WB Madhyamik Result 2025

পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পড়াশোনা, ফুটপাথবাসী সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কা পাশ করল জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায়

২০১৯-এরও আগে থেকে কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউ-র এক ফুটপাতে থাকত ওরা। হঠাৎই প্রশাসনিক চাপে উঠে যেতে হয়। তার পর থেকেই সোনিয়া থাকে সুলভ শৌচালয়ে এবং প্রিয়াঙ্কা টালিগঞ্জের রেলব্রিজের এক ঝুপড়িতে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ১৩:৪১
Share:

প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক ও সোনিয়া ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

এক জনের ঠিকানা সুলভ শৌচালয়! অন্য জনের ঝুপড়ি। পরিবার বলতে বাবা মাদকাসক্ত, অধিকাংশ সময় খোঁজ মেলে না মায়ের। ফুটপাথের আর পাঁচটা বন্ধুদের সঙ্গেই কেটে যায় দিনরাত। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাধ্যমিক পাশ করল প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক ও সোনিয়া ঘোষ।

Advertisement

দু’জনেরই মাথার উপরে ছাদ বলে কিছু নেই। ২০১৯-এরও আগে থেকে কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর এক ফুটপাথে থাকত ওরা। হঠাৎই প্রশাসনিক চাপে উঠে যেতে হয়। তার পর থেকেই সোনিয়া থাকে সুলভ শৌচালয়ে এবং প্রিয়াঙ্কা টালিগঞ্জ রেলসেতুর এক ঝুপড়িতে। বাড়ির কেউই চায় না ওরা পড়াশোনা করুক, জীবনে এগিয়ে যাক। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা নিবাসী মিত্রবিন্দা ঘোষ। সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর ফুটপাথে ২০১৯-এ যে সমস্ত শিশু ছিল তাদের সকলকে পড়াশোনার রাস্তা দেখান মিত্রবিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘ওদের পরিবারের সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয়েছে স্কুলে ভর্তি করানো, পড়াশোনা শেখানো নিয়ে। আমি নিজেই ওদের পড়াশোনার দায়িত্বভার তুলে নিয়েছি। চাই ওরা যাতে আরও এগিয়ে যাক’’।

মাধ্যমিকে প্রথম তিন।

সোনিয়া মাধ্যমিক দিয়েছে টালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে। প্রাপ্ত নম্বর ২০০। বড় হয়ে ট্যাটু আর্টিস্ট হতে চায় সে। এমন ফলাফল কখনওই আশা করেনি বলে জানিয়েছে সোনিয়া। মিত্রবিন্দা বলেন, ‘‘নেশার ঘোরে ওর বাবা ওকে খুন পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছে মেয়েটা। আমি চাইছি খুব শীঘ্রই যাতে ওর থাকার ব্যবস্থা করতে পারি। বড় হচ্ছে! এই সময় সুলভ শৌচালয়ে থাকা অনেকটাই চিন্তার।’’

Advertisement

অন্য দিকে, ১২ বছর বয়সে প্রিয়ঙ্কাকে ৪০ বছর বয়সি এক জনের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিল তার পরিবার। সেখান থেকে আজ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সে, রেজ়াল্ট জানার পর কেঁদে ফেলে প্রিয়াঙ্কা। সে বলে, ‘‘পাশ করা তো দূরের কথা, আদৌ পড়াশোনা করতে পারব তাই-ই ভাবিনি কখনও। এর পর কলা বিভাগে পড়তে চাই। ছবি আঁকা নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছি’’। প্রিয়াঙ্কা মাধ্যমিক দিয়েছে কালীধন ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস স্কুল থেকে। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২১২। ছবি আঁকার সেই অর্থে কোনও শিক্ষক পায়নি সে। তবুও ছবি আঁকাই তার ভালবাসা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement