এ বার পুজোয় পুরনো আনন্দবাজারের পাতা থেকে স্বর্ণসন্ধান

বাঙালির পুজোর গান যেন গানের পুজো

পুজো তো চার দিনের, সেই চার দিনকে ঘিরে মাসখানেকের এক উৎসবের মেজাজ। কিন্তু পুজোর গানের প্রস্তুতি রেকর্ড কোম্পানিতে চলে প্রায় সারা বছর। শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, রেকর্ড কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শ, পরিকল্পনা, গবেষণা।

Advertisement

বিমান ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

মেলবন্ধন: ১৯৮৫। পণ্ডিত রবিশঙ্কর তৈরি করছেন পুজোর গান। গাইছেন হৈমন্তী শুক্লা। ছবি: তপন দাশ

পুজোর গান। পূজার গান নয় কিন্তু। আরাধনার গান, উপাসনার গান, ব্রহ্মসঙ্গীত ইত্যাদি সাধারণ অর্থে পূজার গান। পূজা পর্যায়ের গান। আর ‘পুজোর গান’ হল শারদোৎসবে বাঙালির মন রঙিন-করা, স্মৃতি উদ্বেল-করা রেকর্ড সংগীত। এ সময়ে গান ছাড়াও প্রকাশিত হয় রেকর্ডবদ্ধ নাটক, নাটিকা, কৌতুক নকশা, আবৃত্তি। নতুন জামা, নতুন জুতো, নতুন শাড়ি-ব্লাউজের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির চাই নতুন গান তার হৃদয় ভরানোর জন্য।

Advertisement

পুজো তো চার দিনের, সেই চার দিনকে ঘিরে মাসখানেকের এক উৎসবের মেজাজ। কিন্তু পুজোর গানের প্রস্তুতি রেকর্ড কোম্পানিতে চলে প্রায় সারা বছর। শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, রেকর্ড কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শ, পরিকল্পনা, গবেষণা।

উৎসবের দিনগুলো রেকর্ড কোম্পানির কাছে ব্যবসার মরশুমও বটে। শ্রোতাদের চাহিদা, রুচি পরিবর্তন, সুরের ফ্যাশন, বাণীর বৈচিত্র— এ সব নিয়ে ক্রমান্বয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার একটাই লক্ষ্য— কী করে একটা ‘হিট’ গান সৃষ্টি করা যায়? আর হিট গান সৃষ্টি নিয়েই যত প্রতিযোগিতা ছোট-বড় রেকর্ড কোম্পানির মধ্যে। জহুরির জহর চেনার মতো হিট গান শনাক্ত করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রেকর্ডের ডিলারদের, যাঁদের হাত দিয়ে রেকর্ড পৌঁছে যায় জনগণের হাতে হাতে। শ্রোতার সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক ঘটে এই মধ্যবর্তী বিক্রেতাদের মাধ্যমে। পুজোর গানে আর্টের সঙ্গে ট্রেড বা ব্যবসায়ের কতখানি মেলবন্ধন হল, সেই মর্মের যোগ্য বিবেচক পাওয়া যাবে এই ডিলারদের মধ্যে। একটা সময় ছিল যখন বড় বড় গুণী গায়কদের চমৎকার সমাবেশ হত ডিলারদের আখড়ায়।

Advertisement

এ বছরের কিছু অভিনব আয়োজনের কথা পেড়ে পুজোর গানের অন্দরমহলে ঢোকা যাক। নতুন হিট গান বানানোর চেষ্টায় ‘অভিনবত্ব’ ব্যাপারটা দিন-দিন খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। মেগাফোন কোম্পানি এ বার পুজোয় গান গাওয়াচ্ছেন বোম্বাই ফিল্মের গ্ল্যামার-নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীকে দিয়ে। এই রচনার সময় অবধি অনিশ্চিত কিশোরকুমারের পুজোর গান। লতা মঙ্গেশকর সবে ফিরলেন বিদেশ থেকে। আশা ভোঁসলেও কি শেষ পর্যন্ত রেকর্ড করবেন রাহুল দেববর্মনের সুরে আর পাঁচটা বছরের মতো? এখনও সঠিক জানি না। এঁদের নাম করলাম কারণ বোম্বাইনিবাসী এই সব ভারতবিখ্যাত মানুষগুলি পশ্চিমবঙ্গের শারদীয় উৎসবের সঙ্গে প্রায় একাত্ম হয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন:ফুর্তিরূপেণ সংস্থিতা

তবে গ্রামোফোন কোম্পানির ঝুলিতে এ বার একটা চমকপ্রদ উপহার আছে। তা হল, উস্তাদ আলি আকবর খাঁ ও পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুরে হৈমন্তী শুক্লার একটি আধুনিক বাংলা গানের লং-প্লেইং রেকর্ড। বাণী পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, দুটি গানের কথা আবার রবিশঙ্করের। ঘটনাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আধুনিক বাংলা গানকে ফের জনপ্রিয় করে তুলতে বিশ্ববিখ্যাত ও অতিব্যস্ত দু’জন উচ্চাঙ্গ শিল্পী ফের আগ্রহী হলেন। আলি আকবর ও রবিশঙ্কর দু’জনেই গানে সুর দিতে ভালবাসেন এবং এক কালে খুব সুন্দর সুন্দর গানও তাঁরা তৈরি করেছেন। লতা গেয়েছেন আলি আকবরের সুরে, আর বহু দিন আগে আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া ও আলি আকবরের সুর করা একটা গান তো অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল।

পুজোর গান নিয়ে মাতামাতি সে-কালে কেমন ছিল? এ-কালের ঘটনা তো দেখতে পাচ্ছি স্বচক্ষে, গানও শুনছি, সমালোচনাও শুনছি স্বকর্ণে। আজকাল তো রেকর্ড বেরলেই পত্রপত্রিকায় মতামতও প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু সে-কালের রেকর্ড সংগীতের কোনও ইতিহাস নেই। সে-কালের পুজোর গানের বইও আজ দুষ্প্রাপ্য। সে-কালের শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, যন্ত্রীদের কাছে যে-সব বৃত্তান্ত শোনা যায়, তা আজ শোনায় অনেকটা রূপকথার মতো। আমার ইস্কুল-কলেজের জীবনে পুজোর গান নিয়ে চায়ের দোকান, বাড়ির রোয়াকে যে ধরনের উত্তপ্ত আলোচনা ও আড্ডা জমত তা আজ আর নেই। গান আর শিল্পীদের কী দারুণ জমাটি আড্ডা সে সময়!

মাত্র দশ-এগারো বছর আগের ঘটনাও বেশ রোমাঞ্চকর। কিশোরকুমারের পুজোর গানের সুর করলেন লতা মঙ্গেশকর। আর লতার গানের সুর? কিশোরকুমার! আর একটু পিছনে গিয়ে ১৯৪১ সালের পুজো মরশুমে পৌঁছই। সে বার গিরীন চক্রবর্তীর পুজোর গান ছিল কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতাটিকে সুরারোপিত করে। বড় কবিতায় সুর দেওয়ার রীতি তখনও ছিল। কবিতার সুর সংযোজনা করলেন গিরীনবাবু নিজেই। কাজী নজরুল তার আগেই স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছিলেন ওই কবিতাটির আবৃত্তি।

পুজোর গান তো ইদানীং লতা মঙ্গেশকর ছাড়া ভাবাই কঠিন। শিল্পী ব্যস্ত, প্রতি বছর সম্ভব হয় না রেকর্ড করা। তাঁর সমস্ত পুজোর গানই জনপ্রিয়, তবে সলিল চৌধুরীর সুরে ওঁর গাওয়া ‘না যেও না’, ‘সাত ভাই চম্পা’ যেন কোনও দিনও পুরনো হবার নয়। যত দূর মনে পড়ে, লতার প্রথম পুজোর গান ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’ ও ‘মনে রেখো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। বাণী রচনা করেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। তার আগেও বাংলা গান রেকর্ড করেছিলেন লতা— ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে’। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে। কিন্তু সে গান পুজোর সময় প্রকাশিত হয়নি। শিল্পীর প্রথম বাংলা গানের রেকর্ড অবশ্য রবীন্দ্রসংগীতের; হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে জনপ্রিয় সেই দুটি নিবেদন— ‘মধু গন্ধে ভরা’ ও ‘তোমার হল শুরু’। এ গান দুটিও পুজোর গান নয়।

পুজোয় বাঙালিকে মাতিয়ে রাখেন কিশোরকুমার। কিশোরের সেই সব গান কে ভুলতে পারে? ‘এক দিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ কিংবা ‘নয়ন সরসী কেন’। কথা মুকুল দত্ত, সুর রাহুল দেববর্মণ ও কিশোর স্বয়ং। কিশোরের কোনও কোনও গানে পাশ্চাত্য-প্রভাব থাকলেও ওঁর সহজ সুন্দর অভিব্যক্তি শ্রোতাকে বশ করে।

পুজোয় বাঙালি শুনতে চায় আশা ভোঁসলেকে, কারণ তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন ‘ফুলে গন্ধ নেই’, ‘কথা দিয়ে এলে না’, ‘কিনে দে রেশমি চুড়ি’র মতো গান। ওঁর গানের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পেয়ে যাই রাহুলের মনোহারী সব সুর।

এক কালে বাঙালিকে মাতিয়ে রাখতেন অন্ধ গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে, আর বিগত বহু বছর ধরে সেই পারিবারিক দায়িত্ব সম্পাদন করে যাচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র, প্রতিভাধর গায়ক মান্না দে। তিনি বহুদিন থেকেই বম্বে নিবাসী। পুজোয় রেকর্ডের জন্য তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন বছরের গোড়া থেকে। জনপ্রিয় তো তিনি আছেনই, আর সেই জনপ্রিয়তাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে তাঁর চেষ্টায় অন্ত নেই। গান নির্বাচনের সময় শ্রোতার রুচির প্রতি ভয়ানক সজাগ মান্না দে। তাঁর বিশেষ পছন্দ রোমান্টিক ধাঁচ, বিশেষ করে পুজোর গানের জন্য। ওঁর গাওয়া ‘ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে’, ‘ললিতা ওকে আজ চলে যেতে বল না’, ‘আমায় আকাশ বলল’, ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’ এখনও শ্রোতার স্মৃতিতে অক্ষয়। পুজোর রোম্যান্টিক গান করার অভিলাষী মান্নাকে অনেক অনুরোধ-উপরোধে রাজি করানো গিয়েছিল ১৯৭৭-এর পুজোতে দ্বিজেন্দ্রসংগীত রেকর্ড করানোয়। সে ভাবে আমরা পেয়েছিলাম ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’, ‘ঘন তমসাবৃত অম্বর ধরণী’ ইত্যাদি গান। সেই সঙ্গে জলধর চট্টোপাধ্যায়ের ‘স্বপন যদি মধুর এমন’ আর হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘অন্ধকারের অন্তরেতে’। চারটি গানই বাংলা রঙ্গমঞ্চের সুবর্ণযুগের গান। কৃষ্ণচন্দ্রের স্মৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এই গানগুলি, যে কারণে মান্নার এত দ্বিধা ছিল সেগুলির পরিবেশনায়।

এই একই বছরে— ১৯৭৭— পুজোর গানের মহলে বিশাল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল একটি ইপি রেকর্ড। সে বছর বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গাইতে এসে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিলেন রুণা লায়লা। ইপি ডিস্কটি তাঁর। ইনডোর স্টেডিয়ামে রুণার প্রোগ্রামের পর শহর তোলপাড়, সবাই চাইছে তাঁর আরও প্রোগ্রাম, আরও গান। অতএব অবধারিত ভাবে আমরাও চাইলাম তাঁর করা একটি ডিস্ক। আমাদের রেকর্ডিং বিভাগের এক কর্তাব্যক্তি যোগাযোগ করলেন রুণার সঙ্গে দমদম স্টুডিয়োতে, কিন্তু রুণা কিছুতেই রাজি নন। আমাদের লোকটিও নাছোড়বান্দা। অবশেষে রাজি হতেই হল গায়িকাকে এবং আমরা পেলাম চারটি অনবদ্য গান। যার মধ্যে ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ অচিরে ঘুরতে লাগল জনগণের ঠোঁটে ঠোঁটে।

