প্রতীকী চিত্র।
উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক সরকারি স্কুল। দক্ষিণবঙ্গেরও বেশ কিছু স্কুল অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতির জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে? চিন্তায় মাথায় হাত স্কুলগুলির। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলগুলির জন্য কম্পোজিট গ্রান্টের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ করল রাজ্য।
কোনও স্কুলে বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ে আছে। কোথাও বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। কোথাও বেঞ্চ ভেঙেচুরে গেলেও মেরামত করা যায়নি। কোথাও পাখা খারাপ হয়ে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। কিন্তু সুরাহার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নেই। কারণ, কম্পোজ়িট গ্রান্টের পর্যাপ্ত টাকা স্কুলগুলির হাতে নেই। অবশেষে সরকার সেই টাকা দিল। তবে যৎসামান্য। তবে এই ২৫ শতাংশ বরাদ্দ এ বছর প্রথম নয় ২০২৩ সাল থেকে এই বকেয়া টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে স্কুলগুলিতে। রাজ্যের দেওয়ার কথা ৪০ শতাংশ। সেখানে দিচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের একা আধিকারিক জানান, ‘‘স্কুলের চক-ডাস্টার থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেন্দ্ররাজ্য যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২ সালের পর থেকে কেন্দ্রের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে।"
স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, চলতি বছরে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা এলেও প্রাপ্যের তুলনায় তা অনেকটাই কম। অতিবৃষ্টির কারণে এ বারে রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুলের ক্ষতি হয়েছে। নারায়ন দাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, "বছর শেষে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা কি কাজে লাগাব। ভারী বৃষ্টির কারণে স্কুল একাধিক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জল। স্কুলের ইলেকট্রিক বিল ক্ষয় ২৫ হাজার টাকা। সেখানে সরকারি অনুদান মাত্র ২৫০০০।"
বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের প্রশ্ন, দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে যদি প্রত্যাশার থেকেও অনেক বেশি টাকা অনুদান দিতে পারে সরকার, তা হলে স্কুলগুলির প্রাপ্য কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা পুরোটা দেওয়া হচ্ছে না কেন? মিড-ডে মিল থেকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট— স্কুলগুলির বেলা শুধু কার্পণ্য? প্রধান শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘ক্লাবগুলিতে দান খয়রাতি না করে স্কুলগুলির দিকে নজর দেওয়া উচিত সরকারের। বন্যার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে সম্পূর্ণ টাকা না পেলে স্কুলগুলির জরাজীর্ণ অবস্থা হয় তৈরি হবে।’’
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, এবং সরকার পোষিত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির জন্য কম্পোজ়িট বরাদ্দ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১ থেকে ৩০ এর মধ্যে, তাদের পাওয়ার কথা ১০ হাজার টাকা। তবে তারা পাবে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৫০০ টাকা। ৩১ থেকে ১০০ যে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে তাদের পাওয়ার কথা ২৫ হাজার টাকা তারা পাবে ৬২৫০ টাকা। ১০১ থেকে ২৫০ জন পড়ুয়া যে স্কুলে রয়েছে তাদের পাওয়ার কথা পঞ্চাশ হাজার টাকা তারা পাবে ১২৫০০ টাকা। যেখানে ২৫১ থেকে ১০০০ জন পড়ুয়া রয়েছে তাদের পাওয়ার কথা ৭৫ হাজার টাকা তারা পাবে ১৮৭৫০ টাকা। যে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০ বেশি তাদের ১ লক্ষ টাকা করে পাওয়ার কথা। তারা পাবে মাত্র ২৫ হাজার টাকা।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘শিক্ষাবর্ষের প্রায় শেষের দিকে এই টাকা দেওয়া হল। এই সামান্য টাকায় স্কুলের কী পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে? এমনিতেই অর্থের অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে স্কুলগুলির। টাকা না দিলে স্কুল ফি বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হোক।’’