প্রতীকী চিত্র।
ভোটের আগেই ভোট! আর তা নিয়ে ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সংঘাতের পথে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি)-র নির্বাচন হতে চলেছে। রাজ্যে এই প্রথম কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিসি সদস্যরা নির্বাচিত হবে। সাধারণত এই কমিটি মনোনীত সদস্যদের দ্বারাই চালিত হয়।
আগামী ২৭ নভেম্বর আইসিসি নির্বাচন হবে যাদবপুরে। নির্বাচনে যোগ দিতে পারবেন পিএইচডি স্কলাররাও। আর সেখানেই গোলমাল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্যদের দাবি, গত এক বছর বা কোনও কোনও বিভাগে তারও বেশি সময় ধরে পিএইচডি-র জন্য কোনও গবেষক নেওয়া হয়নি। সেখানে কী করে জারি করা হল বিজ্ঞপ্তি?
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৭ তারিখ দুপুর ২.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট পর্যন্ত চলবে আইসিসি-র ভোট গ্রহণ। ২৮ নভেম্বর বেলা ১টায় ফলপ্রকাশ। প্রথম দফায় পিএইচডি স্কলার ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বাচন হবে। এ জন্য নমিনেশন ফর্ম পাওয়া যাবে ১১ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে। নমিনেশন যাচাই হবে আগামী ১৬ নভেম্বর। ১৭ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা। নাম প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ নভেম্বর। বেলা ১ টার পর থেকে নাম প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন পিএইচডি সদস্যরা।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই কলা বিভাগের পিএইচডি স্কলারদের একাংশ আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রয়োজনে অনশনেও বসবেন তাঁরা। অভিযোগ, প্রায় দু’বছর ধরে পিএইচডি প্রোগ্রাম হয়নি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা হলে কিসের ভিত্তিতে এই ভোট করানোও হচ্ছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, তীর্থরাজ বর্ধন, বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ পিএইচডি অ্যাডমিশন হয়েছে, ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগে তারও বেশি সময় এই কাজ বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় কি ভাবে নির্বাচনে দিন ঘোষণা করা হল? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও উচ্চশিক্ষার দফতরের নির্দেশিকা মেনে কি এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে? বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার না করলে আমরা আন্দোলন অনশনের পথে যাব।”
রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউনিয়নগুলি ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি’তে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠায়। কিন্তু ইউনিয়ন নেই বলে এই নির্বাচন করাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
স্কলারদের একাংশের বক্তব্য, প্রায় আড়াই বছরের চেষ্টা ভোটারতালিকা তৈরি করে এই ভোট করানো হচ্ছে। যাঁরা এখন তার বিরোধিতা করছেন কেন আগে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করেননি, উঠছে সে প্রশ্নও। দর্শন বিভাগের স্কলার আফরিন বেগম বলেন “বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তাতে আখেরে ক্ষতি হবে আমাদের মতো পুরনো স্কলারদের। আমি তিন বছর ধরে এখানে পিএইচডি করছি। গোলমালে যদি আইসিসি ভোট যদি না হয়, তা হলে আরও এক বছর নষ্ট হবে।” কলা বিভাগের একাংশ ছাত্র-ছাত্রী শীর্ঘ ভোট করানোর পক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞান, কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের দু’জন করে মোট ছ’জন প্রতিনিধি পাঠানো হয় কমিটিতে। পিএইচডি স্কলারদর তরফেও থেকে একজন করে প্রতিনিধি এই কমিটিতে থাকেন। নির্বাচনের দিনঘোষণা করলেও স্কলার বিতর্কের আবহে আদৌ কি ভোট হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। যদিও মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে ফর্ম তুলতে পেরেছেন পিএইচজি স্কলারেরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “কলা বিভাগের স্কলাররা যে অভিযোগ করছেন, তা আমি খতিয়ে দেখব। দীর্ঘ দিন স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় কিছু সমস্যা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।”