প্রতীকী ছবি।
অতঃপর শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ভিন্ন অন্য কোনও কাজে স্কুলবাড়ি ভাড়া দিতে হইলে স্কুলশিক্ষা দফতরের অনুমতি লইতে হইবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষা দফতরের চালকরা উপলব্ধি করিয়াছেন, শিক্ষাবহির্ভূত কারণে স্কুলবাড়িকে ভাড়া দিবার যে প্রবণতা দেখা যাইতেছে তাহাতে বিদ্যালয়ের আসল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হইতেছে, পঠনপাঠনের পরিবেশও দূষিত হইতেছে। এ হেন উপলব্ধি এবং তৎসংক্রান্ত নির্দেশটির প্রত্যক্ষ চালিকাশক্তি হাওড়ার একটি শিক্ষায়তন। কিছু দিন পূর্বে বিদ্যালয়টিতে বৌভাতের আসর বসিয়াছিল। অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ এই অনুষ্ঠানে স্কুলবাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দিবার জন্য শিক্ষা দফতরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র লন নাই। স্কুলের পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তেই সেখানে এক কর্মীর পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। সরকারি দফতর ইহাতে বিস্তর চটিয়াছে। সরকারের অগোচরে একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধৃষ্টতা ঠেকাইতে কড়া নির্দেশও দিয়াছে।
বিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিচালন সমিতি থাকিতে অনুমতির জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের সরকারের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিবার কথা নহে। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের পরিবেশটি অক্ষুণ্ণ আছে কি না, তাহা দেখিবার প্রাথমিক দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন সমিতির। সরকারের কাজ একটি সাধারণ নির্দেশিকা জারি করা, যেখানে অন্যান্য বিষয়ের সহিত স্কুলবাড়ি ভাড়া দিবার নিয়মগুলি স্পষ্ট ভাবে লিখিত থাকিবে। ভাড়ার পরিমাণ, এবং কোন সময় ভাড়া দেওয়া যাইতে পারে, সেই বিষয়গুলিও নির্দিষ্ট থাকিবে। বিদ্যালয়গুলি সেই নির্দেশিকা পালন করিতেছে কি না সেই বিষয়ে নজরদারির ব্যবস্থাও থাকিবে। কিন্তু স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দৈনন্দিন হস্তক্ষেপ সরকারের কাজ নহে। অথচ ক্রমাগত তাহার বহু নজির এই রাজ্যে রচিত হইতেছে। বস্তুত, সন্দেহ হয়, এমন আচরণে হয়তো মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর ‘অর্থ সরকার দিতেছে, নিয়ন্ত্রণও সে-ই করিবে’ গোছের সুরটিই প্রতিফলিত। যে কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামোতেই এমন নিয়ন্ত্রণী প্রবণতা অস্বস্তিকর।
তবে একটি কথা অনস্বীকার্য। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন সমিতিগুলি প্রায়শই নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। ইহা এই রাজ্যে এক সাধারণ ব্যাধি। অনেক ক্ষেত্রেই তাহার সঙ্গে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের বিষয়টিও যুক্ত থাকে। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক লক্ষ্য যে শিক্ষাদান, ব্যবসায়িক লাভ নহে— কথাটি মনে রাখিবার দায়িত্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। যেমন, বিদ্যালয় চত্বরকে এমন কোনও কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাইবে না, যাহাতে লক্ষ্যটি গৌণ হইয়া পড়ে। নিশ্চিত করিতে হইবে, শিক্ষা-বহির্ভূত কাজে বিদ্যালয় ভাড়া দিবার প্রক্রিয়াটি যাহাতে একমাত্র ছুটির সময়ই চলিতে পারে শিক্ষাদানের সময়টিকে ব্যাহত না করিয়া। অনুষ্ঠান-শেষে বিদ্যালয়ের ঘরগুলিতে যাহাতে পুনরায় পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ ফিরিয়া আসে, দেখিতে হইবে তাহাও। বস্তুত, সরকার পোষিত স্কুলগুলির আর্থিক দুরবস্থার কিছুটা সুরাহা করিতেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ভাড়া দিবার সূত্রপাত। কিন্তু ভাড়া বাবদ সেই অর্থের পরিমাণ যাহাতে সরকার নির্দেশিত পরিমাণকে ছাপাইয়া না যায়, তাহা নিশ্চিত করিবার দায়িত্বটিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই। কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন সমিতি নিজ দায়িত্ব পালন করিলে সরকারি অনুপ্রবেশের সুযোগ কমিবে।