National news

ক্রমশ সঙ্কীর্ণ করে আনা হচ্ছে সমাজ ও রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিটাকে

রাজনীতি বড় বালাই, এখন আর শুধু ভোটের মরসুমে নয়, বছরভরই হাওয়া গরম রাখতে চান রাজনৈতিক নেতারা। কুকথার স্রোত বহাল থাকে তাই ভোট মিটে গেলেও।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩১
Share:

বিয়ের দিন বিরাট কোহলি এবং অনুষ্কা শর্মা। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

কুকথার নানা স্রোত ভোটের মরসুমে এমনিতেই বাজার গরম করে রেখেছিল। গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশে ভোট এবং তার গণনা মিটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে অধিকাংশেরই ধারণা ছিল। কিন্তু রাজনীতি বড় বালাই, এখন আর শুধু ভোটের মরসুমে নয়, বছরভরই হাওয়া গরম রাখতে চান রাজনৈতিক নেতারা। কুকথার স্রোত বহাল থাকে তাই ভোট মিটে গেলেও।

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং বলিউড তারকা অনুষ্কা শর্মার বিয়ে নিয়ে নানা মহলে নানা কথাই চলছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক পান্নালাল শাক্য যে মন্তব্য করলেন বিরুষ্কা সম্পর্কে, তাতে বিতর্ক অন্যদিকে মোড় নিল। কেন ইতালির তাস্কানিতে, কেন ভারতের কোনও জায়গায় বিয়ে করলেন না বিরাট-অনুষ্কা? পান্নালাল শাক্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। দেশের প্রতি, ভারতীয়ত্বের প্রতি বিরাট-অনুষ্কার শ্রদ্ধা কতটুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইলেন যেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Advertisement

মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি বিধায়ক বিরাট কোহালি এবং অনুষ্কা শর্মা সম্পর্কে কী বললেন, মেগা-বিয়ে সম্পর্কে তিনি কী মতামত দিলেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় সে কথা ঠিক। কিন্তু যে ভাবে কথায় কথায় ভারতীয়ত্বের দোহাই দিয়ে যে কোনও নাগরিককে আক্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন, তার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্যকে অবজ্ঞা করা যাচ্ছে না। মন্ত্রী থেকে সাংসদ, বিধায়ক থেকে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী— কুকথায় পারদর্শী হয়ে উঠতে চাইছেন নানা স্তরের রাজনীতিকরা যে ভাবে, তার প্রেক্ষিতে পান্নালাল শাক্যের এই মন্তব্য বিশেষ উদ্বেগজনক। বিয়ে বা বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় হবে, কী ভাবে হবে, তা নির্ধারণ করা যে কোনও নাগরিকেরই ব্যক্তিগত অধিকার। নিতান্ত ব্যক্তিগত এই পরিসরেও যে ভাবে হানা দিতে চাইল রাজনীতি, তা বিশেষ উদ্বেগজনক। নাগরিক জীবনের যে কোনও ঘটনাকে জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেম বা ভারতীয়ত্বের আয়নায় দেখার চেষ্টা বেশ উদ্বেগজনক। নাগরিক জীবনকে দেশভক্তি এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের মোড়কে সর্বক্ষণের জন্য মুড়ে ফেলার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে যেন দেশজুড়ে। সমাজ এবং রাজনীতির নানা স্তর থেকে আক্রমণগুলো আসছে। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে সেই ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণু মানসিকতারই প্রতিফলন রয়েছে।

আরও পড়ুন : রাম, কৃষ্ণ ভারতে বিয়ে করেছেন, বিরুষ্কা নয় কেন? প্রশ্ন বিজেপি নেতার

সবেতেই দেশভক্তি, জাতীয়তাবাদ, ভারতীয়ত্ব, হিন্দুত্ব টেনে এনে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা দিনের পর দিন সঙ্কীর্ণ করে তুলছি না কি? এই সঙ্কীর্ণতার সাধনা ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির নানা স্তরে যে ভাবে চারিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত, তাতে বিবিধতাময় ভারতের কত বড় বিপদ লুকিয়ে রয়েছে, সে কি আমরা বুঝতে পারছি? যদি বুঝতে পারি, তা হলে এও স্পষ্ট যে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক কতখানি বিপজ্জনক মন্তব্য করেছেন। সমাজের এবং রাজনীতির প্রায় সব স্তর থেকে এই বিপদ উঁকি দিচ্ছে সম্প্রতি। এই বিপদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার দায়িত্ব সচেতন ভারতীয় নাগরিকদেরই। প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে তাই আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে আজ। উগ্র জাতীয়তাবাদ, ছদ্ম দেশভক্তি, ভণ্ড ভারতীয়ত্ব প্রতিটি পদক্ষেপে ফাঁদ পাতছে। সে ফাঁদে পা দিলে চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement