপ দিচ্ছেন সামরিক কর্তারা। অনিচ্ছায় হোক বা ইচ্ছায়, সামরিক কর্তাদের পাশে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে ধমক দিচ্ছে সরকার। স্বভাবসিদ্ধ প্রতিস্পর্ধায় সংবাদমাধ্যমও সঙ্ঘাতের বার্তা দিচ্ছে সরকারকে।
এর পর আরও সাংঘাতিক ঘটনা। জঙ্গি সংগঠনের নেতা সাংগঠনিক মুখপত্রে পাক সরকারের উদ্দেশে প্রকাশ্য প্রস্তাব রাখছে— আরও প্রশস্ত করা হোক সন্ত্রাস রফতানির পথ, তা হলেই হাতে আসবে কাশ্মীর।
মাসুদ আজহারের এই প্রকাশ্য আহ্বান ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হওয়া দেশের ভাবমূর্তিতে আরও কতটা কালিমা লেপে দিচ্ছে, নওয়াজ শরিফ তা নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু দেশের মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমকে জাতীয় স্বার্থের দোহাই দিয়ে শাসন করার যে সুযোগ তাঁর সামনে রয়েছে, জঙ্গি সংগঠনের পত্রিকাকে সেই শাসানি দেওয়ার ক্ষমতাও আজ তাঁর নেই।
বড় অসহায় দেখাচ্ছে নওয়াজ শরিফকে। সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরের দ্বাররক্ষী তিনি। ঘরের ভিতর থেকে অনেকগুলো ধারালো ফলা উদ্যত তাঁর পিঠের কাছে। তাই বুক চিতিয়ে দরজা আগলানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্ত বহির্বিশ্বও আঙুলটা তুলছে তাঁর দিকেই। সেই আঙুলগুলোও যখন ধারালো ফলার রূপ ধরবে ধৈর্য হারিয়ে, তখন আর কোনও পথ থাকবে না নওয়াজের— এগনোরও নয়, পিছনোরও নয়।