internet

অধিকার হরণ

রাষ্ট্রবহির্ভূত পরিসরেও বিভিন্ন পরিষেবা ক্রমশ ইন্টারনেট-ভিত্তিক হয়ে উঠছে, যার মধ্যে শিক্ষার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ০৪:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

অসমের এক কংগ্রেস সাংসদ কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে জানতে চেয়েছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে বারে বারেই যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য কী? এর ফলে যে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, সে কথাটি কি কেন্দ্র আদৌ জানে? প্রশ্নটি শুনে কাশ্মীরের নাগরিকরা মুচকি হাসবেন। অনুমান করা চলে, বিশেষত দেশের প্রান্তস্থ অঞ্চলগুলিতে যে কোনও রাজনৈতিক বিক্ষোভকে চাপা দিতে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াকেই কেন্দ্রীয় সরকার সহজতম পন্থা জ্ঞান করেছে। যুক্তি বলবে যে, কাজটি সংবিধানবিরোধী। সংবিধানের ১৯তম অনুচ্ছেদ দেশের প্রতিটি মানুষের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার স্বীকার করে। আজকের যুগে ইন্টারনেট সংযোগ সেই মতপ্রকাশের অপরিহার্য মাধ্যম। ফলে, ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা হলে মতপ্রকাশের অধিকারটিকে খর্ব করা হয়। কিন্তু, শুধু এটুকুই নয়। সংবিধানের ২১তম অনুচ্ছেদ নাগরিকদের জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার দিয়েছে। ২০১৯ সালে ফাহিমা শিরিন বনাম স্টেট অব কেরল মামলায় কেরল হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটকে সংবিধানের ২১তম অনুচ্ছেদ স্বীকৃত জীবনের অধিকারের অঙ্গ হিসাবেই দেখা বিধেয়। নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কে ইন্টারনেটের ভূমিকা ক্রমবর্ধমান। অন্য দিকে, রাষ্ট্রবহির্ভূত পরিসরেও বিভিন্ন পরিষেবা ক্রমশ ইন্টারনেট-ভিত্তিক হয়ে উঠছে, যার মধ্যে শিক্ষার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। বারংবার শাটডাউন নাগরিকের এই অধিকার খর্ব করে।

Advertisement

নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করার আগে রাষ্ট্রকে প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ যুক্তিগ্রাহ্য, ন্যায্য ও সমদর্শী। বিশেষত, কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্ব ভারতে যে ভঙ্গিতে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়, তার ন্যায্যতা, সমদর্শিতা বা যুক্তিগ্রাহ্যতা প্রমাণের কোনও সুসংহত তাগিদ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেখা গিয়েছে, তেমনটা দাবি করা মুশকিল। অবশ্য, নাগরিকের সংবিধান-নির্দিষ্ট মৌলিক অধিকারের প্রতি বর্তমান শাসকদের শ্রদ্ধা রয়েছে বলে মনে করার কোনও কারণ নেই। এই কথাটির প্রতিযুক্তি হিসাবে কেউ প্রাইভেট ডেটা প্রোটেকশন বিল, ২০১৯ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটির কথা টেনে আনতে পারেন। অতিবিতর্কিত ও সমালোচিত এই বিলটি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাহার করে নিল। এই বিলটি নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছিল, ফলে তা সরিয়ে নেওয়া হল, এটা কি নাগরিকের অধিকারের প্রতি সরকারের শ্রদ্ধাশীলতার প্রমাণ নয়?

কথাটিতে বিশ্বাস করতে পারলে নাগরিক স্বস্তিবোধই করতেন। কিন্তু, অকালপ্রয়াত বিলটির গতিপথ সেই স্বস্তির অবকাশ দেয় না। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকারকে সুপ্রিম কোর্ট অনুচ্ছেদ ২১-এর অন্তর্গত হিসাবে পাঠ করার পর শ্রীকৃষ্ণ প্যানেল গঠিত হয়, এই অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে খসড়া আইন তৈরি করার জন্য। সেই খসড়া থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আলোচ্য বিলটি প্রস্তুত করে, যার কার্যত প্রতিটি ছত্র নিয়েই আপত্তি উঠেছে। বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে যায়, এবং বহুবিধ সংশোধনী ও সংযোজন সমেত গত ডিসেম্বরে যখন তা সংসদে পেশ হয়, বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণ মন্তব্য করেন যে, তা প্রবল ভাবে সরকারের অনুকূল, এবং এটি আইনে পরিণত হলে তা কার্যত ‘অরওয়েলীয় রাষ্ট্র’ তৈরি করবে। তার পরও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাজেট অধিবেশনেই তাঁরা আইনটি পাশ করিয়ে নেবেন। সরকার আচমকা সেই বিল প্রত্যাহার করল আরও সর্বাঙ্গীণ আইনি কাঠামো তৈরি করার কথা বলে। সেই কাঠামোটি নাগরিকের অধিকারের প্রতি সদয় হবে, অমৃত মহোৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণে এমন আশা করতে নাগরিকের সাহস হবে কি?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন