মাধ্যমিক - উচ্চ মাধ্যমিকের পর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেবেন কী ভাবে? নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সকলেই যে উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটেন, তা কিন্তু নয়। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনেকেই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
দশম এবং দ্বাদশ উত্তীর্ণরা রেল, পুলিশ, ডাক, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে, এ জন্য তাঁদের পরীক্ষায় বসতে হয়। প্রতি বছর এই সমস্ত বিভাগের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়ে থাকে।
মাধ্যমিকের পাশের পর সরকারি চাকরি সম্ভব?
স্টাফ সিলেকশন কমিশন-এর মাল্টি টাস্কিং স্টাফ নিয়োগের পরীক্ষাটি উল্লেখ্য। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডিরেক্টর ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ নারকোটিক্সে হাবিলদার পদেও নিয়োগ হয়।
দশম উত্তীর্ণ হলেই রেলের গ্রুপ ডি, পিওন, ট্র্যাক মেন্টেনার, রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে কিংবা ডাকবিভাগের পোস্টম্যান পদে নিয়োগের পরীক্ষায় বসা যায়। পাশাপাশি, অঙ্গনওয়ারি কর্মী, ড্রাইভার, হোম গার্ড, ফরেস্ট গার্ডের মতো পদে চাকরির সুযোগও মেলে।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর কোন কোন পদে চাকরির সুযোগ?
দ্বাদশ উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রে রেলওয়ে ক্লার্ক, অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট; ভারতীয় সামরিক বাহিনী, নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনা বিভাগে ক্যাডেট; স্টাফ সিলেকশন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্টেনোগ্রাফার; বিভিন্ন ব্যাঙ্কে প্রবেশিনারি অফিসার; পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং (পিএসইউ)-এ ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস (মেশিন অপারেটর, ওয়াটারপ্রুফিং, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, ইলেক্ট্রিশিয়ানের মতো কাজ), জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে চাকরির সুযোগ থাকে।
সরকারি চাকরির জন্য নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে হবে। প্রতীকী চিত্র।
কী ভাবে নিয়োগ করা হয়?
উপরোক্ত সমস্ত পদেই লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ইন্টারভিউ নেওয়া হয়ে থাকে। সেই বৈতরণী পেরিয়েই চাকরি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে স্তরের বিষয়গুলি থেকেই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়াও রিজ়নিং, বিভিন্ন ধরনের অঙ্ক, বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞানের উপরও প্রশ্ন থাকে। কিছু কিছু চাকরির ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতাও যাচাই করা হয়।
কী ভাবে শুরু করবেন?
প্রতিটি পরীক্ষার পাঠ্যক্রম, প্রশ্নপত্রের ধরণ সম্পর্কে নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য দেওয়া থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা অনুযায়ী, পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলি নিয়ে নিয়মিত চর্চার পাশাপাশি, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের বই পড়া প্রয়োজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অঙ্ক কষার উপর জোর দিতে হয়। এর জন্য প্রয়োজনে শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
চাকরির কথা কী ভাবে জানা সম্ভব?
স্টাফ সিলেকশন কমিশন, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, ভারতীয় ডাক বিভাগ, ভারতীয় সামরিক বাহিনী, নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনা বিভাগ, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড, অয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কর্পোরেশন লিমিটেড, ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের মতো একাধিক পিএসইউ-এর ওয়েবসাইটে নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দশম এবং দ্বাদশ উত্তীর্ণরা সেই সমস্ত বিজ্ঞপ্তি থেকে আবেদন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবেন।
সম্প্রতি স্টাফ সিলেকশন কমিশনের তরফে কম্বাইন্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল এগজ়ামিনেশন (সিএইচএসএল)-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার জন্য ১৮ জুলাই পর্যন্ত আবেদন জানাতে পারবেন।
চাকরি পাওয়ার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ কেমন?
সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরি পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পর যাঁরা চাকরির সুযোগ খুঁজছেন, তাঁদের বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। তার মধ্যে কম্পিউটার বা সমতুল্য যন্ত্র চালনা, ইংরেজি-সহ স্থানীয় ভাষায় সাবলীল হওয়া, গণনা এবং তথ্য সংযোজনের মতো বিষয় উল্লেখ্য। এর জন্য পড়ুয়ারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনিক্যাল টিচারস ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইটিটিটিআর), ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্প মন্ত্রকের কলকাতা টুল রুমের তরফে এই ধরনের জব ওরিয়েন্টেড কোর্স করানো হয়ে থাকে। কোর্সের মাধ্যমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রিশিয়ান, টেকনিশিয়ান, প্রফেশনাল ওয়াটারপ্রুফিং, ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্টিং-এর মতো একাধিক বিষয়ে দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এনআইটিটিটিআর, কলকাতার তরফে এমন একটি কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগ্রহীরা ৪ অগস্ট থেকে ক্লাস করতে পারবেন। এর জন্য ৬,০০০ টাকা এনরোলমেন্ট ফি দিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।