হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নূতন বন্দোবস্ত হইল: ছাত্রদের ‘সততার প্রতিজ্ঞা’ করিতে হইবে। অর্থাৎ, শপথ লইতে হইবে: তাহারা পরীক্ষায় বা অন্যান্য কোর্স-কর্মে, সতীর্থের লেখা দেখিয়া টুকিবে না, কোনও প্রকাশিত নিবন্ধ বা গ্রন্থ বা ইন্টারনেটে লভ্য রচনা দেখিয়াও লিখিবে না। আদতে ইহা মৌলিকতায় স্থিত থাকিবার প্রতিজ্ঞা। ফাঁকিবাজি দ্বারা মহৎ কর্ম সারিবার প্রবণতাকে অস্বীকারের প্রতিজ্ঞা। কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু এই মর্মে অঙ্গীকার তো অলিখিত বা অব্যক্ত ভাবে যে কোনও বিদ্যায়তনের নীতি ও আদর্শগুলির মধ্যে স্বতঃই নিহিত। অ্যাসেম্বলি হল-এ দৈনিক প্রার্থনায় ক্ষুদ্রতা অতিক্রম করিবার বার্তা থাকে, ডায়েরিতে বিশাল অক্ষরে মনীষীর বাণী ছাত্রকে পবিত্র হইয়া উঠিতে প্রাণিত করে। তাহা বলিয়া কি বাস্তবে সেই আদর্শ-লঙ্ঘন কিছুমাত্র কম ঘটে? আদালতে কি ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করিয়া সত্য বলিবার প্রতিজ্ঞা সকলকে সত্য বলিতে বাধ্য করে? হার্ভার্ড বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাহার গুণমানের সহিত পাড়ার বিদ্যালয়টির তুলনা চলে না, কিন্তু ফাঁকিবাজির প্রবণতা এমনই সর্বজনীন ও সর্বাত্মক, ফুটপাথের পাঠশালা হইতে সর্বোচ্চ থিসিসে তাহা জ্বলজ্বল করিতেছে। আজ যে কোনও ছাত্র হোমওয়ার্ক করিতে বসিলে, বিষয়টিকে গুগ্ল সার্চ দিয়া লেখাগুলি পড়িয়া লয়, উইকিপিডিয়া হইতে বেশ কিছু অংশ নিজ খাতায় হুবহু বসাইয়া দেয়, অন্যান্য সাইট বা ব্লগ হইতে খাবলা মারিয়া বাকিটা পূরণ করিয়া লয়। পূর্বেও সাধারণ ছাত্রগণ মানেবই ফেলিয়া নিজের মস্তিষ্ক হাতড়াইবার অভ্যাস আয়ত্ত করে নাই, এখন আন্তর্জালে সাহায্য অতি সুলভ হইয়া কাজ সহজতর, নীতি শিথিলতর করিয়াছে।
কেহ নিজে না ভাবিয়া অন্যের ভাবনা ধার লইলে তাহাকে সহজতার দোষে দোষী করা চলে, কিন্তু সৎ ভাবে প্রশ্ন করিলে, সম্পূর্ণ মৌলিক ভাবনা কোন ক্ষেত্রেই বা ভাবা হইতেছে? পৃথিবীর ভাবুকতা, বিদ্যাচর্চা, শিল্পরচনার ইতিহাস এমন বিপুল ও বিচিত্র, এত দিন ধরিয়া এত অসামান্য প্রতিভাবান ব্যক্তি এই ধারাগুলিকে পুষ্ট করিয়াছেন, আজ আনকোরা নূতন একটি ভাবনা লইয়া বিশ্বের দরবারে উপস্থিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। শুনিলে মনে হয় ইহা আলস্য বা অক্ষমতা ঢাকিবার অজুহাত, কিন্তু এই কথা স্পষ্ট: পিকাসোর কালে আঁকিবার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আঙ্গিক আবিষ্কার যতটা কঠিন ছিল, আজ তাহার তুলনায় বহু গুণ কঠিন, কারণ পিকাসোকে তো আর পিকাসোর প্রভাব এড়াইবার সংগ্রাম করিতে হয় নাই। এখন পূর্বের চিন্তাগুলিকে লইয়া নাড়াঘাঁটা চলিতেছে, অন্য বিশ্লেষণের প্রয়াস ঘটিতেছে, কিন্তু সম্পূর্ণ নূতন কিছু ভাবিতে গেলেই, তাহা অবধারিত ভাবে বিশ্বের কোনও না কোনও প্রান্তে কাহারও না কাহারও পূর্ব-ভাবনার সহিত মিলিয়া যাইতেছে। তাই আধুনিক পৃথিবীতে, মৌলিকতার বাই হয়তো কুসংস্কার। মৌলিকতার অভাব হয়তো দীনতা নহে, স্বাভাবিক বাধ্যতা। কোনও একটি রচনা এখন লেখকের অধীত নানা রচনায় প্রকাশিত ভাবনার একটি সংশ্লেষ বলা যাইতে পারে। সেইটি ভাল হইলেই তাঁহার যুক্তি বুদ্ধি মেধার প্রশংসা ঘটে, তিনি নূতন করিয়া কোনও অংশের উপর হইতে আলো সরাইয়া যদি অন্য অংশের উপর ফেলেন, সেই ক্ষমতা আদর পায়। ইহার অর্থ এই নয় যে টোকাটুকি ছাত্রের শিক্ষাগত অধিকার, কিন্তু যদি বলা হয় উইকিপিডিয়া হইতে পাশের পরীক্ষার্থীর উত্তর অবধি সকল দেখিয়াই নিজ পেপার প্রস্তুত করো, তাহাতে তত্ত্বগত ঝাঁকুনি লাগিলেও, বাস্তবিক কোনও পার্থক্য ঘটিবে না। সেমিনারের বক্তৃতা, উপন্যাসগ্রন্থ, চুটকিসংগ্রহ, সকলই ইদানীং এই প্রক্রিয়াতেই প্রস্তুত হয়। যে শিক্ষকেরা এই প্রতিজ্ঞা করাইবেন, তাঁহারা কি পাঠদানের কালে মৌলিক বার্তা লইয়া উপস্থিত হইবেন? না, মূল টেক্সট ও তাহার সম্পর্কিত অন্য টেক্সটগুলি মিলাইয়া নোট প্রস্তুত করিয়া, তাহাই বলিবেন? আপনি আচরি প্রতিজ্ঞা অপরে শিখাইলেই ভাল।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
ফ্রান্সে এক জেলবন্দি প্যরোল-এ ছুটি পেয়েছিল, কিন্তু বাড়িতে ক’দিন কাটিয়েই তড়িঘড়ি জেলে ফিরে এল, কারণ সে তার গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে পালাতে চায়! এক পণ্ডিত লিখেছিলেন, যুধিষ্ঠির হয়তো ইচ্ছে করেই নিশ্চিত হারের পাশাটা খেলেছিলেন, কারণ তিনি রাজনীতির প্যাঁচ থেকে মুক্তি চাইছিলেন। তাই মানুষ কখন কী চেয়ে বসে, দেবা ন জানন্তি। টানা বদনাম বন্দিত্ব বিদ্রুপ সয়ে, অনেকে নিজের সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে নেমেছে শুনেও ঝলমলে খুশি হয়ে ওঠেন!