নিজস্ব চিত্র।
কলেজ ক্যাম্পাস থেকে উদ্ধার হল জখম গন্ধগোকুল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ক্যাম্পাসে একটি বিরল গন্ধগোকুল পাওয়া যায়। এটি এশিয়ান পাম সিভেট বলে জানা গিয়েছে। জখম অবস্থায় উদ্ধারের পর প্রাণীটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে বনদফতরের হাতে।
গন্ধগোকুলের বাস মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। নিশাচর এই প্রাণীটি সর্বভুক। রাতেই ফল, পোকামাকড়, ছোট পাখি বা পাখির ডিম খেয়েই বাঁচে। শহরতলি এলাকায় মাঝে মাঝেই দেখা মেলে এই প্রাণিটির। কলকাতার গাছগাছালিতে ভরা এলাকাতেও কখনও কখনও দেখা যায়।
এই ফলের বীজ রোপনের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে এই প্রাণী বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফল খাওয়ার পর এর পেটের ভেতর দিয়ে বীজ জার্মিনেশন হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ পায়, তাই পরবর্তীতে অঙ্কুরোদগম সহজেই কার্যকর হয়।
পরিবেশবিদদের একাংশের মত, গন্ধগোকুল জনবসতির কাছাকাছি পরিত্যক্ত গাছের কোটর কিংবা বাড়িতে বসবাস করলেও, মানুষকে সাধারণত এড়িয়ে চলে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে বারবার শহর এবং শহরতলির একাধিক জায়গা থেকে এই বিরল প্রাণী আহত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়।
বুধবার সন্ধ্যায় এই প্রাণীটিকে দেখতে পাওয়া যায় বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের একটি পুকুরের পাশে, রক্তাক্ত অবস্থায়। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন গবেষক এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের দু’জন গবেষণাগার সহায়ক কর্মী প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন। তাঁরা দেখেন প্রাণীটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত রয়েছে। সায়েন্স কলেজের একটি পুকুরের পাশে আহত অবস্থায় পড়েছিল। এখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ষষ্ঠ তলায় মাইকোবায়োলজি বিভাগের গবেষণাগারে। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসাও করা হয়। ক্ষতস্থানে মলম ও ব্যান্ডেজ ও লাগানো হয়। দেওয়া হয় স্যালাইন।
বনদফতরের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, বিরল প্রাণীটি কুকুর আক্রমণ করেছিল বলে মনে হচ্ছে। একটি পায়ের হাড় সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। ক্ষত স্থানগুলি ঠিক হলে গন্ধগোকুলের পায়ের চিকিৎসাও করা হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। পুরোপুরি ঠিক হলে সল্টলেকে বনদফতরের যে জায়গা রয়েছে সেখানে এই বিরল প্রাণীটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
গন্ধগোকুল এই প্রাণীটি ২০০৮ সাল থেকে আইইউসিএনের লাল তালিকায় ‘বিরলপ্রাণী’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রাণীটি অবৈধ বন্যপ্রাণী শিকারীদের তালিকায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাব ইনচার্জ পিয়ালী দত্ত বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখা যায়, গন্ধগোকুলের একটি পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। গবেষণাগারের তিন কর্মী ধৈর্য ধরে প্রাণীটির শুশ্রূষার ব্যবস্থা করে। তারপর বনদফতরের হাতে প্রাণীটিকে তুলে দেওয়া হয়।”