Kolkata Police

রণক্ষেত্র প্রস্তুত

বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের নির্যাতনের ঘটনা যে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে, রাজনৈতিক মহলের সেই অনুমান নির্ভুল প্রমাণিত হল।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৫:০৭
Share:

ছাব্বিশের আগে শেষ একুশ— সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের বাৎসরিক মহাসমাবেশের মূল তাৎপর্য এক কথায় এটাই। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি কী হতে চলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জানিয়েছেন, ভোটের ফলাফল ঘোষণা অবধি ‘ভাষা আন্দোলন’ চলবে। সাম্প্রতিক কালে একের পর এক ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যখন দৃশ্যত দিশাহারা, নাগরিক সমাজে তাঁর রাজনীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ যখন ক্রমেই জমে উঠছে, তখন বিজেপি কার্যত তাঁর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের নির্যাতনের ঘটনা যে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে, রাজনৈতিক মহলের সেই অনুমান নির্ভুল প্রমাণিত হল। শেষ অবধি ‘বাঙালি অস্মিতা’ জাগবে কি না তা ভবিষ্যৎই বলবে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসাবে বাঙালি নির্যাতনের বিরোধিতা করার এই সুবর্ণমণ্ডিত সুযোগ মুখ্যমন্ত্রী স্বভাবতই হাতছাড়া করেননি। অনুমান করা চলে, আগামী কয়েক মাস এই প্রশ্ন বঙ্গ-রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে। ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ, না কি ভাষাগত পরিচিতির ভিত্তিতে সংহতি, বাংলার রাজনীতি কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে, তার উপরে নির্ভর করবে রাজ্যের ভবিষ্যৎ পথরেখা। তবে, এক দিকে অবৈধ খাজনা আদায়ের সর্বগ্রাসী সিন্ডিকেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ, পর পর নারী-নির্যাতনের ঘটনা, আর অন্য দিকে বিভাজনের রাজনীতির ক্রমবর্ধমান চাপ; এবং তার উল্টো দিকে বাঙালি অস্মিতার রাজনীতি— এই সমীকরণ পশ্চিমবঙ্গ আগে কখনও দেখেনি।

বাঙালি অস্মিতার অস্ত্রটি মোক্ষমতর হয়ে উঠতে পারে, কারণ দুর্গাপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক রকম স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, বাঙালি পরিচিতির বিষয়ে তাঁদের ধারণা নিতান্তই অস্পষ্ট। বর্ণহিন্দু বাঙালি কালীভক্ত, এবং বাংলার বৃহত্তম সর্বজনীন উৎসবটি দুর্গাপূজা— এই দু’টি কথাই নির্জলা সত্য হলেও বাঙালির পরিচিতি যে শুধু ‘জয় মা দুর্গা’, ‘জয় মা কালী’-র হুঙ্কারে সীমাবদ্ধ নয়, বস্তুত তা বাঙালি পরিচিতির অতি সামান্য অংশকেই বর্ণনা করতে পারে, এ কথাটি স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলনেতৃত্ব সম্যক অবহিত নন। জন্মসূত্রে বাঙালি যে নেতারা তাঁর দলে রয়েছেন, তাঁরাও নিশ্চয় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের সামাজিক সংস্কৃতির সঙ্গে বঙ্গের সামাজিক সংস্কৃতির ফারাক ঠিক কোন জায়গায়, বিজেপি সে কথা আজ পর্যন্ত তেমন ভাবে বোঝার চেষ্টা করেনি— উগ্র হিন্দুত্বকেই যথেষ্ট বিবেচনা করেছিল। এখন ‘জয় শ্রীরাম’-এর পরিবর্তে বাংলার ‘নিজস্ব দেবী’র নামে জয়ধ্বনি দেওয়ায় স্পষ্ট, এখনও তাঁরা নিজেদের পরিচিত খাপেই পশ্চিমবঙ্গকে আঁটিয়ে দিতে উদ্‌গ্রীব।

২১ জুলাই অবশ্য শুধু বঙ্গ-রাজনীতির নতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরিরই সাক্ষী হল না, এ দিন কলকাতা পুলিশ প্রমাণ করল যে, এত বড় সমাবেশ থাকা সত্ত্বেও শহর সচল রাখা সম্ভব। ২১ জুলাই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ বলা চলে কি না, এই উৎসবে তৃণমূল কংগ্রেসের অধিকার কতখানি, সে সব কূট প্রশ্ন দূরে সরিয়ে মনে রাখা জরুরি যে, দিনটি পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম রাজনৈতিক সমাবেশের দিন। কয়েক লক্ষ মানুষের ভিড় কী ভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্রকে স্তব্ধ করে দিতে পারে, বছরের পর বছর একুশে জুলাইয়ের কলকাতা তার সাক্ষী। সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে এ বছর পুলিশের শহর পরিচালনা নজর কেড়েছে, পেয়েছে আদালতের প্রশংসা। প্রশ্ন হল, আদালত নির্দেশ না দিলে কি পুলিশ এত তৎপর হত? অফিসবেলায় যাতে রাস্তায় মিছিল না নামে, তা নিশ্চিত করত? এর উত্তরও রাজ্যবাসীর জানা। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার কথা রাজনৈতিক দলগুলি মাথায় রাখবে না, তা স্বতঃসিদ্ধ— আর সঙ্গে সঙ্গে, আদালতের ভ্রুকুঞ্চন ব্যতীত পুলিশ-প্রশাসনও নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার কথা ভাববে না, তাও প্রমাণিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন