sonia gandhi

বিপদের চিহ্ন

মনে পড়বে, ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ফেসবুকের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৬:০৬
Share:

ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী সমাজমাধ্যমের একটি বিপদ চিহ্নিত করেছেন— অসাম্যের বিপদ। লোকসভায় তাঁর অভিযোগ, শাসকনির্দিষ্ট পথে চলেছে কিছু সমাজমাধ্যম, তাদের কর্মকাণ্ডে রাজনীতির সুষম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি বিনষ্ট হচ্ছে। এক দিকে, কেন্দ্রীয় শাসক দলের ‘প্রক্সি অ্যাডভারটাইজ়ার’ বা নকল বিজ্ঞাপনদাতার (যারা সংবাদমাধ্যমের মতো কাজ করলেও বস্তুত প্রচারক) ব্যাপারে সমাজমাধ্যমের পরিচালকেরা অন্ধ, অন্য দিকে বিজেপির জন্য বিজ্ঞাপনের মূল্য প্রধান বিরোধী দলের চেয়ে অনেক কম। দুইয়ের অশুভ আঁতাঁতের ফল ভুগছেন দেশবাসীও, সমাজ ভরে যাচ্ছে ভুয়ো তথ্যে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। কায়েমি স্বার্থে শাসকবর্গকে সুবিধা পাইয়ে দিতে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে এই সমাজমাধ্যমগুলি। আধুনিক সময়ে তাদের ভূমিকা সুবিপুল, তারা এখন সংবাদমাধ্যমের মতোই সমাজকে আলোড়িত করতে পারে, অতএব এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের প্রভাব কম নয়। তা দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্নও বটে।

Advertisement

মনে পড়বে, ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ফেসবুকের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই পক্ষপাতিত্বের বিচারার্থে সিইও মার্ক জ়াকারবার্গকে আমেরিকান কংগ্রেসে হাজিরাও দিতে হয়েছিল। সে বারের সওয়াল-জবাব পর্বই বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, রাজনৈতিক প্রচারমঞ্চ হিসাবে ফেসবুক একেবারেই নিরপেক্ষ নয়। গণতন্ত্রের পক্ষে বড় বিপদ। বুঝতে হয়, যে ভোট-কারচুপি বা ‘রিগিং’ রুখতে এত আয়োজন, সমাজমাধ্যম তাকে একটা নতুন মাত্রা দিয়ে ফেলেছে। সবচেয়ে শক্তিমান শাসক যদি প্রচারপর্বেই ঘুরপথে অনেকখানি সুবিধা পেয়ে যান, তবে লড়াই শুরুর আগেই দুর্বলেরা প্রতিযোগিতার পরিসর থেকে ছিটকে যায়। যে দল আকারে ছোট, অর্থবল কম, প্রভাবিত করার ক্ষমতা শূন্য, তাদের তো আর সমানে-সমানে নিজের কথাটুকু বলারও সুযোগ থাকে না! এ ভাবে কেবলমাত্র একদলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, এবং ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে বহুদলীয় গণতন্ত্র।

এখানে দায়িত্বের প্রশ্নটি অতি জরুরি। প্রশ্ন হল, সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি ব্যবসা নিশ্চয়ই করবে, মুনাফা অর্জন স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করবে না? সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার বড় কারণ তাদের দায়িত্ববোধ। সুস্থ সামাজিক গণ্ডির কথা মাথায় রেখে তাদের খবর পরিবেশন করতে হয়, ভুয়ো খবরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়ানো তাদের পক্ষে গর্হিত অপরাধ। সমাজমাধ্যমে যে হেতু নিয়মনীতির বালাই নেই, অতএব তারা সহজেই শাসকের প্রচারযন্ত্রে পর্যবসিত হচ্ছে। আক্ষেপের কথা, বহুদলীয় গণতন্ত্রে শাসক দলের ক্ষমতাপ্রতাপকে প্রশ্ন করা অবশিষ্ট দলগুলির কর্তব্য, কিন্তু সনিয়া গান্ধীরা অভিযোগ তুললেও এই প্রশ্নগুলি করছেন না। কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রকে যদি বাঁচাতে হয়, তবে এখনই দুই প্রকারের গণমাধ্যমের একীভূত নিয়মাবলির দাবি ছাড়া পথ নেই। গণতন্ত্র রক্ষিত না হলে সকলেরই বিপদ— শাসকনিয়ন্ত্রিত দলীয় সমাজ রাজনীতিকে বিকৃত করবে, বাজারেরও ক্ষতিসাধন করবে। সমগ্র ব্যবস্থারই প্রাণভ্রমরা একটি সুস্থ গণতন্ত্র।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন