প্রতীকী চিত্র।
মিড ডে মিল নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। জানানো হয়েছে, সরকারি অনুদানের টাকা পেলে ‘কিচেন গার্ডেন’ তৈরি করতেই হবে স্কুলগুলিকে। সেখান থেকেই পড়ুয়াদের পাতে জোগান দেওয়া হবে পুষ্টিকর আনাজের। এ বিষয়ে সাহায্য করবেন বিশেষজ্ঞেরা। কাজ করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে। হেঁসেল বাগান তৈরি করতে কোথায়, কত টাকা খরচ হচ্ছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকে।
রাজ্যের প্রায় ৮১হাজার স্কুলে মিড ডে মিল প্রকল্প চলে। সেই সমস্ত স্কুলে পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান দিতে স্কুল চত্বরেই আনাজ চাষের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ জন্য অনুদানও দেওয়া হয় সরকারি ভাবে। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে মিড ডে মিল প্রকল্পের আওতায় ‘কিচেন গার্ডেন’-এ আনাজ ফলানোর জন্য প্রতি বছর ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় কিছু স্কুলকে।
কিন্তু অভিযোগ, সমস্ত স্কুলে এই আনাজ বাগান তৈরি করা যায়নি। কোথাও কোথাও আবার নিতান্তই দায়সারা ভাবে কাজ চলছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়নি, ফলে পুষ্টিকর আনাজের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সরকারি অনুদানের টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তার হিসাবও মিলছে না বলে অভিযোগ।
রাজ্য মিড ডে মিল বিভাগের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, “বহু স্কুলই অনুদানের টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তার যথাযথ তথ্য দফতরকে পাঠাচ্ছে না। তাই এ বার নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যে সমস্ত স্কুল বাগান তৈরি করতে আগ্রহী, তাদের অনুদান দেওয়া হবে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট হিসাব দাখিল করতে হবে।”
হিসাব বলছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭ হাজার স্কুলকে ‘কিচেন গার্ডেন’ তৈরির জন্য প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এর পর থেকে যে সমস্ত স্কুল ‘কিচেন গার্ডেন’ তৈরি করতে ইচ্ছুক, তাদের নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবেদন করতে হবে। চাষ করতে হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে। এ জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের তরফে সহায়তা না পাওয়া গেলে যোগাযোগ করতে হবে কোনও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। তাদের তত্ত্বাবধানে চাষের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবে অনুমোদনহীন কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো যাবে না বলেও সাফ জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়। গোটা বিষয়টিতে নজরদারি চালাবেন জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা।
শিশুদের মধ্যাহ্নভোজনে পুষ্টিকর খাবার যাতে দেওয়া যায়, সে জন্যই রাজ্যের স্কুলগুলিতে আনাজ চাষ, সুযোগ থাকলে মৎস্যচাষের কথাও বলা হয়েছে। বেশ কিছু স্কুলে এই ভাবে কাজ চলছে সফল ভাবে। কিন্তু সর্বত্র তা সম্ভব নয়। আর সেখানেই উঠছে অভিযোগ।
শিক্ষকমহলের একাংশের অভিযোগ, যে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা দিয়ে প্রচুর ফলন সম্ভব না-ও হতে পারে। তার উপর বাইরে থেকে কোনও সংস্থার সহায়তা নেওয়ার মতো ক্ষমতা সমস্ত স্কুলের নেই। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে সরকারি নির্দেশিকাকে অবশ্য স্বাগত জানানো হয়েছে। যদিও সংগঠনের দাবি, পড়ুয়ার সংখ্যার তুলনায় এই বরাদ্দ নিতান্তই সামান্য। সমস্ত স্কুল এই অনুদান পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ। শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা চাইছেন, সরকার অনুদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করুক এবং আরও বেশি সংখ্যক স্কুলকে এই অনুদানের আওতায় আনা হোক।