প্রতীকী চিত্র।
কখনও স্প্যামকল আবার কখনও মেসেজ, বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থিক জালিয়াতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রযুক্তিগত উন্নতির যুগে খবরের শিরোনাম কাড়ছে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ঘটনাও। যার ফলে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সমস্ত পুঁজিও নিমেষেই হারিয়ে ফেলছে মানুষ। এ বার তাই পড়ুয়াদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী কেন্দ্র। এ জন্য এক অভিনব প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার বুকে আয়োজন করা হল পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রতিযোগিতা।
কলেজ স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে ফিন্যানশিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির প্রসারে উদ্যোগী সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবি। সেবি-র তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটিজ় মার্কেটস (এনআইএসএম)। এ জন্য সর্বভারতীয় স্তরে ন্যাশনাল ফিন্যানশিয়াল লিটারেসি কুইজ (এনএফএলকিউ), ২০২৫-এর আয়োজন করছে তারা। গত বছর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা। যেখানে যোগ দেন ২,৫০,০০০ জন পড়ুয়া। এর পর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য গত ২১ এবং ২২ জুন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় কলকাতার ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে। যোগ দেন ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৬০টি স্নাতক এবং ৫০টি স্নাতকোত্তর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ ফিন্যানশিয়াল মার্কেটস সেন্টার অফ এক্সেলেন্স-এর পরিচালক এবং বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক রাম প্রহ্লাদ চৌধুরী বলেন, “জাতীয় আর্থিক সাক্ষরতা কুইজ বা এনএফএলকিউ পড়ুয়াদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধির একটি কার্যকর মাধ্যম। বর্তমান আর্থিক জটিলতা মোকাবিলায় তাঁরা যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।”
এনআইএসএম শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক জ্ঞান বিস্তারের জন্যই এই ধরনের কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। কুইজের মাধ্যমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অধিকার, ফিন্যানশিয়াল মার্কেট সম্পর্কে ধারণা এবং মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা সম্পর্কেও সচেতন করা হবে। লক্ষ্য, শিক্ষার্থীরা যাতে সমস্ত বিষয়ে আগে থেকে সচেতন হয়ে যথাযথ আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এনআইএসএম-এর ডিরেক্টর শ্রী শশী কৃষ্ণন বলেন, “জীবনের জন্য সঠিক আর্থিক জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন। এনএফএলকিউয়ের মতো উদ্যোগের আরও সচেতন, আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্ববান প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
কলকাতায় শনি এবং রবিবারের প্রতিযোগিতায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যথাক্রমে ৪০,০০০ টাকা, ৩০,০০০ টাকা এবং ২০,০০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্নাতকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতার গোয়েঙ্কা কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড কমার্স। অন্য দিকে, স্নাতকোত্তরে তিনটি স্থানেই রয়েছে কলকাতার তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলি হল যথাক্রমে আইআইএম কলকাতা, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা।
আগামী মাসে দেশের অন্য অঞ্চলে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা হবে নভেম্বর মাসে। মহারাষ্ট্রে এনআইএসএম-এর ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হবে চূড়ান্ত পর্বের। বিজয়ী টিমকে দেওয়া হবে ২১ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার।
এই বিষয়ে সেবি-র ইস্টার্ন রিজিওনাল অফিসের চিফ জেনারেল ম্যানেজার এবং রিজিওনাল ডিরেক্টর শ্রী সঞ্জয় সরভদে বলেন, “আর্থিক সাক্ষরতা শুধু টাকার হিসেব জানার বিষয় নয়। বরং এটি নিজেকে জ্ঞান দিয়ে ক্ষমতাবান করে তোলার পথ।”