প্রতীকী চিত্র।
কসবা আইন কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হল উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নমিনি সদস্যকে। তাঁদের জবাব লিখিত আকারে জমা দিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
সোমবার দুপুর ২টোর সময় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছুটির পর উপাধ্যক্ষ যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। নয়নার সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত পরিচালন সমিতির দুই প্রতিনিধির। একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও, ছিলেন না আর এক প্রবীণ সদস্য। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টার ধরে কলেজের নিরাপত্তা থেকে পরিচালন সমিতির ভূমিকা-সহ নানান বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় উপাচার্য ও এই সদস্যকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, ‘‘কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মনোনীত সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। তারপরই ব্যবস্থা হবে কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। ’’
পরিচালন সমিতি এবং উপাধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে আজকের জিজ্ঞাসাবাদে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন? পরিচলন সমিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত দুই জন সদস্য রয়েছেন। একজন প্রায় ২০১২ সাল ও অপরজন ২০১৭ সাল থেকে। যে অস্থায়ী কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো অভিযোগ উঠছে এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হল— এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সদস্যকে ও উপাধ্যক্ষকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রের খবর, দু'জনেই প্রতিবাদের কথা জানালেও কোনও নোট অফ ডিসেন্ট বা লিখিত ভাবে আপত্তি জানানো হয়নি। এই অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের সময়।
এই ঘটনার খবর সামনে আসার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল তদন্তের জন্য। সোমবারের জিজ্ঞাসাবাদের সমস্ত তথ্য একটি করে কপি দেওয়া হয়েছে ওই কমিটির সদস্যদের। কলেজের তরফ থেকে যে সমস্ত নথি জমা দেওয়া হয়েছে এবং লিখিত বয়ান নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে কমিটি এগুলো মিলিয়ে দেখবে। তারপরই এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের বিরুদ্ধে কা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাধ্যক্ষ ও মনোনীত সদস্যকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি প্রশ্ন করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রের খবর।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত দুই সদস্যের ভূমিকা নিয়ে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন? তাই এই সদস্যদের বদলের ভাবনা চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
উল্লেখ্য, ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসের রক্ষীর ঘরে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কলেজেরই দুই ছাত্র এবং এক প্রাক্তনীকে। ওই প্রাক্তনী আবার কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিযুক্ত। যদিও মূল অভিযুক্তকে কলেজের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা খারিজ করার পরেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)