নিয়ম মেনে পড়াশোনা করলেও বন্ধুত্ব থেকে গিয়েছে দুই কৃতীর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সেমেস্টার পদ্ধতিতে প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক। প্রথম পর্বের পরীক্ষায় সম্ভাব্য শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিয়েছেন প্রীতম বল্লভ এবং আদিত্যনারায়ণ জানা। পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের দুই ছাত্রই পেয়েছে ৯৮.৯৭ শতাংশ নম্বর। একই স্কুল, একই ক্লাস, বিষয়ও এক। দুই সহপাঠী ভবিষ্যতে পড়াশোনা করতে চায় একই বিষয় নিয়ে। আপাতত রাশিবিজ্ঞান নিয়েই উচ্চশিক্ষার কথা ভেবেছে তারা।
প্রীতম বল্লভ আরামবাগের বাসিন্দা। সে জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষার জন্য রাশিবিজ্ঞানই তার প্রথম পছন্দ। তবে অর্থনীতিতেও রয়েছে আগ্রহ। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা আদিত্যও রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার কথা ভাবছে। তবে, ডেটা সায়েন্স-এও তার আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু তাদের এই সাফল্যে বন্ধুদের যে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, মনে করে দু’জনেই।
প্রীতম বলে, “মিশনের কড়া নিয়মানুবর্তিতা, নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা, খেলাধুলার পাশাপাশি, বন্ধুদের সঙ্গ না পেলে এত ভাল ফল হতই না।” আদিত্যের দাবি, “মহারাজ এবং বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের কৃতিত্বেই আমরা এই ফল করতে পেরেছি। বন্ধুদেরও একটা গুরুত্ব থেকেই যায় আমাদের জীবনে। প্রীতম আর আমি তো একই বিষয় নিয়ে পড়েছি। তাই, এই সাফল্যে আরও ভাল লাগছে।”
প্রীতমের পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
ফলঘোষণার পর সহপাঠীদের সঙ্গেই দেখা গিয়েছে দু’জনকে। দুই বন্ধুর সাফল্যে খুশি অন্যরাও। কেউ জড়িয়ে ধরছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে— যেন প্রতিযোগিতার নামগন্ধই নেই কোথাও। আদিত্য-প্রীতমের মধ্যেও রয়েছে দৃঢ় বন্ধুত্ব।
প্রীতমের মা মৌসুমী খাঁড়া বল্লভ জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার বিষয়ে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছেন তাঁরা। তবে একাদশের পর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন, তার পর থেকে আর কোনও বিষয়ে তাঁদের মাথা ঘামাতেই হয়নি। তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ছেলের সঙ্গে আগে বহুবার কথা বলেছি। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ওর কোনও আগ্রহ নেই। আমাদের তরফ থেকেও কোনও চাপ নেই।” বাবা পেশায় হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক জয়দেব বল্লভ বলেন, “মিশনে প়ড়ার আগেও প্রীতম পড়াশোনা আর খেলার জন্য আলাদা করে সময় বার করে নিত। দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলতেই হবে ওকে।”
উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বের পরীক্ষায় ছেলের ফলাফলে খুশি আদিত্যের মা চন্দনা জানা। এত ভাল হবে, আশা করেননি। উচ্ছ্বসিত চন্দনা বলেন, “দেখা হলেই ছেলেকে অনেক আদর করব।” আদিত্যের বাবা আলোককুমার জানা পাঁশকুড়ার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। রাশভারি কণ্ঠে তিনি বললেন, “স্কুলের অনুশাসনেই এত ভাল ফল করেছে ও। আমি চাই ভবিষ্যতেও ও এই ধারা বজায় রাখুক।”
আদিত্য এবং তার মা-বাবা। নিজস্ব চিত্র।
২০২৬ উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বে সম্ভাব্য সেরাদের তালিকায় বেশির ভাগ ছাত্রই রামকৃষ্ণ মিশনের। কেউ পুরুলিয়া থেকে, কেউ নরেন্দ্রপুর থেকে পড়াশোনা করছে। সম্ভাব্য দুই প্রথম ছাড়াও পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের বহু ছাত্রই ভাল ফল করেছে। সম্ভাব্য দশে রয়েছে অনেকে। মিশনের মহারাজ স্বামী জ্ঞানরূপানন্দ জানিয়েছেন, এ বারই প্রথম ওএমআর শিটে এবং সেমেস্টারের পরীক্ষা হয়েছে। তাই প্রথম থেকেই প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। তিনি বলেন, “পড়ুয়ারা সকলেই মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে একেবারে প্রথম থেকে। এ বারের পরীক্ষায় সম্ভাব্য প্রথম দশে আমাদের স্কুল থেকে ২৪ জন জায়গা করে নিয়েছে, এই ফলাফলে সকলেই আনন্দিত।”