Coronavirus

কঠোর শাস্তি চাই

ঘটনা হইল, শুধু অ্যাম্বুল্যান্স চালক বা কতিপয় ঔষধ ব্যবসায়ী নহেন, আরও অনেকেই পরিস্থিতির সুযোগ লইয়া অন্যায্য লাভ করিতে উদ্‌গ্রীব। বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিতেছে যে তাহারা অন্যায্য ভাবে বিপুল অঙ্কের বিল করিতেছে— কখনও পিপিই-র হিসাবে গরমিল, কখনও আকাশছোঁয়া খাবারের দাম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০০:১৪
Share:

হাহাকার ক্রমেই বাড়িতেছে। এই কোভিড-বিধ্বস্ত সময়ে চিকিৎসা লাভ দূরস্থান, চিকিৎসার বন্দোবস্ত করাই বহু মানুষের পক্ষে দুষ্কর হইয়া উঠিতেছে। দুই শিশু রোগীকে পার্ক সার্কাস হইতে কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছাইবার জন্য ৯০০০ টাকা দাবি করিয়াছিল একটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, অন্যথায় পরিষেবা দিতে অস্বীকার করে। শেষাবধি অপর একটি অ্যাম্বুল্যান্সের সহিত ৪৫০০ টাকায় রফা হয় রোগীর অভিভাবকদের। দিন কয়েক পূর্বে হায়দরাবাদ শহরেও বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার অবিশ্বাস্য খরচ লইয়া বহু অভিযোগ শোনা যাইতেছিল। অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা পরিস্থিতির সুযোগ লইতেছেন— তাঁহারা জানেন, শহরের রাস্তায় যথেষ্ট অ্যাম্বুল্যান্স নাই। আবার, অ্যাম্বুল্যান্স না হইলে রোগীর পরিজনদেরও চলিবে না। ফলে, তাঁহারা কার্যত যে কোনও অঙ্কের টাকা কবুল করিয়াও বিপন্ন প্রিয়জনকে হাসপাতালে পৌঁছাইয়া দিতে চাহিবেন। সম্প্রতি খবর মিলিল, কিছু ঔষধ ব্যবসায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে একই কাজ করিতেছেন— সাত-আট শত টাকা দামের সিলিন্ডারের জন্য দাবি করিতেছেন দশ হাজার টাকারও অধিক।

Advertisement

যাঁহারা এই কালোবাজারি করিতেছেন, তাঁহারা অপরাধী। তাঁহাদের অপরাধ মানবিকতার বিরুদ্ধে। বিপন্ন মানুষকে ন্যায্যের অধিক অর্থ দিতে বাধ্য করা অতি গুরুতর অপরাধ। তাঁহাদের কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যাহা অন্যদেরও ভীত করিবে— আর কেহ এই অপরাধ করিবার পূর্বে দশ বার ভাবিতে বাধ্য হইবেন। অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা বেসরকারি, ইহা কোনও যুক্তিই হইতে পারে না। সরকারি অনুমতি ব্যতীত কোনও গাড়িই রাস্তায় চলে না, অ্যাম্বুল্যান্স তো নহেই। রোগী পরিবহণের ক্ষেত্রে অধিকতর অর্থ দাবি করা অ্যাম্বুল্যান্সের ছাড়পত্র বাতিল করা, চালকের লাইসেন্স কাড়িয়া লওয়া— অনেক ব্যবস্থাই সম্ভব। প্রশাসনকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। একই সঙ্গে সচেতনতার ব্যবস্থাও করিতে হইবে— কোনও পরিস্থিতিতেই যে অন্যায় অর্থ দাবি করা চলে না, তাহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এই কথাটি বারে বারে ঘোষণা করিতে হইবে। নাগরিক পরিষেবায় বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা থাকিবেনই। তাঁহাদের নিয়ন্ত্রণ করা, আইন মানিতে বাধ্য করা প্রশাসনের কাজ।

ঘটনা হইল, শুধু অ্যাম্বুল্যান্স চালক বা কতিপয় ঔষধ ব্যবসায়ী নহেন, আরও অনেকেই পরিস্থিতির সুযোগ লইয়া অন্যায্য লাভ করিতে উদ্‌গ্রীব। বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিতেছে যে তাহারা অন্যায্য ভাবে বিপুল অঙ্কের বিল করিতেছে— কখনও পিপিই-র হিসাবে গরমিল, কখনও আকাশছোঁয়া খাবারের দাম। কোথাও আবার থোক টাকা জমা না করিলে চিকিৎসা মিলিতেছে না বলিয়া অভিযোগ। নৈতিকতার এই অবক্ষয় দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ইহাই যখন বাস্তব, তখন প্রশাসনকে সম্যক ব্যবস্থাও করিতে হইবে। এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত না করিয়াও কী ভাবে এই অনিয়মগুলি বন্ধ করা যায়, সেই পথ সন্ধান করিতে হইবে। সেই দায়িত্ব পালিত হওয়ার উপরই রাজ্যের মানুষের কল্যাণ নির্ভরশীল। দুষ্ট ব্যবসায়ীদের লোভ হইতে বিপন্ন নাগরিককে রক্ষা করা প্রশাসনের অনস্বীকার্য কর্তব্য।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন