সম্পাদকীয় ২

আস্থা

পর পর চার বার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পদে অভিষিক্ত হইলেন নবীন পট্টনায়ক। লোকসভার ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিই তাঁহার দখলে। আর বিধানসভার ১৪৭টি আসনের মধ্যে ১১৭টি জয় করিয়া তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকারী। যদি মনে রাখা যায় যে, এই সাফল্য রাজ্যে জাতীয় দল কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করার মূল্যে এবং একদা সহযোগী দল বিজেপির অনুকূল সুপবনের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া অর্জিত হইয়াছে, তবে সেই অর্জনের কৃতিত্ব আরও চমৎকার মনে হইতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:০৯
Share:

পর পর চার বার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পদে অভিষিক্ত হইলেন নবীন পট্টনায়ক। লোকসভার ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিই তাঁহার দখলে। আর বিধানসভার ১৪৭টি আসনের মধ্যে ১১৭টি জয় করিয়া তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকারী। যদি মনে রাখা যায় যে, এই সাফল্য রাজ্যে জাতীয় দল কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করার মূল্যে এবং একদা সহযোগী দল বিজেপির অনুকূল সুপবনের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া অর্জিত হইয়াছে, তবে সেই অর্জনের কৃতিত্ব আরও চমৎকার মনে হইতে পারে। কে বলিবে, এই মানুষটিই একদা রাজনীতিতে ভয়ানক অনিচ্ছুক ছিলেন, প্রখ্যাত পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বরণ করিতে যৎপরোনাস্তি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন!

Advertisement

নবীন পট্টনায়ক বর্তমান ভারতে সেই মুষ্টিমেয় প্রাদেশিক রাজনীতিকদের অন্যতম, যাঁহারা নরেন্দ্র মোদীর অনুকূলে ওঠা জনসমর্থনের প্লাবনকে রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করিতে দেন নাই। অন্য দুই জন তামিলনাড়ুর জয়রাম জয়ললিতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রখর কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন নবীন কখনওই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খোয়াব দেখেন নাই, ওড়িশার ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই আপনাকে সীমাবদ্ধ রাখিতে পছন্দ করিয়াছেন। এমনকী নিজে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় সদস্য থাকিলেও কেন্দ্রীয় সরকারে কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের উচ্চাভিলাষ কখনও তাঁহাকে তাড়িত করে নাই। তাই একদা জয়ললিতা, মমতা, নীতীশ কুমার প্রমুখের সহিত অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের যে রাজনৈতিক ঘুড়িটি বাতাসে ভাসানো হয়, তিনি তাহাতেও তত আগ্রহ দেখান নাই। অকারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা হইতে মুক্ত থাকার এবং কেবল চড়া দাগের আবেগনির্ভর রাজনীতি অনুশীলন না-করার অভ্যাস তিনি সম্ভবত তাঁহার শিক্ষা হইতে আহরণ অথবা পরিপোষণ করিয়াছেন। রাজনীতির দৈনন্দিন অনুশীলনেও তিনি ভারতীয় রাজনীতির স্বভাবসিদ্ধ অতিনাটকীয়তা সন্তর্পণে এড়াইয়া চলেন।

তাঁহার যাত্রাপথটি সর্বদা সুগম থাকে নাই। বিজেপির সহিত রাজনৈতিক জোট তাঁহাকে এনডিএ-র অন্তর্ভুক্ত করিলেও ২০০৮ সালে কন্ধমাল দাঙ্গা তাঁহাকে বিজেপির সঙ্গত্যাগে প্রাণিত করে। ধর্মনিরপেক্ষতায় অবিচল থাকার কথা অনেক রাজনীতিকই বলেন, কিন্তু সেই নীতি হইতে স্খলিত রাজনীতিকদের সঙ্গত্যাগের এমন তৎপরতা কদাচিৎ নজরে পড়ে। এ জন্য তাঁহাকে যে রাজনৈতিক ক্ষতি ও বিরোধিতা সহ্য করিতে হয়, তাহার ঝুঁকি লইতে নবীন পট্টনায়ক বিন্দুমাত্র ইতস্তত করেন নাই। নবীন অন্য সমস্যাতেও পড়িয়াছেন। তাঁহার রাজ্যে ইস্পাত প্রকল্পের জন্য কৃষিজমি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিয়মগিরিতে আদিবাসীদের পূজ্য পাহাড়ে খনিজ আহরণের প্রয়াসের বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর আবেগকম্প্র বিরোধিতা, কয়লাখনি কেলেংকারি এবং সর্বশেষ চিট-ফান্ড কেলেংকারি তাঁহার শাসনপ্রণালীর বিরুদ্ধে জনরোষ সংগঠিত করিবে, এমন একটা আশা বিরোধীদের ছিল। বিজেপি নেতৃত্বও হয়তো সেই বিভ্রমের শরিক ছিলেন। নবীনের সহিত কোনও আসন-রফার প্রস্তাবও তাই তাহার তরফে দেওয়া হয় নাই। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর নবীনকে দূরে সরাইয়া রাখার জন্য তাঁহারা নিশ্চয় হাত কামড়াইতেছেন। জনসাধারণ অপকাণ্ডের দায় ব্যক্তিগত ভাবে নবীন পট্টনায়কের ঘাড়ে চাপান নাই, ফলাফলই তাহার প্রমাণ। কেবল রাজ্য শাসনে নয়, জাতীয় আইনসভায় রাজ্যের স্বার্থ তুলিয়া ধরিতে তাঁহার দলই যোগ্যতম, এই আস্থাও জ্ঞাপন করিয়াছেন। অতঃপর বিজয়ী নায়ককে সেই জনাদেশের মর্যাদা রক্ষা করিতে হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement