Editorial News

ভোটের জন্য কি সাংবিধানিক মূল্যবোধও ভুলতে হবে?

শিক্ষায় এবং চাকরিতে অনন্তকালের জন্য সংরক্ষণ বহাল রাখা কোনও সরকারের নীতি হতে পারে কি? সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে সংরক্ষণ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসাই তো লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

যা অবধারিত ছিল, তাই হল। উচ্চবর্ণের আর্থিক অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। নীতিগত ভাবে ভারতের সংবিধান যে এরকম কোনও সংরক্ষণের অনুমতি দেয় না, তা দেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রকদের জানা ছিল না, এমন অবান্তর দাবি কেউই করছেন না। অতএব সংসদে যতই পাশ হোক সংরক্ষণ বিল, আদালতে যে বাধা তৈরি হবে, তা সরকার জানতই। তা সত্ত্বেও সংসদে এই সংরক্ষণ বিল পাশ করিয়ে সরকার কী প্রমাণ করতে চাইল? সরকারের কোন সদুদ্দেশ্য বা সদিচ্ছার প্রমাণ এতে মিলল?

Advertisement

ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ খুব জোড়ালো ভাবে দুটো প্রশ্ন তুলে দিল। প্রথম প্রশ্নটা সাংবিধানিক। দ্বিতীয় প্রশ্নটা রাজনৈতিক।

সাংবিধানিক প্রশ্নটা কী? প্রশ্নটা হল, ভারতের সংবিধানে কি উচ্চবর্ণের জন্য শিক্ষায় বা চাকরিতে সংরক্ষণের কোনও সংস্থান রয়েছে? এ দেশে ঐতিহাসিক ভাবে বঞ্চিত বা শোষিত যে সব শ্রেণি, সংরক্ষণের সংস্থান তো শুধু তাদের জন্য। সামাজিক বৈষম্য শতকের পর শতক ধরে অনগ্রসর থাকতে বাধ্য করেছিল যে সব শ্রেণিকে, সংরক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের এগিয়ে আনাই তো লক্ষ্য। অর্থাৎ ঐতিহাসিক ভাবে সামাজিক অনগ্রসরতাই সংরক্ষণ পাওয়ার মাপকাঠি। একটা বা কয়েকটা প্রজন্ম ধরে অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর থাকা সংরক্ষণ পাওয়ার যোগ্যতা তৈরি করে না। ভারতীয় সংবিধান অন্তত তেমনই বলছে। অতএব ভারত সরকারের এই সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে ভারতের বর্তমান শাসকদের সাংবিধানিক মূল্যবোধ নিয়েই।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এ বার আসা যাক রাজনৈতিক প্রশ্নটায়। শুধুমাত্র সংসদে বিল পাশ করালেই যে সংরক্ষণের এই নতুন বন্দোবস্ত চালু করা সম্ভব হবে না, তা সরকার তথা শাসকদল জানত। তা সত্ত্বেও কোনও পূর্বাভাস, কোনও আলোচনা, কোনও গৌরচন্দ্রিকা ছাড়াই আচমকা একদিন সরকার ঘোষণা করে দিল সংরক্ষণের নতুন প্রস্তাবনা। কোন সময়ে এল এই আচম্বিত ঘোষণা? এমন একটা সময়ে এল, যখন নির্বাচনী মহাযুদ্ধের দুন্দুভি বেজে উঠবে যে কোনও মুহূর্তে। সেই মহাযুদ্ধের দিকে তাকিয়েই কি এই বিল? সস্তায় ভোট কুড়নোর তাগিদেই কি এই বিল? অনেকেই তেমনটা মনে করছেন।

আরও পড়ুন: ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বিলে চ্যালেঞ্জ, সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা

প্রশ্ন আরও একটা রয়েছে। সেটা বৃহত্তর নীতিগত প্রশ্ন। শিক্ষায় এবং চাকরিতে অনন্তকালের জন্য সংরক্ষণ বহাল রাখা কোনও সরকারের নীতি হতে পারে কি? সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে সংরক্ষণ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসাই তো লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার বদলে সংরক্ষণের আরও নতুন নতুন পন্থা-পদ্ধতি খুঁজে বার করতে চাইছে সরকার! কাঙ্খিত বা প্রত্যাশিত পথের ঠিক উল্টো দিকে হাঁটা হচ্ছে না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন