Editorial News

জাতীয় রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র ফের বাংলা

দীর্ঘ টানাপড়েন চলল, কিন্তু বাম-কংগ্রেস সমঝোতায় পৌঁছতে পারল না। সুযোগ হাতছাড়া করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাঁড়িয়ে গেলেন কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পাশে, বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে পাশে টেনে নিলেন কংগ্রেসকে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

অনেকগুলো বার্তা এল একটা নির্বাচনকে ঘিরে। অনেক কিছু ঘটল এমন, যা অবশ্যই শিক্ষনীয়। অবশ্য শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা যদি থাকে কারও।

Advertisement

ভারতের রাজনীতিতে বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে বাংলা। সংখ্যার নিরিখে নয়, নীতি নির্ধারণের নিরিখে। সংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশ যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিল্লির জন্য, রাজনৈতিক প্রবাহের দিশানির্দেশের জন্য তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলা বহু বার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের তেমনই এক সমীকরণ সংঘটনের দিশারী হয়ে উঠতে শুরু করলেন।

রাজ্যসভা নির্বাচন আসন্ন। বাংলায় পাঁচটি আসনের জন্য নির্বাচন হবে। নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে যে ছবি ভেসে উঠছিল, তাতে বিরোধী শিবিরে থাকা কোনও দলের সঙ্গেই শাসকের কোনও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। চার আসনে পরাজয় নিশ্চিত, জানত বিরোধীরা। পঞ্চম আসনটিকে শাসকের হাতের বাইরে রাখার সুযোগ হাতছাড়া হবে না কোন পথে হাঁটলে, বিরোধী কংগ্রেস ও বামেদের মধ্যে আলোচনা চলছিল তা নিয়েই। শেষ পর্যন্ত সে আলোচনা ফলপ্রসূ হল না। দীর্ঘ টানাপড়েন চলল, কিন্তু বাম-কংগ্রেস সমঝোতায় পৌঁছতে পারল না। সুযোগ হাতছাড়া করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাঁড়িয়ে গেলেন কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পাশে, বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে পাশে টেনে নিলেন কংগ্রেসকে।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপের তাৎপর্য বহুমুখী। রাজ্য স্তরে তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন অ-বিজেপি সমীকরণের প্রশস্ত সড়ক প্রস্তুত করে ফেললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান অ-বিজেপি শক্তি অবশ্যই কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধিতার স্বার্থে সেই কংগ্রেসের হাত ধরতে যে তাঁর আপত্তি বা সমস্যা নেই, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন।

শুধু কংগ্রেসের মুখ চেয়েও বসে থাকছে না তৃণমূল। উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা কাছাকাছি এসেছে কংগ্রেসের সক্রিয়তা ছাড়াই। তেলঙ্গানার টিআরএস এবং বাংলার তৃণমূল পরস্পরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেসের ভূমিকা ব্যতিরেকেই। কংগ্রেসের জন্য অপেক্ষা না করেই এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার দিল্লিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের বৈঠক আয়োজন করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বৈঠকে ডাকও পেয়েছেন। এতএব এ কথা খুবই স্পষ্ট যে, বিজেপি বিরোধী রাজনীতির একটি প্রবাহ যদি এ মুহূর্তে কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তা হলে একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি সমীকরণও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সে সমীকরণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মমতা তথা তৃণমূল।

আরও পড়ুন
রাজ্যসভায় সমর্থন কংগ্রেস প্রার্থীকে, চমকে দিয়ে ঘোষণা মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি বিজেপি বিরোধী যে কোনও সমীকরণের অংশীদার হতে প্রস্তুত। রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মমতা বিজেপি-র বিপরীত মেরুতে দাঁড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন। শরদ পওয়ারের দূত প্রফুল্ল পটেলকে একই দিনে জানিয়ে দিলেন, দিল্লিতে পওয়ারের ডাকা বৈঠকেও তৃণমূল সামিল হচ্ছে। অর্থাৎ অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি সমীকরণেও তৃণমূলের ভূমিকা থাকছে।

বিজেপি বিরোধী সমীকরণে আগেও নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলা। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে পরাস্ত করার ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস, ডাক দিয়েছিল তৃতীয় বিকল্প হিসাবে পরিচিত শক্তিগুলিও। তৃতীয় বিকল্পের অন্যতম প্রধান অংশভাক হিসাবে পরিচিত যে বামেরা, ২০০৪ সালে এই বাংলা থেকেই তারা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ১ সরকারকে সমর্থন জোগানোর প্রশ্নেও বাংলার বামেদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আবার তেমনই এক সন্ধিক্ষণে বাংলা। কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যত রকম সমীকরণের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, সেগুলির সব ক’টিতেই বাংলার শাসক দলের উপস্থিতিকে অপরিহার্য বলে মনে হচ্ছে। জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহগুলির দিশা নির্দেশে বাংলা এই মুহূর্তে ঠিক এই ভাবেই আবার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন