সম্পাদক সমীপেষু

শিশুশ্রম: সেই ফাঁকি সমানে চলছে

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

শিশুশ্রম: সেই ফাঁকি সমানে চলছে

Advertisement

অচিন চক্রবর্তী ও জয়ন্তকুমার দ্বিবেদী (‘শিশু শ্রম বন্ধ করা...’, ২৫-১১) একটি জ্বলন্ত বিষয়ের উপর সঠিক আলোকপাত করেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি শ্রমিক শিশু। ১৪ কোটি আফ্রিকার, ১ কোটি ১০ লক্ষ লাতিন আমেরিকার, ৩ কোটি ৯০ লক্ষ এশিয়ার এবং অবশিষ্টাংশ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী। এই কালো ব্যাধিকে ‘দুঃখজনক ও লজ্জাকর ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে বহু বছর হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিল আইএলও। শিশু শ্রমিক প্রথার বিরুদ্ধে ও চিরতরে তা অবসানের জন্য সারা পৃথিবী জুড়ে একটা ফলদায়ক প্রয়াস গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে একমাত্র কিছু মানবাধিকার সংস্থা। এদের লাগাতার চাপে ১৯৯১ সালে শিশু শ্রমিক দূরীকরণের আন্তর্জাতিক কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হয় আইএলও। তারা ভারতে শিশু শ্রমিক প্রথা বিলুপ্তি, কর্মরত শিশুদের অধিকার রক্ষা, তাদের কাজের পরিবেশের উন্নতি, শিক্ষাদানের সুনির্দিষ্ট প্রকল্প এবং শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ফি বছর কয়েক লক্ষ ডলার অনুদান দেয়।

একটি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা দুনিয়ার শিশুদের দুরবস্থার নিরিখে ভারতের স্থান ষষ্ঠ। আমাদের দেশে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় এখনও প্রায় ৭ কোটি শিশু এবং কিশোরকিশোরী নিয়োজিত। পাশাপাশি ইউনিসেফের দেওয়া শিশুশ্রম সংক্রান্ত হিসেব মোতাবেক ভারতে বর্তমানে ১৪ বছরের নীচে প্রায় ২ কোটি শিশু কাজ করে। উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের গৃহস্থালির কাজে যৎসামান্য বেতন ও যৎকিঞ্চিৎ ভাতকাপড়ের বিনিময়ে পরিচারক কিংবা পরিচারিকা পদে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয় অনূর্ধ ১৪ বছর বয়সি প্রায় ১ কোটি শিশুকে। তা ছাড়া পথ-ফুটপাথের অজস্র চায়ের দোকান, গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ এবং ধাবাতে বহাল তবিয়তে বিদ্যমান ৫০ লক্ষাধিক নাবালক শ্রমিকের দল। উপরি পাওনা হিসেবে এই শিশু শ্রমিকদের অনেকের উপর অহরহ চলে গৃহকর্তা-কত্রী ও মালিকদের চড়, থাপ্পড়, কিল ও ঘুষি। অনেক সময় এদের যৌনকর্মেও ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

১৯৯৬ সালে কেন্দ্রের যুক্তফ্রন্ট সরকার শিশু শ্রম (নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ) বিধি প্রবর্তন করে ১৩টি বৃত্তি এবং ৫১টি প্রক্রিয়ার পেশাকে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে সেখানে শিশুদের নিয়োগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আইএলও এবং মানবাধিকার কমিশনের লাগাতার চাপের দরুন ২০০৬-এর ১ অক্টোবর ওই বিধি পরিমার্জিত হয়ে ১৪ বছরের নীচে শিশুদের বাড়ি, হোটেল, ধাবা এবং পথ-ফুটপাথের দোকানের কাজে নিয়োগের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শিশুদের দিয়ে কাজ করালে মনিবের দণ্ড হবে ৩ মাস থেকে ১ বছর অবধি জেল বা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা।

আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য সাধু, কিন্তু রাতারাতি দেশ জুড়ে ১৪ বছরের কম বয়সি ছেলেমেয়ের গৃহস্থালি বা খাবারের দোকানের কাজ থেকে সরিয়ে আনা কি সম্ভব? পরিবারের যৎসামান্য রোজগারে পেট ভরে না বলেই তো নিজেদের বাবা-মা বাড়িঘর ছেড়ে কর্মজগতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয় কচিকাঁচারা। কাজ চলে গেলে এরা খাবে কী? পরিবারের অন্য পাঁচটা পেটেরই বা কী গতি হবে? শিশুদের কাজ করাটা যেমন খারাপ, বাড়িতে অভুক্ত অসুস্থ অবস্থায় থাকাটা আরও খারাপ। তাই কাজ থেকে উৎখাত করার পাশাপাশি শিশুদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত ও সুনিশ্চিত করা কেন্দ্রের অবশ্যকর্তব্য। অন্যথা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য।

শিশুশ্রমিকদের দেখভাল ও উপযুক্ত সুযোগসুবিধা দানের জন্য শিশু শ্রম সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা না-থাকায় স্বভাবতই ওই সিদ্ধান্তে কাজের কাজ হয়নি। সঙ্গত কারণেই শিশু শ্রমিকদের বিকল্প রুটি রুজি এবং যথার্থ পুনর্বাসন পরিকল্পনা সংবলিত চারটি প্রস্তাব কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বামফ্রন্ট সরকারের শ্রম দফতর। অদ্যাবধি তা গৃহীত হয়নি।

কুনিয়মে পরিচালিত বর্তমান ব্যবস্থার জন্য দায়ী শুধু সরকার নয়, দায়ী আমাদের সমাজ, দায়ী আমরা। যে সামাজিক বিকৃতিতে দেশ আচ্ছন্ন, তা দূর করে আগামী প্রজন্মকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে হলে আমাদের প্রত্যেককে এ বিষয়ে সর্বক্ষণ সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে কুপ্রথার বিনাশ ঘটাতে চাই বাম-ডান-মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা। এ ক্ষেত্রে শিশুর আহার, পরিধান, মাথার ছাউনি এবং স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬

মুসলমানি বাংলা

আশিস পাঠকের লেখার (‘বঙ্গভাষার আমরা ওরা’, ৯-১২) প্রেক্ষিতে জানাই, ‘মুসলমানি বাংলা’ নামটি কোনও বাঙালির দেওয়া নয়। নামটি দিয়েছিলেন জেমস লং (১৮১৪—১৮৮৭)। লং সাহেব ১৮৫২ থেকে ১৮৬৭, এই সময়কালে বাংলা বইয়ের বিভিন্ন ধরনের সাতটি তালিকা তৈরি করেন। তালিকাগুলি প্রস্তুত করতে গিয়ে বাংলার সঙ্গে প্রচুর ফারসি ও উর্দু মিশিয়ে একটা বিচিত্র ভাষারীতিতে লেখা প্রচুর বই তাঁর নজরে আসে। বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্ম বা খ্রিস্টানদের পক্ষে এই বই পড়ে বোঝা সম্ভব নয়। তিনি লক্ষ করলেন, বইগুলি কলকাতা ও ঢাকার মুসলমান সমাজে খুবই জনপ্রিয়। বিচিত্র এই ভাষারীতির তিনি নাম দেন ‘মুসলমানি বাংলা’। ১৮৫২-য় ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’য়, ‘মুসলমান বেঙ্গলি লিটরেচার’ নামে তাঁর লেখায় এই ভাষায় লেখা ছত্রিশটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে। (তথ্যসূত্র: ‘বাঙালির আপনজন জেমস লং’, স্বপন বসু)

উত্তমকুমার পতি। শালডিহা, বাঁকুড়া

দত্ত নয়, দাস

স্বপ্নময় চক্রবর্তী স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সম্বন্ধে যা যা লিখেছেন তা সর্বৈব সত্য। বহু দিন তাঁর সঙ্গে সহকর্মী হিসেবে থাকার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু স্বপ্নময়বাবুর লেখায় একটি ভুল থেকে গিয়েছে। ওই শিক্ষক মহাশয়ের নাম অমল দত্ত নয়, অমল দাস। ‘এডি’ নামে স্কুলে বা ছাত্রসমাজে প্রসিদ্ধ।

সত্যব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন শিক্ষক, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল, কলকাতা-৫৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন