পার্লামেন্টে ছুটির হাওয়া বহিতেছে। ঘরদোর শুনশান, ব্যস্ত অলিন্দ অধিকাংশতই খাঁ খাঁ। ক্যান্টিনে একাকী টেবিল-চেয়ার। ইতিউতি যাঁহারা দৃশ্যমান, তাঁহারাও বড় গা-ছাড়া, কী-করি কী-করি ভাব। আইনসভা আছে, কিন্তু নাই। জনপ্রতিনিধিরা যেন স্কুল-পলাতক পড়ুয়া। এবং এমন ঘটনা এক দিন নয়, দুই সপ্তাহ নয়, বেশ কিছু কাল এমনই চলিতেছে। ভ্রান্তি বাড়িবার আগেই বলিয়া লওয়া ভাল, ইহা ভারতের ছবি নহে, যদিও ভারতের ছবির সহিত ইহার বিস্তর মিল, অন্তত উপরিভাগে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সহিতও। শুনিলে অবাক মানিতে হয়: ইহা লন্ডনের ছবি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ছবি। প্রশ্ন জাগে, তবে কি কলিকাতা লন্ডন হইবার আগেই লন্ডন কলিকাতা হইল?
রটনা-ঘটনার বিবাদ ভঞ্জন হউক। আসল কথা, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ছুটি-ছুটি রবের কারণ সামনের বত্সর জাতীয় নির্বাচন, কাজকর্ম কিছু বাকি নাই। পাঁচ বত্সরের নির্বাচিত সরকারের কাজ চার বত্সরেই সমাধা হওয়ায় সাংসদরা এখন কর্মহীন। ২০১৫ সালে পরবর্তী নির্বাচনের আগে আর অধিবেশন বসিবে না। কাজ বাকি না থাকিবার কারণটি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। ২০১০ সালে নূতন সরকার ক্ষমতায় আসিয়াই প্রবল গতিতে বিপুল পরিমাণ কাজ করিয়াছে। যে পরিমাণ বিল পাশ হইয়াছে, তাহাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাতের কাজ শেষ। পর্যবেক্ষকরা এমনও বলিতেছেন যে, কনজার্ভেটিভ দলের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের সরকার যে অত্যধিক সংখ্যক বিল পাশ করিয়াছে, তাহা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিবার যোগ্য। পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারের সরকার, এমনকী প্রবাদপ্রতিম মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের অপেক্ষাও বেশি। কোনও নীতিই নাকি বাকি নাই, গত চার বত্সরে যেখানে সরকারের হাত পড়ে নাই। সুতরাং কাজের খাতা ভর্তি। একটিই কাজ এখন বাকি, হিসাবপত্র মিলানো। এত রকম কাজের হিসাব, কম কথা নহে। মন্ত্রীরা তাই আপাতত এই ফাঁকা সময়ে সম্পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করিয়াছেন নিজের নিজের দফতরের হিসাবখাতার উপর। এম-পি’রা তাঁহাদের নেতাদের প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা দিতেছেন।
ভারত আর বিলাতের দূরত্ব বহু যোজন। তাই এই মিলের ভিতরে অতলান্ত বেমিল। ওখানে সংসদ বন্ধ থাকে উহাদের কাজ শেষ বলিয়া। এখানে সংসদ বন্ধ থাকে ইহাদের হামলা-ও-বয়কট যুগ্ম কার্যক্রমের কারণে। ওখানে নির্বাচিত সরকার আসীন হইয়াই পুরা দমে কাজে নামে। এখানে নির্বাচিত সরকার অধিবেশনের শেষ দিনে পড়িমরি করিয়া কিছু কাজের নিদর্শন রাখিয়া যায়। ওখানে সমাজ-অর্থনীতির কোনও ক্ষেত্রই সরকারের উপেক্ষিত থাকে না। এখানে মাত্র কতিপয় ক্ষেত্রই সরকারের উপেক্ষা-প্রাচীর ভেদ করিতে পারে। ওখানে কাজ শেষ মানে হিসাবের শুরু। এখানে কাজ না হইলে হিসাবের প্রশ্নই বা কোথায়। ভারতীয় সংবিধান নাকি বিলাতি সংবিধানের আদলেই তৈরি। ভারতীয় সংসদ ভবনটি তো বিলাতি সাহেবরাই বানাইয়াছেন। তবে বিলাতি সাংসদরা ‘ওয়েল’-এ নামেন না কেন, ওয়াক-আউট করেন না কেন, অধিবেশন চলাকালীন দিনের পর দিন সংসদ বয়কট করেন না কেন? পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা অধিবেশনের অর্ধেক বিধায়ক থাকেন অনুপস্থিত, অর্ধেক থাকেন উপস্থিত হইয়াও নিদ্রামগ্ন। স্বাভাবিক, অত্যন্ত অনাকর্ষক বিষয়ে আলোচনা হয় বলিয়াই নিদ্রার উদ্রেক। কিন্তু বিলাতে যখন বিল-বিতর্ক হয়, তাহাও তো চিত্তাকর্ষক হইবার কারণ নাই। তবে উঁহাদের ঘুম পায় না কেন? ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানদের সেই সপ্তদশ শতকীয় বিতর্ক-উদ্যমে ও আইন-প্রণয়নেচ্ছার আতিশয্যে এখনও ভাটা না পড়ে না কেন? ইহাকে কি যুগোপযোগী বলা যায়? দুই শত বত্সরের সাম্রাজ্য-অভিজ্ঞতা হইতে ওয়েস্টমিনস্টার তবে কী শিখিল?
য ত্ কি ঞ্চি ত্
হল্যান্ডে কয়েদি কম পড়িতেছে! সে দেশের জেলখানায় এখন কর্মীর সংখ্যা বেশি, কয়েদির কম! এ দিকে গারদ মেনটেন করতে পেল্লায় খরচা। তা হলে? সরকার থেকে অ্যাপিল করুক, তেড়ে ক্রাইম করুন! বা, রোল খেতে গিয়ে সস ফেললেই জেলে পুরে দিল! আরও ভাল, রমরমা আউটসোর্সিং-এর যুগে ভারত থেকে ক’হাজার নিয়ে যা বাপ! অবশ্য তার মধ্যে যদি ঠিকঠাক কোটিপতি বা ফেরেব্বাজ থাকে, টাকা ও দুর্নীতির ভেলকিতে ও ল্যান্ড ‘হ’ থেকে মুহূর্তে ‘হোস না!’