National news

অনাকাঙ্খিত, দায়িত্বজ্ঞানহীন, দুর্ভাগ্যজনক

জনপ্রতিনিধিকে জনাবেগের কথা খেয়াল রাখতে হয়— প্রকৃত গণতন্ত্রে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

জনপ্রতিনিধিকে জনাবেগের কথা খেয়াল রাখতে হয়— প্রকৃত গণতন্ত্রে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যখন আইন প্রণেতা, তখন আইনের শাসনকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়ার কথা সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা দরকার। কারণ সেই শপথ নিয়েই তিনি কাজ শুরু করেন।

Advertisement

জম্মু-কাশ্মীরে এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মন্তব্য গুরুতর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওয়াচি বিধানসভা ক্ষেত্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি তথা শাসক দল পিডিপি-র বিধায়ক বিধানসভায় দাঁড়িয়েই জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। জঙ্গিদের ‘ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন, ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়েছেন। বিধানসভার বাইরেও এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তিনি অবস্থানে অনড় থেকেছেন।

নিরাপত্তা বাহিনী গত কয়েক বছরে তৎপরতা বাড়িয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। জঙ্গিদের সঙ্গে বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা সংখ্যায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কম নয়। তবে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জঙ্গির মৃত্যুর সংখ্যাও আগের বেশ কয়েকটা বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির যে সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলিতে, তাদের অনেকেই পাকিস্তান থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী। বাকিরা কিন্তু ভারতীয়ই।

Advertisement

আরও পড়ুন: জঙ্গিরা আমাদের ভাই, তাঁরা শহিদ: মন্তব্য বিধায়কের, তীব্র বিতর্ক

সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, পিডিপি বিধায়ক এজাজ আহমেদ মির খুব ভুল বলেননি। মৃত জঙ্গিদের অনেকেই যে কাশ্মীরেরই সন্তান, সে কথা ঠিকই। কিন্তু সন্তান যে মাটিরই হোক, নাগরিক যে দেশেরই হোক, দুষ্কৃতী দিনের শেষে দুষ্কৃতীই। উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্রের ঔদ্ধত্যে আইনের শাসনকে অগ্রাহ্য করতে অভ্যস্ত যারা, সাংবিধানিক কাঠামোকে তথা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাকে প্রতি মুহূর্তে মাটিতে মিশিয়ে দিতে উদগ্রীব যারা, একের পর এক নাশকতার মাধ্যমে গণহত্যা চালায় যারা, তারা অবশ্যই দুষ্কৃতী।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

পিডিপি বিধায়ক এজাজ আহমেদ মির সম্ভবত উপত্যকাবাসীদের কোনও একটি অংশের আবেগে সওয়ার হতে চেয়েছেন। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার পক্ষে যাঁরা, তাঁরা জঙ্গিদের প্রতি প্রভূত সহানুভূতিশীল। নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা স্বাভাবিক কারণেই পছন্দ নয় তাঁদের। প্রত্যেক জঙ্গির মৃত্যু উপত্যকার ওই অংশের কাছে আঘাত। পিডিপি বিধায়ক ওই অংশের স্নায়ুর নাগালই পেতে চেয়েছেন সম্ভবত।

কোনও অজানা বাধ্যবাধকতা থেকে এজাজ আহমেদ মির এ ধরনের মন্তব্য করলেন, নাকি কোনও রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা থেকে, সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তা যে আদ্যন্ত অনাকাঙ্খিত এবং প্রবল ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ বিন্দুমাত্র নেই।

উপত্যকার সমস্যার সমাধান কোন পথে হবে, উপত্যকায় হিংসা কবে থামবে, উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা সর্বৈব গ্রহণযোগ্য কি না, এ সব বিষয়ে উপত্যকার জনপ্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট মতামত থাকতেই পারে, সে বিষয়ে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় বা ভারতীয় সংসদে আলোচনাও হতে পারে। কিন্তু সাংবিধানিক কর্তব্যকে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার শপথ নেওয়া কোনও ব্যক্তি যখন আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি ব্যক্ত করেন, তখন সংবিধানেরই অপমান হয়। এ কথা এজাজ আহমেদ মিরের মাথায় রাখা উচিত ছিল। জম্মু-কাশ্মীরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং আইনের শাসন বহাল রাখতে যে নিরাপত্তা বাহিনী নিরন্তর অতন্দ্র, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এ হেন মন্তব্য যে সেই নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলে ধাক্কা দিতে পারে, সে কথাও এজাজ আহমেদ মিরের মনে রাখা উচিত ছিল। ভারতীয় গণতন্ত্রের শরিক হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের প্রতিও কিন্তু তিনি দায়বদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন