ছবি: সংগৃহীত।
প্রাথমিক পড়ুয়াদের পঠনপাঠন চলছে যে শ্রেণিকক্ষে, তার পাশেই চলছে মিড-ডে মিলের রান্না। খোলা জানলা দিয়ে শ্রেণিকক্ষে এসে ঢোকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। কখনও তা মশলা কষানোর গন্ধে ভরা, কখনও আবার কাঠ-কয়লার উনুনের। তারই প্রভাবে, পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। কাশির দমকে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগা়ড় পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, সকলের।
এমন ছবি সারা রাজ্যে বিরল নয়। তবে গত এপ্রিলে জলপাইগুড়ির ফতাপুকুর নিম্ন প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল সংক্রান্ত বিষয়ে উঠেছিল অভিযোগ। শুধু তাই নয়, রান্নাঘর, খাবার ঘর অপরিচ্ছন্ন। খাবারের পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন।
মিড-ডে মিল নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে বার বার। খাদ্যের মান, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নান সমস্যার প্রসঙ্গই উঠে আসে সেখানে। এ বার রাজ্যের স্কুলগুলির কাছে নতুন করে নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে শিক্ষা দফতর।
জানা গিয়েছে, গত এপ্রিল মাসে জলপাইগুড়ির ওই স্কুল সম্পর্কে অভিযোগ এসেছিল। তার ভিত্তিতেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শন করে গত ৯ এপ্রিল ২০২৫। রিপোর্ট যায় মুখ্য সচিবের কাছে। তার পরই নির্দেশিকা এসেছে শিক্ষা দফতরের তরফে।
স্কুলগুলিকে মিড-ডে মিল বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়ে বলা হয়েছে—
পড়ুয়াদের মধ্যাহ্ন ভোজনে প্রতিদিন ডাল রাখতে হবে।
সমস্ত স্কুলের খাওয়ার ঘরে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে।
সেখানে পর্যাপ্ত আলো এবং পাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সে দিন রাজ্য মানবাধিকার কমিশন শুধু মাত্র ওই স্কুলই পরিদর্শন করেনি। আশপাশের বহু স্কুলের পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখেন সদস্যরা। মুখ্য সচিবের কাছে পাঠানো রিপোর্টে কমিশন জানিয়েছে, ওই সব স্কুলের গুদামঘর অপরিচ্ছন্ন, চাল-ডাল মজুত করে রাখা হয়েছে খোলা অবস্থায়। ফলে তাতে পোকামাকড় পড়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। জলপাইগুড়ির একাধিক স্কুলে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহারের নেই। বদলে কাঠ-কয়লায় রান্না হয়। তার পরেই নড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর। কড়া নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে সমস্ত স্কুলে।
রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশনের এক কর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, নির্দিষ্ট নির্দেশিকার পাশাপাশি স্কুল জেলা পরিদর্শক (ডিআই)-দের নজরদারি বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। কাঠ-কয়লার জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে।
যদিও শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এ ভাবে নির্দেশিকা দিয়ে আদতে কোনও কাজ হবে না। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “মিড-ডে মিল নিয়ে বহু স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তা শিক্ষা দফতরের নজরে আনা হয়েছে একাধিক বার। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফল শূন্য।” তিনি দাবি করেন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপে নড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর।