Corona

বিশ্বাসে মিলায়

কাহার প্রতিষেধক কত দূর কার্যকর হইবে, উহা ভবিষ্যতের ব্যাপার, কিন্তু অধিক বিত্ত ও সম্পদঋদ্ধ দেশ হইয়াও চিনের কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তাহার বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০১:১৫
Share:

যে দুই ভারতীয় প্রতিষেধক লইয়া বাজার উত্তপ্ত, তাহা কেবল জনতার রক্ষাকবচ নহে, রাষ্ট্রের আয়ুধও বটে। ইদানীং সিএএ বিতর্কে বাংলাদেশিরা ‘উইপোকা’ আখ্যা পাইয়াছেন, নেপাল আপন মানচিত্রে ভারতের কিয়দংশ জুড়িয়া লইয়াছে, পাকিস্তানের সহিত বাক্যালাপ নাই, চিনের সহিত সংঘাতে বিরাম নাই। অর্থাৎ, দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহৎ শক্তি হইবার সকল পথ বন্ধ। এমতাবস্থায় প্রতিষেধকের আবির্ভাব যেন আশীর্বাদ— বিদেশনীতি গুছাইয়া লইবার অভূতপূর্ব সুযোগ। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, দক্ষিণ এশিয়ায় নয়টি প্রতিবেশী ও মিত্র দেশের জন্য এক কোটি ডোজ় প্রস্তুত করিতেছে ভারত। অতএব কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড কেবল দেশবাসীর সম্মুখে নহে, সমগ্র ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলেই তেরঙার গৌরব বর্ধন করিতে পারে, আশা এমনই। বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান আর পূর্বের ন্যায় পাকাপোক্ত নহে। স্খলন ঠেকাইতে এই হাতিয়ারকে খড়কুটার ন্যায় আঁকড়াইয়া ধরাই নীতি হইতে পারে।

Advertisement

এই নূতন নীতি-পথের কাঁটা চিন। বস্তুত, দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবক্ষেত্রে দুই বৃহৎ শক্তির টক্কর চলে প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও। ভারত অপেক্ষা চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অধিক। দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশে প্রতিষেধক প্রয়োগ করিয়া তাহারা জল মাপিবে, বিশ্বের অপরাপর প্রান্তে ছড়াইবার জন্য। পশ্চিম এশিয়া হইতে দক্ষিণ আমেরিকা— একাধিক রাষ্ট্রে সাইনোভ্যাক ও সাইনোফার্ম প্রি-অর্ডার হইয়াছে; যদিও ফাইজ়ার ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার তুলনায় সেই সংখ্যা নগণ্য। যে হেতু বিদেশনীতির হিসাবেই সব কিছু ঘটিতেছে, বিশ্ববাসীকে সুস্বাস্থ্য প্রদানের প্রতিযোগিতাটিও তাই বহুমুখী। ভারতের সহায় ট্র্যাক রেকর্ড। বিগত কয়েক দশক ধরিয়া মাঝারি ও স্বল্প রোজগারের দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রতিষেধক সরবরাহ করিতেছে ভারত। চিনের সেই ঐতিহ্য নাই, তদুপরি তাহাদের প্রতিষেধক-শিল্প বহু বিতর্কে জর্জরিত। সুতরাং, সার্স বা ইবোলার ন্যায় বিগত অতিমারিগুলিতে বিজ্ঞান-কূটনীতির পরিসরে গরহাজির থাকিয়াও এই বার চিন অপেক্ষা কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে ভারত। বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে।

শেষাবধি প্রশ্নটি গণতন্ত্রের। কাহার প্রতিষেধক কত দূর কার্যকর হইবে, উহা ভবিষ্যতের ব্যাপার, কিন্তু অধিক বিত্ত ও সম্পদঋদ্ধ দেশ হইয়াও চিনের কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তাহার বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব আছে। যে রাষ্ট্রে দ্বিতীয় ধনীতম শিল্পপতি আচম্বিতে গায়েব হইয়া যাইতে পারেন, সেই ব্যবস্থার ক্রিয়াকলাপ আক্ষরিক অর্থেই দেবা ন জানন্তি। এযাবৎ কাল ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে কাজ করা অসম্ভব ছিল না; ইহাই ছিল সবলতার জায়গা, তৎসূত্রে বিশ্বাসেরও। আক্ষেপের কথা, ভারত যে ভাবে স্বধর্ম হইতে চ্যুত হইতেছে, তাহাতে এই দেশের পক্ষেও চিন-সদৃশ কলঙ্ক হইতে মুক্ত থাকা সম্ভব হইতেছে না। প্রতিষেধকের বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া দেশের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন ভাসিয়া বেড়াইতেছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়া— কী ঘটিতেছে তাহা যেখানে জ্ঞাত হওয়া সম্ভব— গণতন্ত্রের পক্ষে অপরিহার্য। কেবল বিজ্ঞানের হিসাবে ভাবিলে হয়তো চিন-ভারত দ্বন্দ্বের তর্ক বহু দূর গড়াইবে। কিন্তু এক্ষণে গণতন্ত্রের হিসাবে বিশ্বের নিকট বিশ্বাসই প্রধান। উহাই প্রতিষেধক মিলাইতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন