Opinion on Leadership

ক্ষমতা ভোগের ছাড়পত্র না কি দেশসেবার অঙ্গীকার, আদর্শ নেতার কর্তব্য কী?

১ জুলাই, মঙ্গলবার এমনই এক ভাবনায় লরেটো কলেজের বিভিন্ন কাউন্সিল ও সেলে কলেজপড়ুয়াদের প্রতিনিধি হিসাবে বেছে নেওয়া হল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ ১৯:১২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

সমাজের প্রতি দায়িত্ব আর কর্তব্যের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে অধিকারের প্রসঙ্গটি। সেই অধিকার আর কর্তব্যের বিধান করে রাষ্ট্র। সেখানে উঠে আসে নেতৃত্বের প্রশ্ন। নেতৃত্ব মানে কি শুধুই ক্যারিশ্মা? ক্ষমতা? সেবা? নাকি অন্য কিছু? ‘নেতা’ কথাটা মাথায় এলেই ঘুরপাক করে এই শব্দগুলি। কিন্তু আদতে কি তা-ই?

Advertisement

সচেতন নাগরিকের মনে এ সব প্রশ্ন জেগে ওঠা অবশ্য প্রয়োজন, তাঁর নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন। সাহিত্যিক সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, নেতৃত্ব কখনওই একমাত্রিক নয়, বিশেষত রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তিনি বলেন, “ক্ষমতাহীন ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ‘লিডার’ (নেতা) আর ‘বস’ (কর্মকর্তা)-এর মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। একজন নেতা (লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাবে) কখনওই কেবল ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন না যদি তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে। নেতৃত্বদানের যোগ্যতাই আদতে ক্ষমতার জন্ম দেয়, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যিনি নেতা, তিনি ‘ক্ষমতার ফাঁদে’ না-পড়ে নিজের যোগ্যতায় মানুষকে নেতৃত্ব দেবেন।” সম্রাজ্ঞী মনে করেন, এটি আদতে পরিষেবা, সেবা নয়। নেতৃত্বদানের গুণ যে মানুষের মধ্যে রয়েছে, তিনি কখনওই এই পরিষেবার অঙ্গীকার ভুলে যেতে পারেন না। কারণ এর মধ্যেই তাঁর আসল ক্ষমতা লুকিয়ে, দাবি সম্রাজ্ঞীর।

তবে, গণতন্ত্রে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা সেবাধর্মে কতখানি বিশ্বাসী, তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার। তিনি মনে করেন, প্রযুক্তির যুগে ‘নেতৃত্ব’ বিষয়টিও আর আগের মতো নেই। সমাজে ভোগবাদের আগ্রাসন বাড়ছে। সেখানে এই সেবাধর্ম অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে বলেই তাঁর মনে হয়। মীরাতুনের কথায়, “ভোগবাদী ও সেবাব্রতী হওয়া দু’টি মানসবৃত্তিই মানুষের মধ্যে ক্রিয়াশীল। যাঁরা দেশ বা দশের নেতৃত্ব দিতে চান, তাঁদের নৈতিক দায় হল ক্ষমতা ভোগের আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশসেবার কাজ করে যাওয়া। সেবাব্রতকে প্রাধান্য দেওয়া। গণতান্ত্রিক আদর্শ সে সত্যকেই মান্যতা দিতে শেখায়।”

Advertisement

বয়স ১৮ ছুঁলেই মেলে ভোটদানের অধিকার। প্রাপ্তবয়স্কদের একেবারের গোড়ার দিনগুলিতেই যদি জনসেবাকে নেতৃত্বের উল্টোপিঠ বলে শিক্ষা দেওয়া যায়, তা হলে সমাজের এক অন্য রূপ দেখা যেতে পারে— এমন ভাবনা থেকেই মঙ্গলবার লরেটো কলেজে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। এই মঞ্চেই কলেজের বিভিন্ন কাউন্সিল ও সেলে কলেজপড়ুয়াদেরই প্রতিনিধি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। মূল বক্তব্য ছিল— ‘নেতৃত্ব আসলে সেবা’।

লরেটো কলেজের অধ্যক্ষা এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষমতা আসলে নেতৃত্বের একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ। সমগ্র দেশ, রাজ্য এবং সমাজের জন্য নেতৃত্বে সংহতি, পরস্পরের পাশে থাকা এবং সেবার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা আমরা সহজেই ভুলে যাই। এর মাধ্যমে সমস্ত ব্যক্তিগত দুঃখ, শোক, অসহায়তা ভুলে মানুষের পাশে থাকা যায়।”

একই মত কলেজের প্রিন্সিপাল সিস্টার নির্মলার। তিনি বলেন, “নেতৃত্বের অর্থই হল পাশের মানুষটির হাত ধরে এক সঙ্গে পথ চলা। বর্তমানে হয়তো এটি বাস্তবায়িত করা একটু কঠিন। কিন্তু মানুষকে ভালবেসে পাশে থেকেই নেতৃত্ব দেওয়াটা জরুরি। এ ভাবেই শান্তির খোঁজ মিলতে পারে।”

প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু এর বাস্তবায়ন আদৌ কতটা সম্ভব, তা আলোচনাসাপেক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement