Coronavirus

বাহুল্যের বিপদ

এই সমস্যাটির চার ধরনের কারণের কথা বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন। প্রথম কারণ, আহার্যের সংস্থান বাড়িয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৬
Share:

অতিমারি করোনা বিপদটিকে চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছে। বৃহৎ বপুর সমস্যা। পুষ্টিযুক্ত খাদ্য অধিক মানুষের লভ্য। ফল যাহা হইবার, তাহাই হইতেছে। বপুর সমস্যায় ভুগিতেছে প্রচুর মানুষ। করোনা আবার তাহাদেরই বেশি আক্রমণ করিতেছে, যাহাদের দেহটি স্থূলকায়। যাহারা কৃশকায়, অতিমারি তাহাদের অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি করিতেছে। স্থূলত্বের সহিত যদি মধুমেহ রোগটিও থাকে, তাহা হইলে তো কথাই নাই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭৫ হইতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তের মহিলা এবং পুরুষগণের ওজনের হিসাব করিয়াছে। আঠারো বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সিদের মধ্যে নারী-পুরুষ, উভয়েরই ওজন ঊর্ধ্বগামী।

Advertisement

এই সমস্যাটির চার ধরনের কারণের কথা বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন। প্রথম কারণ, আহার্যের সংস্থান বাড়িয়াছে। সবুজ বিপ্লবের পর শস্যের ফলন বাড়িয়াছে। ধনী রাষ্ট্রে যেমন, তেমনই দরিদ্র দেশেও। সবুজ বিপ্লবের পরবর্তী কালে আসিয়া গিয়াছে জিন-প্রযুক্তি। অধিক খাদ্যগুণসম্পন্ন শস্য এখন মানুষের হাতের কাছে। তাহার ফলেও মেদবৃদ্ধি ঘটিতেছে। স্থূলত্বের দ্বিতীয় কারণ খাদ্যে শর্করাবৃদ্ধি। তৃতীয় কারণ, মানুষের জীবনযাত্রা এক্ষণে প্রসেসড ফুড-নির্ভর। জীবন ইদানীং জটিল, গৃহে আহার্য প্রস্তুতে বিড়ম্বনা, তাই প্যাকেটজাত খাদ্যে মানুষের আগ্রহ বাড়িয়াছে। স্ন্যাক্স এবং ফাস্ট ফুডে শর্করা, লবণ এবং চর্বির পরিমাণ বেশি। ক্ষতিকর ওই সব উপাদান আহার্যকে সুস্বাদু করিয়া তুলে। প্যাকেটজাত খাদ্য যে হেতু বহুজাতিক কোম্পানিগুলি তৈরি করিয়া থাকে, এবং ওই সব কোম্পানি যে হেতু নিরন্তর প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে, সেই হেতু অধিক লাভের লোভে কোম্পানিগুলি বেশি সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুতে মগ্ন থাকে। স্থূলত্বের চতুর্থ কারণ হিসাবে যাহা চিহ্নিত হইয়াছে, তাহাও আধুনিক জীবনযাত্রা-প্রসূত। মানুষ ইদানীং কায়িক শ্রম কম করে, করিবার প্রয়োজনও তাহার হয় না। চেয়ারে বসিয়া কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের পর্দার দিকে তাকাইয়াই তাহার দিন কাটে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণ এই কারণটিকে গড়পড়তা মানুষের মেদবৃদ্ধির প্রধান উৎস বলিয়া গণ্য করিয়াছেন।

মেদ কী কী কারণে বাড়ে, তাহা জানিবার পর বাকি থাকে সমস্যা লাঘবের চেষ্টা। যে দুইটি অভিনব পরামর্শ এই প্রসঙ্গে উত্থাপিত হইয়াছে, তা উল্লেখের দাবি রাখে। একটি প্রস্তাব হইল ফাস্ট বা জাঙ্ক ফুড হইতে মানুষকে ফিরানোর লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ। সরকারের তরফে কর বাড়াইয়া ইহা করা যাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে উক্ত খাদ্যদ্রব্যগুলি মহার্ঘ হইবে, এবং মানুষ দামের কারণে ওইগুলি হইতে পিছাইয়া আসিবে— ইহাই লক্ষ্য। অন্য যে পরামর্শটি আসিয়াছে, তাহাও প্রণিধানযোগ্য। খাদ্য যে হেতু একটি অভ্যাসমাত্র, এবং যে হেতু ইত্যাকার অভ্যাস দানা বাঁধে বাল্যে, সেই জন্য বালক-বালিকাদিগকে ফাস্ট এবং জাঙ্ক ফুড হইতে দূরে রাখা শ্রেয়। কী উপায়ে তাহা সম্ভব? প্রস্তাব, বিদ্যালয়গুলির অনতিদূরে কোনও ফাস্ট ফুডের দোকান খুলিতে না দেওয়া। দোকান খুলিতে যে লাইসেন্স প্রয়োজন, তাহাতে কড়াকড়ি আবশ্যক। এই মর্মে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রাহাম ম্যাকগ্রেগর ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে লিখিয়াছেন, খাদ্য-শিল্পকে কোনও মতেই জনগণের মাথায় চড়িতে দেওয়া উচিত নহে। কথাটি রাজনীতিকরা বুঝিলে মঙ্গল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন