ভূগোল নিয়ে কোন শাখায় পড়লে সুবিধা! ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবীর কোনও রাস্তাই বুঝি আজকাল আর কারও কাছে অচেনা নয়। যে কোনও শহরের যে কোনও ঠিকানা খুঁজে ফেলা যায় নিজের মুঠোর মধ্য। ইন্টারনেটের কল্যাণে ম্যাপ এখন পৌঁছে দিতে পারে যে কোনও জায়গায়। শুধু পৌঁছে দেওয়াই নয়, রাস্তায় যানজট রয়েছে কি না, কোন রাস্তা বন্ধ রয়েছে, গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে লাগবে কতক্ষণ, বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে কোন রাস্তা— সব তথ্য দিতে পারে ম্যাপ। এত সহজে এই কাজটি করে দেয় জিয়োগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) এবং রিমোট সেন্সিং।
কী ভাবে হয় সেই কাজ, কারা করেন? ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়ার পাশাপাশি ভূগোল নিয়ে যাঁরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন, তাঁদের অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। ভূগোল বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক স্তরেই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত হয়। দশম, দ্বাদশ পেরিয়ে অনেকেই স্নাতক স্তরে অনার্স পড়তে চান অথবা উচ্চশিক্ষার কথা ভাবেন। স্নাতকোত্তরের পর কেউ পা বা়ড়ান উচ্চতর শিক্ষার লক্ষ্যে গবেষণাধর্মী কাজে। কেউ বেছে নেন পেশাগত জীবন।
কিন্তু ভূগোলে আগ্রহী পড়ুয়াদের মনে প্রায়ই উঁকি দেয় একটি প্রশ্ন— স্নাতক স্তরে ভূগোল নিয়ে ব্যচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রি পড়বেন না ব্যাচেলর অফ আর্টস?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিগ্রি যা-ই হোক না কেন পাঠ্যক্রমে বিশেষ হেরফের হয় না। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক সৌমেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ভূগোলের মূলত দু’টি দিক থাকে— প্রাকৃতিক ভূগোল এবং মানবিক ভূগোল। বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান থাকলে পড়ুয়াদের প্রাকৃতিক ভূগোলের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি বুঝতেও সুবিধা হয়।’’ তাঁর দাবি, ভূগোলে অনার্স নিলে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হিসাবে (বর্তমানে মাইনর পেপার) গণিত, পদার্থবিদ্যা রাখা ভাল। তাতে সুবিধা হয়।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, রাজ্যের কোন কোন সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ভূগোল বিষয় পড়ানো হয়—
১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (এমএ এবং এমএসসি)।
২) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (এমএসসি)
৩) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (এমএ)
৪) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় (এমএসসি)
৫) উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (এমএসসি এবং এমএ)
রাজ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই স্নাতকোত্তর স্তরে ভূগোলে শুধু এমএসসি ডিগ্রিই পড়ানো হয়। এ ছাড়া, রাজ্যের আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেই এমএ এবং এমএসসি দু’টি বিভাগেই ভূগোল পড়ার সুযোগ রয়েছে। কলেজে স্নাতক স্তরে ভূগোল নিয়ে ভর্তি হতে পারেন কলা এবং বিজ্ঞান উভয় বিভাগের পড়ুয়ারাই। স্নাতক স্তরের ফলাফলের উপরই নির্ভর করে স্নাতকোত্তর স্তরের ভর্তি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক অরিজিৎ মজুমদার বলেছেন, ‘‘ভূগোল পড়তে গেলে গণিতের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যারও প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হয়। পাহাড় কী ভাবে তৈরি হয়েছে, কোথায় তৈরি হয়েছে, হিমালয়ের নানা খুঁটিনাটি বিষয় ভূগোলে পড়তে হয়। তাই এই সব কিছু পড়ার সময় পদার্থবিদ্যা, গণিত এবং রসায়নের জ্ঞান রাখতেই হয়।’’ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, রিমোট সেন্সিং বা জিআইএস-সহ আরও কিছু বিষয়ে রীতিমতো অঙ্ক কষার প্রয়োজন হয়। তাই বিজ্ঞান বিষয়ে ধারণা থাকলে ভূগোল পড়তেও সুবিধা হয় পড়ুয়াদের।
তবে স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠ্যক্রম একই। যে কোনও বিষয়েরই পাঠ্যক্রম কী হবে, তা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাই ভূগোলের এমএ বা এমএসসি-র পাঠ্যক্রম একই থাকে। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপিকা সুমনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এমএসসি পড়ুক বা এমএ— পড়ুয়ারা স্নাতকোত্তরে যে হেতু একই পাঠ্যক্রম পড়েছেন, তাই চাকরির ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হয় না। কারণ একই বিষয় শিখছে ওঁরা।”
পেশাগত সুযোগ সুবিধা?
ভূগোল নিয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ রয়েছে বিস্তর। এ ছাড়াও জিআইএস অ্যানালিস্ট, রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞ, মানচিত্র বিশেষজ্ঞ, পরিবেশগত পরামর্শদাতা হিসাবে বেসরকারি সংস্থাগুলিতে কাজে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। ভূগোল নিয়ে উচ্চস্তরে পড়ে ইসরো-র মতো সংস্থায় কাজের সুযোগও পাওয়া যায়। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় বা বন বিভাগেও চাকরির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
তবে শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, মাধ্যমিক স্তরের ভূগোলের সঙ্গে উচ্চস্তরের ভূগোলের অনেকটা ফারাক থাকে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তার খানিকটা আভাস অবশ্য থাকে। কিন্তু ভূগোল নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে গেলে বিজ্ঞানের অংশ থাকে অনেকটা জুড়ে। তাই কলা বিভাগের পড়ুয়া হলেও ভূগোল ভালবেসে পড়লে আগ্রহ থাকা চাই বিজ্ঞানে।