পুজোর গানকে এক কল্পলোকে উত্তীর্ণ করেছেন যে দু’জন বাঙালি তাঁদের এক জন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, অপর জন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাঙালির হৃদয়াসনে এঁদের চিরকালীন অবস্থান। হেমন্ত যখনই কোনও গান গেয়েছেন, তাতে হৃদয়ের পূর্ণ দরদ, মস্তিষ্কের পূর্ণ দ্যুতি মিশ্রিত করেছেন। প্রেমের কবিতার মতো উচ্চারণ করে গেছেন তাঁর গানগুলি। কী সুর, কী কথা, সর্বত্রই সতর্ক নজর হেমন্তর। ওঁর গানের যাত্রা শুরু সেই সুদূর ১৯৩৭-এ এবং সেই থেকেই ফি বছর কিছু কিছু আধুনিক, রবীন্দ্রসংগীত, (এমনকি এক বার একটি ভাটিয়ালিও) উপহার দিয়ে এসেছেন আমাদের। ১৯৪৩ সালে ওঁর ‘সেদিন নিশীথে’ ও ‘জানি জানি এক দিন’ সম্ভবত ওঁর প্রথম পুজোর গান। ১৯৪৮-এর পুজোর গান ছিল হেমন্তর ‘শুকনো শাখার পাতা’ এবং ‘প্রিয়ার প্রেমের লিপি’, যা কোনও দিন বাঙালির স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। আজও শুনলে মনে হয় অপূর্ব। তাতে হীরেন বসুর কথা আর অনুপম ঘটকের সুর। এর পর তো ১৯৫১ সালের পুজোর গান হিসেবে আবির্ভাব ‘রানার’-এর। সুকান্ত-সলিল-হেমন্তর কালজয়ী সৃষ্টি। তার আগে ১৯৪৯ সাল থেকে রেকর্ডের মাধ্যমে শ্রোতাদের পরিচয় ‘গাঁয়ের বধূ’-র সঙ্গে। ১৯৫২-য় ফের শোনা গেল ‘পাল্কি চলে’। কথা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের, সুর, বলাই বাহুল্য, সলিলের। এর পর পুজোর গানে হেমন্ত-সলিল জুটি একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পুজোর গান ১৯৪৮ সালে। ‘কার বাঁশি বাজে’ আর ‘কেন তুমি চলে যাও গো’। দুটি গানই পবিত্র মিত্রর লেখা এবং সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে। যত দূর জানি শিল্পীর প্রথম গানের রেকর্ড ১৯৪৫-এ। ১৯৫০ সালে কমল ঘোষের কথায় আর রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘ওগো মোর গীতিময়’ দারুণ সাড়া জাগায়। আর ১৯৫৩-র পুজোতে যে দুটি গান গাইলেন সন্ধ্যা, তা এক কথায় ঐতিহাসিক, বাংলা আধুনিক গানের দুটি হিরের টুকরো। প্রথম গান কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের কথায় ও সলিল চৌধুরীর সুরে অবিস্মরণীয় ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’। আর দ্বিতীয়টি সলিলেরই কথায় ও সুরে ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’।

পুজোয় ইদানীং পুরনো গানের খুব চল। তার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য অসাধারণ উস্তাদি গাইয়ে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের। পুরনো গানে দিনকে দিন বশ করে ফেলেছেন আপামর বাঙালিকে। পুজোর অসাধারণ সব গান গেয়েছেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর প্রতিভাধর ভাই পান্নালাল। পুজোর পরিবেশের সঙ্গে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, উৎপলা সেন, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইলা বসু, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় প্রমুখের আধুনিক এমন মিলেমিশে থাকত যে ওই গান রেডিয়োর ‘অনুরোধের আসর’-এ বেজে যেন দেবীর আবাহন করত। সতীনাথ, মানবেন্দ্র, শ্যামলের সেই সব রোম্যাান্টিক বাংলা গান আজও সেই প্রথম দিনের মতো নতুন।

পুজোকে একটা ভিন্ন স্বাদ দিয়েছে ভূপেন হাজারিকার গানও, যা সারা বছরের উপযোগী এবং বরাবরের মতো সংরক্ষণযোগ্য। পুজোয় চাহিদা আছে অনুপ ঘোষালের, যিনি নানান রকম গান গেয়ে পুজোকে জমজমাট রাখেন। এবং পুজোর আরতি ছাড়া যেমন পুজো অসম্পূর্ণ, তেমনই আরতি মুখোপাধ্যায়ের গান ব্যতীত বাঙালির পূজো পূর্ণ নয়। আর এই এক শিল্পী—আরতি মুখোপাধ্যায়। কী কণ্ঠ। কী সুর। আর কত রকম যে গাইতে পারেন। বাঙালির খুব প্রিয় গায়িকা তিনি।

স্বল্প পরিসর, বহু কথাই বলা হল না। অনেক শিল্পীর নামও হয়তো করতে পারলাম না। তাঁদের কেউ ছোট নয়, কেউ ভোলার নয়। তাঁদের সবারই অবদান আছে পুজোকে সার্থক করে তোলায় গানে গানে। আমরা শুধু তাঁদের কাছে ঋণীই থেকে গেলাম, বিনিময়ে দিতে পেরেছি শুধু ভালবাসা। আর তাঁরা আশীর্বাদ পেয়েছেন স্বয়ং মা দুর্গার।

প্রথম প্রকাশ: ‘পুজোর গান’ শিরোনামে, পুজো ক্রোড়পত্র, ১৯৮৫। সংক্ষেপিত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন